নাজমুল হোসেন শান্ত আগেই বলেছিলেন বেশি আশা না রাখতে। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর নিষেধাজ্ঞা শোনেননি, এমন দাবি করা যাচ্ছে না। তাই বলে সবচেয়ে নিরাশাবাদী সমর্থকও বোধহয় দূরতম কল্পনায় এমন কিছু ভাবেননি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে জাতীয় ক্রিকেট দল। সেখানে ক্রিকেট বিশ্বের ‘পুঁচকে’ দল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। শান্ত-লিটন-সৌম্যদের এমন পারফরম্যান্সের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে জাতীয় দল। অনেকেই দাবি করছেন, বিশ্বকাপ খেলার দরকার নেই শান্তদের, তাঁদের দেশে ফেরত নিয়ে আসা হোক।
কিন্তু চাইলেই তো আর জাতীয় দলকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা যাবে না। আগামী মাসে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যদি দ্বিতীয় পর্বে উঠতে ব্যর্থও হয়, গ্রুপপর্বে চারটা ম্যাচ তো খেলতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থকদের দাবি, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের যে পারফরম্যান্স, তাতে না খেললেও চলে।
কিন্তু আইসিসিকে বিশ্বকাপ খেলার কথা বলে এভাবে চাইলেও তো চলে আসা যায় না। চলুন কিছু উপযুক্ত কারণ খুঁজে দেখা যাক।
১. ভিসার মেয়াদ: সবাই জানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া সহজ কাজ না। চাইলে ভিসা জোগাড় করা যায় না। নেপাল যেমন সন্দীপ লামিচানেকে শেষ মুহূর্তে দলে নিতে চাইলেও ভিসা জটিলতায় নিতে পারছে না। এখন চাইলে বাংলাদেশ বলতেই পারে যে ২৯ জুন শেষ হতে যাওয়া বিশ্বকাপের জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ করার কথা থাকলেও ভুলে ৩০ মে মাস পর্যন্ত ভিসা করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এখন আর মেয়াদ বাড়ানো যাচ্ছে না ফিরে আসতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
২.পরের বিশ্বকাপ: ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হোসেন বলেছিলেন, ‘আপনার সবসময় বুঝতে হবে, আমাদের টার্গেট এ বিশ্বকাপ নয়, পরবর্তী বিশ্বকাপ।’ তবে এবারও দলের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, এবারও লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপ তাই খেলে লাভ নেই। বরং দেশে ফিরে পরবর্তী বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা যায়। সেক্ষেত্রে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এক মাস বেশি প্রস্তুতি নিতে পারবেন শান্তরা।
৩. নিরাপত্তা: হিউস্টনে ম্যাচের সময় আশপাশের পরিস্থিতি ছিল বেশ শঙ্কা জাগানো। পাশ দিয়ে হাইওয়ে, গ্যালারি থেকে চাইলেই যেকেউ ঢুকতে পারবেন। মাঠের পাশে খুব জোরালো নিরাপত্তা বেষ্টনীও নেই। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অখ্যাত ক্রিকেটাররা খেলে অভ্যস্ত হতে পারেন, বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটাররা নন। কদিন আগে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে সাকিবকে নিউইয়র্কে ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। হিউস্টনেও এমন কিছু ঘটতে কতক্ষণ। অনিরাপদ বোধ করায় দেশে ফেরার দাবি জানিয়ে রাখলে তাতে খুব কি দোষের কিছু হবে?
৪. বিমানে চড়ে ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন মোস্তাফিজরা: আইপিএলে শেষদিকে মোস্তাফিজুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এর ব্যাখ্যায় বোর্ড পরিচালক আকরাম খান বলেছিলেন আইপিএলে এক ম্যাচ খেলেই বিমানে উঠতে হচ্ছে মোস্তাফিজকে দুই দিন পর আবার ম্যাচ খেলতে হয়। এভাবে বিশ্রাম পাচ্ছেন না মোস্তাফিজ। এদিকে বিশ্বকাপে এরচেয়েও বাজে অবস্থা। ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডালাসে খেলে মাত্র একদিনের বিরতিতে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে নিউইয়র্কে খেলতে হবে বাংলাদেশকে।
আবার দুই দিনের বিরতিতে ভিন্ন এক দেশে হাজির হতে হবে ম্যাচ খেলতে। এত ধকল সহ্য করে খেলা কি ঠিক হবে? বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা সূচির প্রতিবাদে দেশে ফিরে আসতে পারেন তারা।
৫. বয়কট আন্দোলন: ইদানীং বেশ বয়কটের জোয়ার চলছে। বাংলাদেশ দল মিরপুরে খেলে অভ্যস্ত, এখানেই তাদের যত দাপট। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে মিরপুরের উইকেট মিলবে না, সেখানে মিরপুরের মতো সমর্থনও পাবে না ক্রিকেট দল, তাই বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে বাংলাদেশ। শান্তরা তো আগেই বলেছেন, আশা না রাখতে। আর এটা তো অলিম্পিক না যে অংশ নেওয়াটাই বড় কথা। এর চেয়ে দেশে ফিরে ‘বিশ্বকাপ দেখা বয়কট করুন’ আন্দোলনের জন্ম দিতে পারেন তাঁরা।
৬. গ্রীষ্মকালীন ফলমূল: গরমের জন্য গ্রীষ্মকালকে অনেকে অপছন্দ করলেও মৌসুমি ফলমূলের জন্য এ ঋতুর জুড়ি মেলা ভার। এ সময়ে বাজার দখল করে রাখে নানান জাতের আম, জাম কাঠাল, লিচুসহ হরেক রকম ফল। বিখ্যাত আমের জাত ‘হিমসাগর’ ও ‘ল্যাংড়া’ আগামী সপ্তাহে বাজারে আসবে। রাজশাহীর আমও আসবে শিগগির। অন্যদিকে বিভিন্ন জাতের লিচু ইতোমধ্যে এসে গেছে বাজারে।
এবং দারুণ এই ফলগুলো জুনের মধ্যেই বাজার থেকে হারিয়ে যাবে। ফলের এমন ভরপুর মৌসুমে খেলোয়াড়রা যদি বিশ্বকাপে খেলতে দেশের বাইরে থাকেন, তবে এসব মৌসুমি ফল খেতে তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে পরের গ্রীষ্ম পর্যন্ত। তাই এ মৌসুমের আম-জাম-লিচু খেতে বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে দেশের বিমান ধরতে পারেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।