আমাদের দেশে একসময় চায়ের জনপ্রিয়তাই বেশি মনে করা হতো। তবে সাম্প্রতিককালে চায়ের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে কফিও। শহরের মোড়ে মোড়ে কফি শপ বা কোল্ড কফির কার্ট গড়ে ওঠাটা বোধহয় তারই প্রমাণ।
এই দুই পানীয়ের মধ্যে সেরা কোনটি- তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই আড্ডা থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় ওঠে। সেখানে একদল কফির গুণাগুণের পক্ষ নেন, আবার আরেকদল চায়ের জন্য গলা ফাটান। কিন্তু আদতে চা আর কফির মধ্যে পুষ্টিগুণে এগিয়ে কোনটি?
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেন, কফির পরিবর্তে চা পান করাটাই শ্রেয়। কিন্তু এর পেছনে যুক্তি কী!
কম ক্যাফেইন, কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এক কাপ চায়ে ২০-৬০ মিলিগ্রামের মতো ক্যাফেইন থাকে, অন্যদিকে সমপরিমাণ কফিতে থাকে ৮০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। ক্যাফেইন আমাদের স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে কিছু সময়ের জন্য মনোযোগ, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণে মানসিক অস্থিরতা, অনিদ্রা, এমনকি হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পাওয়ার হাউস অব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
কফি এবং চা উভয়ই বায়োঅ্যাকটিভ কমপাউন্ডে পূর্ণ। বায়োঅ্যাকটিভ হলো স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী এক ধরনের উদ্ভিজ্জ যৌগ। তবে কফির চেয়ে চায়ে ফ্ল্যাভোনয়েড, পলিফেনল এবং ক্যাটেচিনের মতো বৈচিত্র্যময় বায়োঅ্যাকটিভস বেশি রয়েছে। এই উপাদানগুলো হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
গ্রিনটিতে আবার আছে এপিগালোক্যাটেচিন গ্যালেট (ইজিসিজি) নামক দুর্দান্ত এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি দেহকোষের সুস্থতা রক্ষার সঙ্গে ত্বকে বলিরেখা এবং বয়সের ছাপ দ্রুত পড়তে দেয় না। অন্যদিকে ব্ল্যাক টিতে আলাদাভাবে থাকে থেফ্লাভিন। এ যৌগটি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসলের একজন পুষ্টিবিষয়ক গবেষক এমা বেকেটের ভাষ্য মতে, সাধারণত ফলফলাদি কিংবা শাকসবজির মাধ্যমে আমাদের দেহে বায়োঅ্যাকটিভ প্রবেশ করে। কিন্তু যখন আমরা গরম পানিতে চা-কফি মেশাই তখন তার মাধ্যমেও আমাদের শরীরে দ্রুত বায়োঅ্যাকটিভ প্রবেশ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি শাকসবজি খেতে পছন্দ না করেন, তাহলে চা পান করুন। বায়োঅ্যাকটিভের জোগান হয়ে যাবে।’
গবেষণা বলে, ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি হ্রাস থেকে শুরু করে আয়ু বৃদ্ধিতে অবদান রয়েছে এই বায়োঅ্যাকটিভগুলোর।
‘হয়তো এজন্যই যে দেশের জনসংখ্যা বেশি চা পান করে, তাঁরা বেশিদিন বাঁচে এবং কর্মক্ষম থাকে’, বলেন বেকেট।
মনকে প্রশান্ত করে চা
সবাই ভাবে, চায়ের চেয়ে কফি পানে বেশি চাঙ্গা অনুভূত হয়। অথচ চায়ের পাতায় এল–থিয়ানিন নামের একটি মলিকিউল থাকে। এই নন-প্রোটিন অ্যামাইনো অ্যাসিডটি মানুষকে সজাগ করে তোলে। একই উপাদান দুশ্চিন্তা দূর করতেও সাহায্য করে।
এল–থিয়ানিন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বুদ্ধিগত (কগনিটিভ) কর্মক্ষমতা বাড়ায়, চাপ কমায় এবং ঘুমের মান উন্নত করতে পারে।
আসলে এত তত্ত্ব মেনে তো কেউ চা-কফি পান করেন না। ব্যক্তিগত পছন্দ এবং জীবনাচরণই এখানে মুখ্য। দুটো পানীয়েরই পৃথক পৃথক ভূমিকা রয়েছে, পুষ্টিগুণও আছে। বিশেষজ্ঞরা দুটোই গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবে পরিমিত মাত্রায়।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক