চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের চার দল যখন নিশ্চিত হলো, এক আর্সেনাল ছাড়া বাকি তিন দলকে ঘিরেই একটা অভিন্ন রোমাঞ্চ ছিল ইউরোপে। ইন্তের মিলান, বার্সেলোনা আর পিএসজি – তিন দলই যে মৌসুমে তখন পর্যন্ত ছুটছিল ট্রেবলের পেছনে। পিএসজি তো লিগ শিরোপা নিশ্চিতই করে ফেলেছে, বার্সেলোনা আর ইন্তের মিলান ছিল লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। এর পাশাপাশি তিন দলই নিজেদের ঘরোয়া কাপ টুর্নামেন্টেও ছিল শিরোপার লড়াইয়ে।
বার্সেলোনা গতকাল স্প্যানিশ কাপ জিতেছে রেয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে, পিএসজি আগেই উঠেছে ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনালে। ট্রেবলের স্বপ্ন এখনো ভালোভাবেই আছে তাদের। কিন্তু ইতালিতে ইন্তের মিলান মৌসুমে আগের আট মাসে যা গুছিয়ে এনেছিল, তিন শিরোপার সবই জেতার যে সম্ভাবনা জাগিয়েছিল, সেখান থেকে গত এক সপ্তাহেই সব ছারখার হওয়ার দশা।
গত রোববার লিগে বোলোনিয়ার মাঠে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হারের পর থেকেই ইন্তেরের শনির দশা শুরু। সে সুযোগে পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে থাকা দল নাপোলি সেদিন মোনসার মাঠে জিতে ইন্তেরের সঙ্গে পয়েন্টে সমতা নিয়ে আসে। এর মধ্যে গত বুধবার সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছে ইন্তের। ইতালিয়ান কাপের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৩-০ গোলে হেরে গেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের কাছে, তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্টটা থেকে বাদই পড়ে যায় সিমোনে ইনজাগির দল। ট্রেবলের স্বপ্ন শেষ।
এরপর আজ আবার আরেক ধাক্কা খেয়েছে ইন্তের। নিজেদের মাঠে লিগে আবার ১-০ গোলে হেরে গেছে ক্লদিও রানিয়েরি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দারুণ ফর্মে থাকা রোমার কাছে। ৩৪ ম্যাচে ইন্তেরের পয়েন্ট ৭১-ই থাকল, বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে নিজেদের ৩৪তম ম্যাচটি খেলতে যাওয়া নাপোলির সামনে সুযোগ তোরিনোর বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে ইন্তেরের চেয়ে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে যাওয়ার।
লিগের আশায়ও বড় ধাক্কাই খেয়ে গেল লওতারো মার্তিনেসের দল ইন্তের। বাকি থাকল শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিন্তু দলের যা অবস্থা, তাতে সেখানেও কি খুব একটা আশাবাদী হতে পারবেন ইতালিয়ান ক্লাবটির সমর্থকেরা? সেখানে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষে যে বার্সেলোনা! একদিকে হানসি ফ্লিকের বার্সা উড়ছে, অন্যদিকে ইন্তের মিলান ধুঁকছে! আগামী বুধবারই বার্সার মাঠে প্রথম লেগে নামতে হবে ইন্তেরকে।
এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি, তবে এ ধাক্কা সামলে উঠে ইন্তের আবার লিগ আর চ্যাম্পিয়নস লিগে দাপুটে ফুটবল নিয়ে দেখা দিতে পারে কি না, সেটা দেখার ব্যাপার।
আজ লিগে অবশ্য রোমার বিপক্ষে শুরুটা ভালোই হয়েছিল ইন্তেরের। দাভিদে ফ্রাত্তেসি শুরুতেই বল জালে জড়িয়েছিলেন, কিন্তু অফসাইডের কারণে গোলটা বাতিল হয়। এরপর ইন্তের ধাক্কা খায় যখন ১৫ মিনিটেই ডিফেন্ডার বেঞ্জামাঁ পাভার চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর হাকান চালহানোলু একা উঠে গিয়েছিলেন, কিন্তু রোমা গোলকিপার মিলে সভিলার পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে দলকে উদ্ধার করেন।
রোমা এরপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে থাকে। মানু কোনের শট অল্পের জন্য পোস্টে ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ২২ মিনিটে গোলটা পেয়েই যায় রোমা। বক্সের বাইরে থেকে লরেন্সো পেল্লেগ্রিনির শট ইন্তের রক্ষণে বাধাপ্রাপ্ত হয় বটে, তবে সেটা ৬ গজের বক্সে পড়ে তরুণ আর্জেন্টাইন প্লেমেকার মাতিয়ান সুলের পায়ে। গোল! এরপর কিছুক্ষণ পর ব্রায়ান ক্রিসতান্তের শট পোস্টে বাতাস লাগিয়ে চলে না গেলে রোমা তখনই দুই গোলে এগিয়ে যায়। বিরতির আগে অনেকটা নখদন্তহীন হয়ে পড়া ইন্তেরকে প্রথমার্ধের শেষদিকে বাঁচান ডিফেন্ডার কার্লোস অগুস্তো। রোমার আনহেলিনোর ক্রসে যখন পা ছোঁয়ানোর অপেক্ষায় ছিলেন এলদর সমুদরভ, অগুস্তো স্লাইডিং ট্যাকলে বল ক্লিয়ার করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ইন্তের চেষ্টা করেছে, তবে সেভাবে বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। চালহানোলু, দুমফ্রিস, বারেল্লারা গোলপোস্টের দিকে শট বা হেড নিয়েছিলেন, এ পর্যন্তই।
লিগে টানা দ্বিতীয় হারে ইন্তের যেখানে শিরোপার দৌড়ের নিয়ন্ত্রণ নাপোলির হাতে তুলে দেওয়ার শঙ্কায়, লিগে টানা ১৮ ম্যাচে অপরাজিত রোমা (৩৪ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট) উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে। সেরা চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নও দেখছে দিবালা-সুলেদের দলটা।