কান আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা কানের ব্যাপারে উদাসীন। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো কানের বিষয়ে আমাদের অনেক বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন। তা না হলে কান যে কোনো সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০৭ সালের ৩ মার্চ প্রথমবারের মতো পালিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার কেয়ার ডে’ বা আন্তর্জাতিক কর্ণ যত্ন দিবস বা বিশ্ব শ্রবণ দিবস। এই দিবস প্রতি বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।
আজ ৩ মার্চ, বিশ্ব শ্রবণ দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে বরাবরের মতো এবারও সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৭ সাল থেকে শব্দ দূষণকে শ্রবণ হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে জনসচেতনতায় বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
কানের বহিরাংশ না বহিকর্ণ দেখতে ইংরেজি সংখ্যা ৩ বা থ্রি মতো। তাই ইংরেজি বছরের তৃতীয় মাস তথা মার্চ মাসের তৃতীয় দিনকে বিশ্ব কানের যত্ন দিবস পালনের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
শব্দদূষণ রোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই, তবে এই বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইনের যথাযথ সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সকল বড় শহরের ৮০ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই মানমাত্রার দ্বিগুণ বেশি শব্দ দূষণ হচ্ছে। এমনটাই আমাদের নাক,কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় এসেছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। ঢাকায় দীর্ঘদিন বসবাসকারীরা ধীরে ধীরে কানে কম শুনতে পারেন বলেও চিকিৎসকরা ধারণা করছেন। তাই চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত রোগীদের এ বিষয়ে সতর্ক করছেন।
২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকার প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ বধির হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সংকট সমাধানে ঢাকাকে হর্নমুক্ত ঘোষণার পাশাপাশি নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
মানুষের কানে শুনার সহনীয় শব্দমাত্রা- ৫৫ থেকে ৬০ ডেসিবেল এর মধ্যে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকায়ই শব্দের আদর্শমান অতিক্রম করেছে ১ দশমিক ৩ থেকে ২ গুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলো এবং কোমলমতি শিশুরা।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ স্কুলের অবস্থান ব্যস্ত রাস্তার পাশে, যা শিশুদের শ্রবণে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে যানবাহন প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা, শ্রেণীকক্ষে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের কোনো বিকল্প নাই।
শব্দদূষণ কান এবং মস্তিষ্কের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যানবাহনের অতিরিক্ত এবং উচ্চ মাত্রার হর্নই শব্দদূষণের মূল কারণ। শ্রবণ দিবসে কানের যত্নে সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। তাই কানের যত্নে যে বিষয়গুলো মাথা প্রয়োজন সেগুলো হলো–
১. অযথা কান চুলকাবেন না।
২. উচ্চ শব্দে গান বাজাবেন না।
৩. উচ্চ শব্দে গান শুনবেন না।
৪. অযথা হর্ন বাজাবেন না।
৫. অতিরিক্ত হেড ফোন ব্যবহার করবেন না।
কান আপনার শ্রবণকে স্বাভাবিক রাখবে। সুস্থ থাকতে হলে কানের যত্ন প্রয়োজন। যেখানে সেখানে কানে চিকিৎসা করাবেন না। কানের যে কোনো সমস্যায় কান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
লেখক: নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন এবং রেজিস্ট্রার (ইএনটি), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল