ফ্রাঙ্কফুর্টে ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজল, আর বুঝি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন আঞ্জ পস্তেকগলু! চাকরিটা নিয়ে বুঝি কিছুদিনের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়া গেল! সে জন্যই কি কাল ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের পর সাংবাদিকদের বাঁকা প্রশ্নের জবাবে কিছুটা তেজোদ্দীপ্ত উত্তর দিলেন টটেনহ্যাম কোচ? সোজাসুজিই বলে দিলেন, আপনাদের অনেকের খারাপ লাগবে, তবে আরও কিছুদিন আমাকে আপনারা সহ্য করতে হবে!
টটেনহ্যামের দায়িত্ব নিয়েছেন বছর দুয়েক হয়ে গেল। প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ও গ্রিসে জন্ম নেওয়া প্রথম কোচ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে দায়িত্ব নিতে না নিতেই। প্রথম মৌসুমে ভালোই করেছেন, উড়ন্ত শুরুর পর শেষদিকে পথ হারালেও লিগে পঞ্চম স্থানে রেখেছিলেন টটেনহ্যামকে। কিন্তু এই মৌসুমে একেবারেই জগাখিচুড়ি অবস্থা স্পার্সের – মৌসুমের শেষভাগে এসেও এই মুহূর্তে লিগে অবস্থান ১৫তম, ঘরোয়া সব কাপ টুর্নামেন্টে বাদ পড়েছেন আগেই। পস্তেকগলুর চাকরি তাই আজ যাচ্ছে, কাল যাবে করছে অনেকদিন ধরেই।
আশার সুতো হয়ে ছিল ইউরোপা লিগ, সেখানে ঠিক উড়তে না পারলেও কষ্টেসৃষ্টে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছিল টটেনহ্যাম। সেখানে পস্তেকগলু বাদ পড়লেই তাঁর চাকরি যাওয়া সম্ভবত আর কেউ ঠেকাতে পারবে না! সহজ হিসাব, ইউরোপা লিগ জিতলেই তো আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে টটেনহ্যাম। না জিতলে এই মৌসুমে তো কিছুই নেই, লিগে পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকে থাকায় আগামী মৌসুমেও ইউরোপে টটেনহ্যাম দর্শক হয়ে থাকবে।
ফ্রাঙ্কফুর্টে গতকাল ইউরোপা লিগের ম্যাচটা শেষ হতেই তাই যেন বুক ভরে অক্সিজেন নেওয়ার সুযোগ হলো পস্তেকগলুর। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ১-১ ড্রয়ের পর ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়ে গতকাল যে ৪৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ডমিনিক সোলাঙ্কির গোলটা ধরে রেখেই জিতে গেছে টটেনহ্যাম। উঠে গেছে ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে, অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন পস্তেকগলু।
ম্যাচ শেষের পরের স্বস্তি সংবাদ সম্মেলনে আসতে আসতে রূপ নিল আত্মবিশ্বাসে। গত কিছুদিন ধরেই তো তাঁর চাকরি কতদিন আর আছে, দলের ড্রেসিংরুম তাঁর নিয়ন্ত্রণে আছে কি না – প্রশ্নগুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন, উত্তরেও মাঝে মাঝে বিরক্তিটা আর লুকাতে পারছিলেন না। ফ্রাঙ্কফুর্টে ম্যাচপূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেও এই ম্যাচে হেরে গেলে তাঁর চাকরি আর থাকবে কি না, প্রশ্নে বলেছিলেন, ‘আমি জানি না।’
ম্যাচ হারেননি, জিতে সেমিফাইনালে গেছেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘আমাদের সমর্থকেরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। আশা করি এটা তাদের সামনে কিছু একটার দিকে আশা নিয়ে তাকানোর সুযোগ দেবে।’ এরপরই তাঁকে নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তার চেয়েও বেশি করে কটাক্ষ করেছেন, তাঁদের প্রতি খোঁচা থাকল পস্তেকগলুর, ‘আমি গতকাল যে কোচ ছিলাম, আজও সেই কোচই আছি। খেলোয়াড়েরা (আমার ওপর থেকে) বিশ্বাস হারায়নি। লোকে আমার অর্জন নিয়ে হাসাহাসি করে, ছোট করে দেখায়, তবে সেসবকে ওভাবেই রেখে দিই। ওসব নিয়ে আমি ভাবি না, আমাকে এসব ছোঁয় না, আমার কাজেও প্রভাব ফেলে না।’
সমালোচনাকারীদের এরপর পাল্টা খোঁচায় বললেন, ‘আমার কাছে ড্রেসিংরুমই সবকিছু। খেলোয়াড়দের আমার ওপর বিশ্বাস আছে? স্টাফদের আমার ওপর বিশ্বাস আছে? অন্যরা আমাকে নিয়ে কী (হাসিঠাট্টা) করল, তার চেয়ে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই, দুর্ভাগ্য আপনাদের, আমাকে আরও কিছুদিন সহ্য করতে হবে।’
ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে টটেনহ্যামের প্রতিপক্ষ নরওয়ের চমক দেখানো ক্লাব বোদো/গ্লিমট, যারা ইতালির লাসসিওকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গড়েছে ইতিহাস – নরওয়ে থেকে ইউরোপিয়ান কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ওঠা প্রথম ক্লাব যে তারাই!