আরশানের বয়স মাত্র ৬ বছর। সারাক্ষণ তার একই বায়না, মোবাইল চাই। হাতে ফোনটা না পেলে যেন তুলকালাম বেধে যায়। সবকিছুতেই যেন সে বিরক্ত, সেই সঙ্গে পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব তো রয়েছে। আরশানের সামনে ফোন না দিলে কিছুতেই যেন গলা দিয়ে খাবার নামে না। তাকে খাওয়ানো যেন সবার জন্যই রীতিমতো পরীক্ষা। তবে সব সমস্যা নিমেষে সমাধান হয়ে যায়, যদি হাতে মোবাইলটি দেওয়া হয়।
শুধু আরশান নয়, মোবাইল কেন্দ্রিক শৈশব এখন বেশিরভাগ শিশুর। সাধারণভাবে এই সমস্যা তেমন কিছু মনে না হলেও, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। কীভাবে কাটাবেন এই আসক্তি? জেনে নিন।
সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের
শিশু অনুকরণ প্রিয়। সেই যাই দেখে, তাই করতে চাই। বাড়ির বড়রা প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে বেশিরভাগ সময় ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফোনে চ্যাট করা, গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা, সবই চলে। আর এই সবকিছুই চলে শিশুর সামনে। তাই তো অধিকাংশ শিশুর স্মার্টফোনে হাতেখড়ি হয় তার অভিভাবকই। তাই তাদের ফোন ব্যবহারে সতর্ক থাকা জরুরি। সেক্ষেত্রে মোবাইল থেকে তাদের নজর সরিয়ে আনতে হবে। বিকল্প ও আকর্ষণীয় জিনিসের প্রতি শিশুর আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলতে হবে। যেমন, খেলা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা কোনও পছন্দের বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে হবে।
পড়াশোনা-খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি
শিশুকে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রহস্যময় এবং রোমাঞ্চকর গল্পের প্রতি ঝোঁক তৈরি করতে পারেন। এতে ফোনের আগ্রহ অনেকটাই তৈরি হবে না। সেই সঙ্গে বাড়ির আবহে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার পরিবেশ রাখতে হবে। তবে একেবারেই সব বন্ধ করে দেবেন না, এতে তার মনের উপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে রাতে ঘুমানোর অন্তত একঘন্টা আগে এবং সকালে ঘুম ভাঙার পর দুই ঘণ্টা ফোন ব্যবহার থেকে দূরে রাখুন।
সময় কাটান শিশুর সঙ্গে
ঘরের ছোট্ট সদস্যের সঙ্গে ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানো খুব জরুরি। আর সপ্তাহের অন্তত একটি দিন বাড়ির সবাই ফোন ছাড়া কাটাতে পারেন। অনেকে সন্তানকে সময় না দিয়ে, হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেন। আবার ব্যস্ততার কারণে টিভিতে চালিয়ে দেন কার্টুন। এতে তখন সমস্যা না হলেও, পরবর্তীতে এসব আসক্তি থেকে সরিয়ে আনা কঠিন হতে পারে।
শিশুর একাকীত্ব দূর করুন
বাড়িতে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত থাকেন, এটা মোটেই খাবার কিছু না। কিন্তু আপনার ব্যস্ততার কারণে শিশু যেন একাকীত্ব অনুভব না করে। তাহলে সেও মোবাইল বা ডিভাইসে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিও যেন ঠিকঠাক হয়। পড়াশোনা এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম সঠিকভাবে করে যদি ফোন ব্যবহার করে। তবে তাকে নির্দ্বিধায় ১-২ ঘণ্টা এই ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যেতেই পারে। কেননা, আধুনিক এই সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে শিশুকে দূরে রাখা যাবে না। তাহলে পরবর্তীতে সে আধুনিক বিশ্বে পিছিয়ে পড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: প্যারেন্টস, হিন্দুস্তান টাইম, হেলথ সেন্ট্রাল