চলতি মার্চ মাসে দেশে শিশু ও নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে। সোমবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের পাঠানো প্রতিবেদনটিতে চলতি মার্চ মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও সংগৃহীত তথ্য যুক্ত করা হয়েছে।
মার্চ মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মাসে শিশু ও নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে । নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতিবাচক দায়িত্ববোধ, ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা উপ–শিরোনাম দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা তেমন একটা দেখা যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ ভূমিকা না থাকার কারণে ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা এ মাসে যে হারে ঘটছে তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মার্চ মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন; ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন হয়রানি অনেকাংশে বেড়েছে, আত্মহত্যা কিছুটা কমলেও হত্যার ঘটনা একই ধারাবাহিতায় রয়েছে, পরিবারিক সহিংসতা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা গত মাসের মতো একই রয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা দৃশ্যমান নয়, তার উপর রয়েছে বিচারহীনতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা।
এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে ৪২৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ১৩৩টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ১৩২টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২৫টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৩টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার ১৩২ জনের মধ্যে ৪৯ জন শিশু, ৩৭ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন শিশু, ৬ জন কিশোরী ও ১৫ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু ও ১ জন নারী। ৩৭ জন শিশুসহ মোট ধর্ষণের চেষ্টা ৬১টি, যৌন হয়রানি ৩৪টি, শারীরিক নির্যাতনের ৩৮টি ঘটনা ঘটেছে।
এ মাসে ১৭ জন কিশোরী ও ২৪ জন নারীসহ মোট ৪১ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ মাসে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৪ জন কিশোরী ও ৩ জন নারী অপরদিকে ৪ জন শিশু ও ৫ জন কিশোরী নিখোঁজ রয়েছেন।
এছাড়াও মার্চ মাসে ৪ জন শিশু, ২ জন কিশোরী ও ৫ জন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৬৫ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ১৯ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত, হতাশা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ও অভিমান ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে ৫টি শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা সমাজপতিরা আপোস করেছেন যা প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে বেআইনিভাবে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার সিদ্ধান্ত। এ সময়ে ৫ জন মৃত ও ৩ জন জীবিত মোট ৮ জন নবজাতক শিশুকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এ সমস্ত শিশুদেরকে কি কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপনের চেষ্টা করছে না।