বয়স চল্লিশ পেরোলে দাঁতের একটু বেশিই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এর আগ পর্যন্ত কোনো মাড়ির অসুখ না থাকলে সেভাবে এনামেল ক্ষয় হয় না। তবে ৪০-৪৫ বছরের পর এনামেল দ্রুত ক্ষয় হয় বলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সেনসিটিভ টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। দিনে দু’বার ব্রাশ করবেন অবশ্যই। তার মধ্যে অন্তত একবার সেনসিটিভ টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করে নিন।
সাধারণত ৪০-এর ওপরে বয়স যাদের, তাদের অনেকেরই দাঁতে হলদেটে ছোপ পড়ে যায়। এর কারণ দাঁতের সাদা রঙের জন্য যে এনামেল দায়ী, তার ক্ষয়। তবে সবারই যে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেবে তা নয়। দাঁত ও চোয়ালের সেটিংয়ের ওপরও নির্ভর করে এনামেলের ক্ষয় কতটা হবে বা আদৌ হবে কিনা! ঠিক এই কারণে অনেকের খুব কম বয়স থেকেই দাঁতের ক্ষয় হয়, অনেকের আবার বয়সকালেও ক্ষয় হয় না।
আমাদের অনেকের মনেই ধারণা আছে, যত জোরে ব্রাশ করা যাবে, তত বোধ হয় দাঁত পরিষ্কার হবে বেশি। এ ধারণা ভুল। ২ মিনিট সাধারণভাবে ব্রাশ করলেই হয়। জোরে জোরে অনেকক্ষণ ধরে ব্রাশ করলে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল ক্ষয়ে যায়। একে অ্যাব্রেশন বলে। ওই জায়গাগুলো তখন খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ক্যাভিটিও সহজেই শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাড়ির আরও একটি ইনফেকশন খুব কমন। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে জিঞ্জিভাইটিস।
দাঁতে পাথর বা ক্যালকুলাস জমে গিয়ে মাড়ি শিথিল হয়ে যায়। অনেকেই ভাবেন, পাথর দূর করতে গিয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে। সুস্থ দাঁতের জন্য প্রয়োজন শক্ত মাড়ির। ক্যালকুলাস দূর করলে দাঁত একটু নড়ে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক যত্নের মাধ্যমে আবার মাড়িকে শক্তপোক্ত করে তোলা সম্ভব। জিঞ্জিভাইটিসের সমস্যা দূর করতে স্কেলিং খুব ভালো উপায়। এতে দাঁত নড়ে যায় না।
মাড়ির ইনফেকশনের প্রাথমিক লক্ষণ হলো মুখে দুর্গন্ধ। দাঁত ব্রাশ করার সময় যদি রক্ত বের হয়, তাহলেও কিন্তু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ক্যাভিটির প্রাথমিক লক্ষণ হলো, দাঁতে কালো ছোপ দেখা যাওয়া। শুরুতেই যদি ফিলিং করে নেওয়া যায়, তাহলে ক্যাভিটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে না। তবে ক্যাভিটি যদি দাঁতের ভেতরের দিকে হয়, তখন রোগীর পক্ষে প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে ক্যাভিটি অনেকটা বেড়ে গেলে শুধু ফিলিংয়ে আর কাজ হয় না। তখন রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের সাহায্য নিতে হয়।
দাঁতের যত্নে করণীয়
১. একটি নরম ব্রিস্টেলের টুথব্রাশ এবং ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
২. দিনে অন্তত একবার আপনার দাঁত ফ্লস করুন যাতে আপনার দুই দাঁতের মাঝে জমে থাকা খাবার পরিষ্কার হয়।
৩. সংক্রমণের কারণ প্লাক এবং ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করার জন্য একটি এন্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৪. চিনিযুক্ত এবং স্টার্চযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন যা দাঁতের ক্ষয় এবং সংক্রমণ হতে পারে।
৫. দাঁতের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে নিয়মিত চেকআপ এবং পরিষ্কারের জন্য আপনার ডেন্টিস্টের কাছে যান।
৬. যদি আপনার কোনো বিদ্যমান দাঁতের সমস্যা থাকে, যেমন গহ্বর বা মাড়ির রোগ, তাহলে আরও সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের চিকিৎসা করানো নিশ্চিত করুন।
৭. ধূমপান বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, যা মুখে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৮. খেলাধুলা করার সময় বা ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার সময় একটি মাউথগার্ড পরিধান করুন, যা মুখে আঘাত বা আঘাতের কারণ হতে পারে, যা মুখের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৯. সর্বোত্তম মৌখিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য প্রচুর ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত একটি সুষম খাদ্য খান।
১০. দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে ব্রাশ, ফ্লসিং, ধুয়ে ফেলার মাধ্যমে ভাল ওরাল হাইজিন অভ্যাস অনুশীলন করুন।
মুখের সুস্থতা অনেকাংশেই মুখ পরিষ্কার রাখা সংক্রান্ত নিয়মিত চর্চার ওপর নির্ভর করে। মুখ পরিষ্কার রাখার ফলে দাঁতের ক্ষয়রোগ, জিঞ্জিভাইটিস, পিরিওডন্টাল রোগ, হ্যালিটোসিস বা মুখের দুর্গন্ধ এবং অন্যান্য দন্তজনিত সমস্যা থেকে ব্যক্তি রক্ষা পায়। পেশাদার ও ব্যক্তিগত—উভয় পর্যায়েই এ ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন। সচেতনভাবে দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি নিয়মিত দন্তচিকিৎসকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের ক্যালকুলাস বা টারটার এবং দাঁতে অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার