সেকশন

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

কোনো গান একবার শুনলেই কথা–সুর মনে রাখতে পারতেন যে শিল্পী

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম

লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী সুষমা দাস তাঁর সুমধুর কন্ঠ ও গায়কীর মুন্সিয়ানায় অসংখ্য শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রেখেছেন সুদীর্ঘকাল। তাই দেশ–বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে গুণগ্রাহী সংগীতপ্রিয় মানুষেরা তাঁর সান্নিধ্যে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি যে কোনো মানুষকে তাঁর সহজাত মধুর ব্যবহার দিয়ে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারতেন।

সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ১ অগ্রহায়ণ (১৯২৯ সাল) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রখ্যাত লোককবি রসিকলাল দাস এবং মা দিব্যময়ী দাস। এই দম্পতি তাঁদের প্রথম সন্তানের নাম রাখেন সুষমা। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সুষমা দাস সবার বড়। বাকিরা হলেন ঘৃতময়ী দাস (প্রয়াত), মহাপুরুষ দাস (প্রয়াত, প্রখ্যাত বংশীবাদক), গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস(মুক্তিযোদ্ধা), সুধীর চন্দ্র দাস এখনো লোকসংগীতের চর্চায় নিমগ্ন রয়েছেন। আর তাঁর ছোট ভাই একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত পণ্ডিত রাম কানাই দাস। বাংলার মাটিতে এই পরিবারের অবদান অসামান্য।

সেকালে রসিকলাল দাসের সুগায়ক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি ছিল। মা দিব্যময়ী দাস ভালো গান গাইতেন। পারিবারিক এই সাংগীতিক আবহ সুষমা দাসের সংগীত জীবনের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এমনকি মাত্র সাত বছর বয়সে সুষমা বাবার সঙ্গে গান গেয়ে সবাইকে অবাক করে দেন।

সে যুগে গ্রামবাংলার অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামে মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ ছিল অপ্রতুল। তাই পাঠশালার পাঠ শেষ হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানতে হয় সুষমাকে। তবে নিজের চেষ্টায় তিনি তৎকালীন ইংরেজ আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তন গভীরভাবে চর্চা করতেন।

সুষমার বয়স যখন মাত্র ১৬ বছর, তখন তাঁর বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে অবসর সময় পেলে গান করতেন তিনি। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন আসরে ধামাইল, কবিগান, বাইল গানের পাশাপাশি সূর্যব্রত, হোলি বা উড়িগান, ঘাটুগান, মনসামঙ্গল, গোপিনী কীর্তন, গোষ্ঠলীলা ইত্যাদি গান করতেন। ১৯৮৮ সালে তিনি স্থায়ীভাবে সপরিবারে সিলেট শহরে বসবাস করা শুরু করেন।

বিস্ময়কর এই শ্রুতিধর শিল্পী জীবনের সুদীর্ঘকাল যেমন বাংলার ভাটি গানে নিজেকে সিক্ত করেছেন, তেমনি বহু শ্রোতাকে গীতসুধারসে ভরিয়ে রেখেছেন যুগের পর যুগ। যে কোনো গান একবার শুনলেই সে গানের কথা ও সুর মনে গেঁথে নিতে পারতেন। এভাবে দুই সহস্রাধিক গান তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল প্রায় শেষ বয়স পর্যন্ত। কোনো দিনও খাতায় লিখে রাখার প্রয়োজন বোধ করতেন না তিনি। এমন প্রতিভা সত্যিই বিরল।

ভাই বোনের মধ্যে সুষমা দাস সবার বড় ছিলেন। সংগৃহীত ছবি

বাংলার অনেক লোককবি ও মরমি সাধকের গান গেয়েছেন সুষমা। তাঁদের মধ্যে শাহনূর, লালন শাহ, দ্বীন ভবানন্দ, রাধারমন দত্ত, হাসন রাজা, শ্যামসুন্দর দাস, শ্রী দুর্গাপ্রসাদ, রামজয় সরকার, উকিল মুন্সী, শাহ আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ, রসিকলাল দাস, আরকুম শাহ, হরিচরণ সরকার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। সিলেট বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর গাওয়া গান সবসময় সমাদৃত ছিল। এ ছাড়া জাতীয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজিত নানা অনুষ্ঠান–উৎসবে তিনি গান করছেন। যখন তিনি গান গাইতেন, তখন সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আপ্লুত হয়ে তাঁর গান শুনতেন।

লোকসংগীতের বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন সুষমা দাস। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি গুণীজন সম্মাননা ২০১৫, রাধা রমণ উৎসব সংবর্ধনা ২০১৭, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের রবীন্দ্র পদক ২০১৯ ও বাংলাদেশ বেতার গুণীজন সম্মাননা লাভ করেন। এ ছাড়া ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘বাউল ফকির উৎসব’ উদ্বোধন করেছিলেন এবং সম্মাননাও গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

২০২০ সালে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘গীতবিতান বাংলাদেশ’ সুষমা দাসের গাওয়া রাধারমন দত্তের ৮টি গান নিয়ে ‘আমার বন্ধু বিনোদিয়া’ শিরোনামে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ করে। তাঁর জীবন ও গান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘সুষমা দাস ও প্রাচীন লোকগীতি’, ‘অনিন্দ্য সুষমার কবি রাধারমন’, ‘গীতিসুধার সুষমা ও জীবনপথের আনন্দগান’।

দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ২৬শে মার্চ সিলেটের হাওলাদার পাড়ায় নিজ বাসভবনে মারা যান সুষমা দাস। তাঁর অসাধারণ সাংগীতিক প্রতিভায় লোকগানের বিশুদ্ধরূপ সুন্দরতম রূপে প্রতিভাত হয়েছে, যা আলোকবর্তিকা হয়ে আমাদের পথ দেখাবে।

লেখক: অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা, গীতবিতান বাংলাদেশ

বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব নারীদের মধ্যে ২৬.২ শতাংশ এখন কৃষি ও এর উপখাতে (যেমন হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু, মৎস্য ও উদ্যানতাত্ত্বিক চাষাবাদ) কর্মরত, যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণ...
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যায় বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। সেই ২০২২ সাল থেকেই বেশি। একটি দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বিতর্কিত করে, দমন করার চেষ্টা করে, কেবলই পুরুষের যৌনবস্তু...
মাগুরার ৮ বছর বয়সী ছোট্ট শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় যখন সারা দেশে আলোড়ন ওঠে, সাধারণ মানুষ যখন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন আছিয়ার মরে যাওয়ার দিনে সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা বলে দেন, মামলার বিচার...
পয়লা বৈশাখ শুধু একটি দিন বা উৎসব নয়–এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক। বাংলা নববর্ষের এই দিনটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য, ঐক্য ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইংরেজি নববর্ষের মতো...
নরসিংদীর পলাশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করাসহ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মেয়র প্রত্যাশী বিএনপি নেতা ফজলুল কবির জুয়েলের ওপর হামলা করে তাঁকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের...
ঘটনাস্থলে ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সংবাদদাতা বলেছেন, ‘স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়। কোনো স্থাপনায় আঘাত করার আগেই ড্রোনটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।’
পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি সম্প্রতি জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কাউকে নিজ দলে নিতে চান না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি একই সঙ্গে বলেছেন, যারা ভালো মানুষ তাদের তারা বাদও দেবেন না।
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.