চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হয়ে গেছে, ভারত ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজনের ধরন নিয়ে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না। খুব সহসা সম্ভবত হবেও না। আট দলের একটা টুর্নামেন্টে কোনো একটা দল অন্য সবার চেয়ে বেশি সুবিধা পেলে, শেষ পর্যন্ত তারাই শিরোপা জিতলে বিতর্ক তো হবেই!
পাকিস্তানের আয়োজনে হওয়া এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত তাদের দল পাকিস্তানে পাঠাতে রাজি ছিল না, তাই ভারতকে নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বার্থে শুধু ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইয়ে রেখে ‘হাইব্রিড মডেলে’ আয়োজিত হয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তাতে ভারত যে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। অন্য সব দল যখন পাকিস্তানের তিন ভেন্যুতে কিংবা ভারতের সঙ্গে ম্যাচের জন্য পাকিস্তান-দুবাই করেছে, ভারত আরাম করে দুবাইয়ে একই মাঠে সব ম্যাচ খেলেছে।
এ নিয়ে টুর্নামেন্টজুড়েই বিতর্ক চলেছে, টুর্নামেন্ট শেষেও চলছে। এ নিয়েই এবার কথা বলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং কিংবদন্তি স্যার অ্যান্ডি রবার্টস। গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পথেও ভারতের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেছেন, ভারতের বারবার এভাবে সুবিধা পাওয়া বন্ধ করতে কিছু একটা করতেই হবে। আইসিসিকে খোঁচা মেরে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড’ও বলেছেন তিনি।
‘কিছু একটা তো করতেই হবে, ভারতই সব নিয়ে যেতে পারে না। আইসিসিকে মাঝে মাঝে ভারতকে ‘না’ তো বলতে হবে! গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারত বাড়তি সুবিধা পেয়েছে, যেখানে ওরা আগে থেকেই জানত যে তাদের সেমিফাইনালের ভেন্যু কী হবে (সেমিফাইনাল গায়ানায় হয়েছে)। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতকে কোথায় ভ্রমণই করতে হয়নি। একটা দল কীভাবে ভ্রমণ না করেই পুরো টুর্নামেন্টে কাটিয়ে দিতে পারে’ – ভারতের সংবাদমাধ্যম মিড-ডে-তে বলেছেন রবার্টস।
বাকি সব দল যখন পাকিস্তান-দুবাই করেছে, ভারত তখন একই মাঠে, একই জায়গায় সব ম্যাচ খেলা নিয়ে রবার্টস বলেছেন, ‘এটা ন্যায্য না, এটা ক্রিকেট না। একটা লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড তো থাকতে হবে। বুঝতে পারি ভারত থেকেই (ক্রিকেটে) সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে, কিন্তু ক্রিকেট তো একটা দেশের খেলা হয়ে থাকতে পারে না!’
দৃশ্যত ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’ নিয়ম মেনেই হাঁটতে থাকা আইসিসিকেও ধুয়ে দিয়েছেন রবার্টস। ভারতের জন্য তারা যেকোনো কিছুই যে করতে রাজি হয়ে যায়, তা বোঝাতে উইন্ডিজ কিংবদন্তি বলেছেন, ‘আমার চোখে তো আইসিসির অর্থই ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। ভারতই এখানে সবকিছু ঠিক করে দেয়। কাল যদি ভারত বলে যে ‘দেখুন, ওয়াইড আর নো বল থাকা উচিত না’, আমার কথা মিলিয়ে নেবেন, দেখবেন আইসিসি ভারতকে সন্তুষ্ট করার একটা রাস্তা ঠিকই খুঁজে বের করবে।’
রবার্টসের মন্তব্যগুলোর দিন কয়েক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসও ভারতের এমন বাড়তি সুবিধা পাওয়া নিয়ে আইসিসিকে ধুয়ে দিয়েছেন। ভারতে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স লিগে এসে রিচার্ডস বলেছেন, ‘এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে আমার বিশ্বাস, এখানে দায়িত্বটা যাদের – খেলাটার প্রশাসনিক দিক ও নিয়মকানুন যারা ঠিক করে, অর্থাৎ আইসিসি – তাদের মধ্যেই যত ঝামেলা। আমি চাই ওরা একটা প্রশ্নের উত্তর দিক যে, ‘কেন?’ ওরাই যদি ক্রিকেট চালায়, তাহলে এমনটা কীভাবে হয়?’