পর্দা উঠছে সিনেদুনিয়ার জৌলুসপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসব! আজ উদ্বোধনী দিনেই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিচ্ছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১৩ মে) প্যালেস দে ফেস্টিভ্যালের সাল বাজিন প্রেক্ষাগৃহে আয়োজন করা হয়েছে ‘ইউক্রেন ডে’। যেখানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধভিত্তিক তিনটি বিশেষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করা হবে চলমান সংঘাতের নির্মম বাস্তবতা।
এই উদ্যোগে একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্স টেলিভিশন, ব্রুট. এবং ফেস্টিভ্যাল দে কান। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ইউরোপের কেন্দ্রে চলতে থাকা এই যুদ্ধ শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করছে। সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরতেই এই বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন।
ফ্রান্স টেলিভিশন ও ব্রুট.—এই দুই অফিসিয়াল পার্টনারের সহযোগিতায় আয়োজিত এই বিশেষ দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে সাংবাদিক, শিল্পী ও লেখকদের প্রতি—যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ নথিবদ্ধ করে চলেছেন। কান উৎসবও সেই দায়িত্ব থেকেই মনে করিয়ে দিতে চায়, চলচ্চিত্র শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং সময়ের সাক্ষ্য বহনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
তিনটি চলচ্চিত্রের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে দর্শকরা দেখতে পাবেন ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, মানবিক সংকট ও তাৎপর্যপূর্ণ চরিত্রগুলোর জীবনসংগ্রাম।
উৎসব কর্তৃপক্ষের ভাষায়, ‘এই আয়োজনটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের দায়বদ্ধতা এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর—যা আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত—গল্প বলার সক্ষমতার একটি স্মারক।’
যে ৩টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে—
জেলেনস্কি
পরিচালনা করেছেন ইভ জেলাঁ, লিসা ভাপনে ও আরিয়েন শ্যমান। এই চলচ্চিত্রে ইউক্রেনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির শৈশব, কমেডিয়ান থেকে রাজনীতিতে উঠে আসার গল্প এবং একটি অস্থির সময়ে ইউক্রেনের প্রেক্ষাপটে তাঁর নেতৃত্বগুণ তুলে ধরা হয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী দুঃসময়, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট—সবকিছুর মধ্যদিয়ে কীভাবে একজন শিল্পী হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রনায়ক, তা উঠে এসেছে ছবিতে।
নটর ঘুর
পরিচালনা করেছেন বার্নার-আঁরি লেভি ও মার্ক রুশেল। চলচ্চিত্রটি মূলত একটি ব্যক্তিগত যুদ্ধদিনলিপি। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানরত সৈন্যদের জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা, সাধারণ মানুষের দুর্দশা এবং যুদ্ধের মধ্যেও তাদের দৃঢ় মনোবল তুলে ধরা হয়েছে। এতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার এবং বাংকারে সেনাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের দৃশ্যও রয়েছে।
২০০০ মিটার টু আন্দ্রিইভকা
পরিচালনা করেছেন মস্তিস্লাভ চেরনভ। অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র ‘মারিউপোলে বিশ দিন’-এর নির্মাতা এবারও সামনে এনেছেন ইউক্রেন যুদ্ধের এক কঠিন অধ্যায়। পূর্ব ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সেনারা কীভাবে খালি হাতে, বিস্ফোরক-ভরা বনপথ পেরিয়ে এগিয়ে যায়, তা অত্যন্ত বাস্তবধর্মীভাবে চিত্রিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। পরিচালক নিজেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে দৃশ্যগুলো ধারণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ইউক্রেনীয় নির্মাতাদের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতির বার্তা উঠে আসছে। এবারের কান উৎসবে সেটি আরও একধাপ এগিয়ে গেল।