স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে স্টারলিংকের ইন্টারনেট। আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় স্টারলিংকের। সম্মেলনের বিস্তারিত কার্যক্রম ভেন্যু থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (বিডা) আয়োজনে গত ৭ এপ্রিল থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন। আজ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধন করেন স্টারলিংক ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক সেবা।
উদ্বোধনের পর সম্মেলনের ভেন্যুতে উপস্থিত সকলেই স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান। বিভিন্ন সাইট ব্রাউজ করার পাশাপাশি অনেকেই স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ স্টারলিংককে দেশের বাজারে ব্যবসা করার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পথ প্রশস্থ হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বাজারে বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করতে হলে প্রয়োজন হয় বিডা’র অনুমোদন ও নিবন্ধনের। মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছে বিডা’র অনুমোদন ও নিবন্ধন।
তবে দেশের বাজারে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে হলে আরও একটি লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়বে স্টারলিংকের। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) নীতিমালার আওতায় এনজিএসও লাইসেন্স নিতে হবে তাঁদেরকে। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানকেই এনজিএসও লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি পরীক্ষা প্রথম চালানো হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এরপর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের মধ্যে ভিডিও কলে বাংলাদেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। তাঁদের মধ্যকার আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর নির্দেশ দেন।
এ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে স্টারলিংক তাঁদের বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের এনজিএসও নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার করবে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টারলিংক। বিশ্বজুড়ে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে তাঁরা। বর্তমানে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ৪৬ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করছেন স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। উল্লেখ্য, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ৭, ১৩৫টি স্যাটেলাইট রয়েছে স্টারলিংকের এবং এই স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।