বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকীতে তার স্মৃতিবিজরিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যেতে গিয়ে অনেককেই মারধরের শিকার হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা সাধারণ মানুষ, শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যেই ধানমন্ডি ৩২–এ যেতে চেয়েছে মিলেছে গণপিটুনি।
সকাল সাতটা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিরোধকারীদের দলগত সতর্ক পাহারায় এলাকায় ভিড়তে পারেনি কেউ।
১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতো।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দিবসটিতে সরকারি ছুটি বাতিল করে। এর আগেই অবশ্য গত ৫ আগস্ট দেশের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং লুট করা হয় নানা ঐতিহাসিক স্মারক।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো আয়োজন না থাকলেও দলটির অনেক নেতা–কর্মী ও সমর্থকসহ অনেক সাধারণ মানুষও ধানমন্ডি ৩২ এ গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
কিন্তু পথে মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, ধানমন্ডি ২৭, সংসদ ভবনসহ সব জায়গায় ছিল একদল তরুণের চিরুনি তল্লাশি। কলাবাগান, শুক্রাবাদসহ মেট্রোপ্লাজার আশেপাশের সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই লাঠি হাতে দৌড়ে ঘিরে ধরেছেন কয়েকশ মানুষ, চেক করা হয়েছে মোবাইল ফোনের কললিস্ট, ফেসবুক পোস্ট।
শোক দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে এমন প্রমাণ পেলেই মিলেছে কিল-ঘুষি, লাঠি পেটা। মারধরের পর বেশ কয়েকজনকে গায়ের পোষাক ছাড়াই পাঠিয়ে দেয়া হয়, আবার কাউকে কাউকে কান ধরে উঠ-বস করিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, দীর্ঘ ১৫ বছর তাদের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে সেই ক্ষোভ থেকেই এই আচরণ।
মিরপুর রোডের ধানমন্ডি রোডের বড় মাইকে একটু পর পরই ঘোষণা আসে, কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই যেন কল লিস্ট চেক করা হয়, ফেসবুক পোস্ট ও যেন বাদ না যায়।
এদিকে, এ ঘটনায় গণমাধ্যম কর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদেরও হেনস্তা হতে হয়। মাইকে বারবার ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে নিষেধ করা হয়।
এদিকে ফোন চেক করার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ ফোন চেক করলেও প্রাইভেসি লঙ্ঘন, আপনারা আজকে যেটা করলেন সেটাও প্রাইভেসি লঙ্ঘন। প্রাইভেসি লঙ্ঘন যেই করবে, তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থাকবে।’
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে প্রদীপ প্রজ্বালনের সময় জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর ওপরে হামলা হয়। রোকেয়া প্রাচী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গেও যুক্ত।