সম্পর্কের জগতে দীর্ঘস্থায়ী ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন। তার জন্য দুজনের মধ্যে প্রয়োজন অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, বিশ্বাস, প্রচেষ্টা, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্মান। যদিও দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া যেকোনো সম্পর্কের স্বাভাবিক বিষয়। তবে কিছু আচরণ এবং সমস্যা থেকে আপনাকে সতর্ক থাকতেই হবে। এগুলোতে কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না।
আপনি যদি বৈবাহিক সম্পর্কে থাকেন, তবে তাঁর ভুল মেনে নেওয়া, মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকে সম্পর্ক ঠিক বা ভালো রাখতে কিছু বিষয় এড়িয়ে যেতে চান। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে কখনই সহ্য করা উচিত নয়।
মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন: যেকোনো ধরনের নির্যাতন—শারীরিক বা মানসিক—সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে ম্যানিপুলেশন, সবসময় সমালোচনা, গ্যাসলাইটিং, হুমকি বা ভীতি প্রদর্শন। এছাড়াও শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে যেকোনো ধরনের ক্ষতি। উভয় ধরনের নির্যাতন আপনার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো কখনই সহ্য করা উচিত নয়। এমন সম্পর্ক থেকে দূরে থাকাই ভালো। সম্মান, ভালোবাসা ও নিরাপত্তার, সুস্থ সম্পর্কের আভাস দেয়।
নিয়ন্ত্রণকারী আচরণ: সম্পর্কে সঙ্গী বিভিন্নভাবে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন, আপনার কাজ ও সিদ্ধান্তে আধিপত্য করা, অথবা বন্ধু ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা। আপনার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা। আপনার ফোন চেক করে গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা। এমনকি আপনার সাথে পরামর্শ না করে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া। এমন আচরণ কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি ব্যক্তিত্বকে কমিয়ে দেয়। একটি সম্পর্কে নিজের পছন্দ করা, নিজেকে প্রকাশ করা এবং ব্যক্তিগত পরিচয় বজায় রাখার স্বাধীনতা থাকা উচিত। সুস্থ সম্পর্ক গড়ে ওঠে একে অপরের স্বাধীনতার প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে।
সমর্থনের অভাব: একজন সঠিক সঙ্গী আপনার স্বপ্ন, লক্ষ্য এবং আবেগ বুঝতে পারেন। তাই তিনি আপনার কথা শোনে, সমর্থন করে এবং মূল্য দেয়। কিন্তু যদি আপনার সঙ্গী আপনাকে মূল্য না দেয়, তবে এমন ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। মানসিক সমর্থনের অভাবের মধ্যে রয়েছে আপনার অনুভূতি ও উদ্বেগকে উপেক্ষা করা। আপনার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব না দেওয়া বা আপনার আবেগকে কম গুরুত্ব দেওয়া। আর তারা শুধু মাত্র তাদের প্রয়োজনগুলোই বোঝে। এই ধরনের ব্যক্তি আপনাকে একাকীত্বের মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
যোগাযোগের অভাব: আমরা সবাই জানি যোগাযোগ সুস্থ সম্পর্কের মূল স্তম্ভ। যদি দেখেন, আপনার সঙ্গী আপনি কথা বলার সময় শুনছে না। অথবা আপনার কল বা মেসেজের জবাব দিচ্ছে না। এটি অবশ্যই খারাপ। যোগাযোগের অভাব ভুল বোঝাবুঝি এবং অমীমাংসিত সমস্যা তৈরি করতে পারে। যা আপনাকে হতাশা এবং দূরত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই আবেগ, প্রত্যাশা এবং উদ্বেগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা প্রয়োজন।
অসম্মান: একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য সীমানা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো লঙ্ঘন করা সম্মানের অভাব দেখায়। আপনার সঙ্গী যদি আপনার চেহারা, দক্ষতা বা পছন্দ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে। অথবা আপনাকে অস্বস্তিকর কোনো কাজে চাপ দেয় বা আপনার অনুরোধকে উপেক্ষা করে। এগুলোর মাধ্যমে সে আসলে তার সীমানা লঙ্ঘন করছে। এই সাথে ক্ষোভের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। ক্রমাগত অসম্মান আপনার আত্মসম্মানকে ম্লান করে দিতে পারে। তাই এমন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন। যে ব্যক্তি আপনার ক্রমাগত সমালোচনা করে, তার থেকে দূরে থাকুন।
একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। সুস্থ ও সুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য উভয় পক্ষেরই প্রচেষ্টা ও সম্মান প্রয়োজন।