মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন রাজ্য চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। চীন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছে দলটি।
ঢাকা সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গতকাল রোববার দলের নেতারা এই প্রস্তাব দেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ওই বৈঠক হয়। জামায়াতে ইসলামীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা বিশেষভাবে রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ তুলেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১-১২ লাখ রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা বলেছি, খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয় সাময়িক সমাধান হলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে পুনর্বাসন।’
তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমরা আরাকান অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। চীন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ মিয়ানমারের সাথে তাদের সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তারা আমাদের এই প্রস্তাব নিজেদের সরকারের কাছে তুলে ধরবে এবং প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডা. তাহের বলেন, ‘তারা (চীনের প্রতিনিধিদল) বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের সময় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আমরা জানিয়েছি, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরে অথবা প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে জুনেও হতে পারে। তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তারা একই নীতিতে অটুট।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি ইনক্লুসিভ, ইসলামী এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী আমরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। আমরা অনেক খোলামেলা আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে মতবিনিময় করেছি।
ডা. তাহের আরও বলেন, আমরা প্রথমেই আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া আমন্ত্রণ এবং ইতোমধ্যে সম্পাদিত কিছু চুক্তি ও প্রদত্ত আশ্বাসের জন্য চীন প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, চীন বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী এবং আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি, বাংলাদেশে আরও ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য। কারণ বাংলাদেশ একটি উদীয়মান দেশ এবং বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, আমরা তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং গভীর সমুদ্রবন্দরে (ডিপ সি পোর্ট) বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে ব্লু ইকোনমি প্রসারে চীনের বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।
তিনি বলেন, এ ছাড়া আমরা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি যাতে এই অঞ্চলে কেউ কারো প্রতি বৈরী মনোভাব প্রদর্শন না করে এবং নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় থাকে। বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেয়ার জন্যও আমরা অনুরোধ করেছি। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নিজেদের সরকারকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।
ডা. তাহের বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকার কার্যত একই সত্তা। তাই আমরা আশা করি, সরকার টু সরকার, দল টু সরকার, জনগণ টু জনগণ এবং দল টু দলের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। তারা জামায়াতে ইসলামীকে তাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরাও জানিয়েছি, অচিরেই জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরা তাদের আতিথেয়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। কারণ অতীতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সরকারের সাথে আমাদের এত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল না। এখন ব্যাপকভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে।
এরআগে রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সাথে ঢাকা সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক পেং জিউবিন-এর নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও আইনজীবী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন।