শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যায় শহীদদের। এমনকি কোনো খোঁজ-খবর না রাখারও অভিযোগ শহীদ পরিবারগুলোর। ইতিহাসবিদরা বলছেন, মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও প্রকৃত শহীদদের তালিকাটা পর্যন্ত করেনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগসহ সারা দেশে চালায় অপারেশন সার্চলাইটের নামে এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।
তৎকালীন ইকবাল হল আর বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের নৈশপ্রহরী শামসুদ্দিনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলে পাক হানাদার বাহিনী।
কথা হচ্ছিল শহীদ শামসুদ্দিনের ছেলে মো. শাহজাহানের সঙ্গে। তিনি জানান, গত সাড়ে ১৫ বছর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। এমনকি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি শহীদদের। সরকারের নানা দপ্তরে ঘুরেও মেলেনি কোনো সহায়তা।
মো. শাহজাহান বলেন, ‘কথাই বলত ওনারা যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, আসলে জনগণের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে। ওনারা শহীদদের সাথে, শহীদ পরিবারের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে। আমার মায়ের বয়স ১০৩ বছর, আমার মাকে আমি ঠিকমতো চালাতে পারি না।’
শহীদ পরিবারগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত কালরাতে শহীদ হওয়া ১৯৬ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীর তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও প্রকৃত হিসাব বের করা হয়নি। কারণ সেই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসা বহিরাগত অনেকেই শহীদ হয়েছেন, যাদের তথ্য আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শহীদ হয়েছেন তারা যাতে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান। তাদের স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ পরিবারগুলো এখনও অবহেলিত ও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন।’
ইতিহাসবিদরা বলছেন, মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ক্ষমতাচ্যুত সরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘জাতীয় বীর হিসেবে তাদের চিহ্নিত করতে পারিবারিক দাবি এবং আমাদের মতো যারা আছেন তাদের দাবির পরেও কিন্তু এটা করা হয়নি। গত দেড় দশকে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তারা একেবারেই ব্যক্তি কেন্দ্রিক ইতিহাসে রূপান্তরিত করতে গিয়ে এর চরিত্রটাই পাল্টে দিয়েছেন।’
২৫ মার্চ কালরাতে গণহত্যায় শহীদদের প্রকৃত তথ্য বের করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান ইতিহাসবিদদের।