অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়ে হাঁসফাঁস করছে ইউরোপের জনপ্রিয় সব শহর। সেই তালিকায় এবার যোগ দিল ফ্রান্সের কান। ভেনিস, বার্সেলোনা, আমস্টারডামের মতো শহরগুলো যখন পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিয়ম চালু করছে, এবার পিছিয়ে রইল না কানও। ২০২৬ সাল থেকে বড় ক্রুজ জাহাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জানিয়ে দিল শহরটি, অতিরিক্ত ভিড় আর নয়।
শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যটনের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে এখনই পদক্ষেপ জরুরি। তাই এবার অতি পর্যটনের বিরুদ্ধে ইউরোপের চলমান লড়াইয়ে নতুন মুখ কান।
৩০ জুন শহর পরিষদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কান বন্দরে ১ হাজার জনের বেশি যাত্রী বহনকারী কোনো ক্রুজ জাহাজ আর নোঙর করতে পারবে না। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬ হাজার জন যাত্রীকে নামার অনুমতি দেওয়া হবে। বড় জাহাজ এলে তাদের যাত্রীদের ছোট নৌকায় করে শহরে আনা-নেওয়া করতে হবে।
শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে শহরের পরিবেশ, পরিকাঠামো ও স্থানীয় জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘আমাদের শহর পর্যটকদের জন্য খোলা, কিন্তু ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি,’ এক কাউন্সিলর জানান।
কানই প্রথম নয়। ইউরোপের একাধিক শহর ইতিমধ্যে বড় ক্রুজ জাহাজের আগমন সীমিত করেছে বা নিষিদ্ধ করেছে।
ভেনিস, ইতালি: ২০২১ সালে শহরের ঐতিহাসিক লেগুনায় বড় জাহাজ ঢোকা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ দূষণ আর স্থাপত্যগত ঝুঁকির কারণেই এ সিদ্ধান্ত।
আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস: ২০২৩ সালে শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্রুজ জাহাজ ভিড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়। লক্ষ্য—বাতাসের দূষণ কমানো ও ঐতিহ্যবাহী খাল সংরক্ষণ।
বার্সেলোনা, স্পেন: একই বছরে শহরে প্রতিদিন কতজন যাত্রী নামতে পারবে, তা নির্ধারণ করে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
নিস, ফ্রান্স: আগামী ১ জুলাই থেকে শহরে বড় আকারের জাহাজ ভিড়ানো সীমিত হচ্ছে।
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনিতে ২০২৩ সালে ভিড় জমিয়েছেন প্রায় ৩৪ লাখ পর্যটক। এত মানুষের চাপ তার পুরোনো অবকাঠামো আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।
বহু শহরের বাসিন্দারা মনে করছেন, পর্যটনের সুবিধা থাকলেও এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্রুজ জাহাজ থেকে কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে নামায় রাস্তাঘাট, দোকানপাট এমনকি আবর্জনার ব্যবস্থাপনায়ও হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা চাই টেকসই পর্যটন। আমাদের পরিবেশ, ঐতিহ্য ও নাগরিকদের জীবনকে রক্ষা করেই পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হবে।