সামাজিক মাধ্যমের বন্ধুদের আমরা কখনোই ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধু’ বলি না। এমনকি জীবনের জরুরি মুহূর্তেও তাদের কথা মনে পড়ে না। কিন্তু তবুও তারা আছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার এক কোণে। নীরবে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছেন, অনুভব করছেন। কখনো কখনো এক শব্দের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে দিচ্ছে যে, আপনি একা নন।
আজকের ভার্চ্যুয়াল জীবনে এমন সম্পর্ক খুব অচেনা নয়। হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে মনখারাপের আভাস, ইনস্টাগ্রামে একটি ভাবনার স্টোরি। আর ঠিক তখনই সেই অল্পপরিচিত মানুষটির ছোট্ট রিপ্লাই। হয়তো সে পুরোনো সহপাঠী, অফিসের একবার দেখা সহকর্মী। কিংবা একেবারে অচেনা কারও কাছ থেকে আসা এক লাইন, ‘তুমি ঠিক থাকবে’। আর সেই অচেনা শব্দেই কিছুটা হালকা হয়ে আসে মন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের সম্পর্ক এখন তরুণ প্রজন্মের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রচলিত বন্ধুদের সঙ্গে সময় বা মানসিকতার মিল থাকে না। তাই ডিজিটাল এই বন্ধুরা হয়ে উঠছে একরকম মানসিক আশ্রয়। তাদের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব নেই, নেই কোনো পারিবারিক সম্পর্কও। তবু তারা পাশে থাকেন। তারা প্রতিদান চান না, প্রতিযোগিতা করেন না। কেবল একটি অনুভব ভাগ করে নেওয়ার বন্ধনেই জড়িয়ে পড়েন।
এই সম্পর্ককে কেউ কেউ বলেন ‘সোশ্যাল মিডিয়া স্কোয়াড’। তাদের সঙ্গে গল্প হয় না, দেখা হয় না। কিন্তু সময়ে সময়ে আপনার জীবনের ছোট-বড় ঘটনাগুলোর সাক্ষী হয়ে থাকেন তারা। কখনো প্রশংসা করেন। কখনো উৎসাহ দেন। আবার কখনো কেবল চুপচাপ দেখে যান।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সম্পর্ককে ছোট করে দেখা ঠিক নয়। একাকীত্বের সময়ে এমন মানুষরাই অনেক সময় ভরসার হাত বাড়িয়ে দেন। তাদের সঙ্গে গড়ে ওঠা বোঝাপড়া একধরনের ভার্চ্যুয়াল নিরাপত্তা তৈরি করে। যা মনকে শান্ত করে, আশ্বস্ত করে।
তাই সোশ্যাল মিডিয়ার সেই বন্ধুরা, যারা হয়তো আপনার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু নন, কিন্তু ঠিক পাশে আছেন। তাদের গুরুত্ব হয়তো একদিন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাবে। আপাতত তাদের জানিয়ে দেওয়া যায় একটিই কথা, ধন্যবাদ। দূর থেকেও আপনি পাশে আছেন।