ভ্রমণের সময় চিঠি বা পোস্টকার্ড পাঠানো অনেকেরই প্রিয় একটি অভ্যাস। কিন্তু যদি সেই পোস্টকার্ডটি পানির নিচে দাঁড়িয়ে পাঠানো যায়? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, বাস্তবে এমন সুযোগ রয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ ভানুয়াটুতে। বিশ্বের একমাত্র ‘আন্ডারওয়াটার পোস্ট অফিস’টি রয়েছে এখানেই।
ভানুয়াটুর রাজধানী পোর্ট ভিলা থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের নৌকাভ্রমণে পৌঁছে যাওয়া যায় হাইডঅ্যাওয়ে আইল্যান্ডের কাছে মেলে বেতে। এখানেই, হাইডঅ্যাওয়ে আইল্যান্ড মেরিন স্যাংচুয়ারির অংশ হিসেবে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন মিটার নিচে স্থাপন করা হয়েছে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর আকৃতির ডাকঘর। উপরে লেখা ‘পোস্ট অফিস’।
স্নোরকেলিং, ডাইভিং কিংবা পানিতে ভেসে থাকার মতো সাধারণ সাঁতার জানলেও আপনি এই পোস্ট অফিসে পৌঁছে যেতে পারবেন। সঙ্গে নিতে হবে বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ পোস্টকার্ড, যা কিনতে পাওয়া যায় হাইডঅ্যাওয়ে আইল্যান্ড রিসোর্ট বা আশপাশের দোকানগুলোতে।
এই পোস্ট অফিসে প্রতিদিন এক জন প্রকৃত পোস্টম্যান স্কুবা গিয়ার পরে এসে পানির নিচের পোস্টবক্স থেকে কার্ডগুলো সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো প্রেরণ করা হয় গন্তব্যে। প্রতিটি কার্ডে থাকে একটি বিশেষ স্ট্যাম্প, যা প্রমাণ করে ‘এটি এসেছে সমুদ্রের গভীর থেকে!’
এই ‘আন্ডারওয়াটার পোস্ট অফিস’টি চালু হয়েছে ২০০৩ সালে। তবে এটি সবসময় খোলা থাকে না। ওপরে ভেসে থাকা ফ্লোটে যদি পতাকা উড়তে দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে পোস্ট অফিস খোলা। না থাকলে, গায়ে লাগানো পোস্টবক্সে ফেলে আসা যায় কার্ড। যদি আপনি পানি নিচে যেতে না চান, কোনো সমস্যা নেই। আপনার পোস্ট কার্ডটি দিয়ে আসতে পারেন শহরের মূল পোস্ট অফিসে। সেখান থেকেও বিশেষ স্ট্যাম্পসহ পাঠানো হয় চিঠি।
ডাকঘরটি শুধু পোস্ট করার জন্যই নয়। বরং এটি এক ধরনের পর্যটন অভিজ্ঞতা। রঙিন প্রবাল, নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ, স্বচ্ছ পানি, সব মিলিয়ে ভানুয়াটুর পানির নিচের এই এলাকা যেন এক জীবন্ত অ্যাকুরিয়াম। তাই সঙ্গে নিতে ভুলবেন না ওয়াটারপ্রুফ ক্যামেরা বা গোপ্রো। পোস্ট করার সেই দুর্লভ মুহূর্তটি ছবি বা ভিডিওতে ধরে রাখলে স্মৃতিতে থেকে যাবে অনেকদিন।
স্মরণীয় ভ্রমণ আর স্মরণীয় অভিজ্ঞতা, দু’টিই একসঙ্গে পেতে হলে ভানুয়াটুর এই ‘আন্ডারওয়াটার পোস্ট অফিস’-এ একবার ঘুরতে যাওয়াই যায়। সাগরের নিচে বসে পোস্টকার্ড পাঠানোর গল্প তো আর রোজ হয় না।