বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানে আরও এক ধাপ এগোলো মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। আজ মঙ্গলবার স্টারলিংকের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশকে নন জিওষ্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (NGSO) লাইসেন্স প্রদান করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশের অনুকূলে ‘ননজিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট অপারেটর লাইসেন্স’ ও ‘রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স’ নামে দুটি পৃথক লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়। সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বিটিআরসি হতে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে এই লাইসেন্স দুটি হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, গতকালই স্টারলিংককে এনজিওএস লাইসেন্স প্রদান করতে বিটিআরসি’র প্রেরিত সুপারিশে অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয় স্টারলিংকের।
আজ মঙ্গলবার প্রথম লাইসেন্সটি হস্তান্তর করা হয় বিটিআরসি’র লাইসেন্সিং বিভাগ হতে, যার মাধ্যমে স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। দ্বিতীয় লাইসেন্সটি হস্তান্তর করা হয় বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগ হতে, যার আওতায় ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য অনুমোদিত তরঙ্গ ব্যবহার করাসহ বেতার যন্ত্র ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ আমদানি ও ব্যবহার করতে পারবে।
প্রথম লাইসেন্সটি লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক লেঃ কর্ণেল সৈয়দ মোঃ তৌফিকুল ইসলাম স্টারলিংক গ্লোবাল লাইসেন্সিং এন্ড মার্কেট এভিয়েশন এর পরিচালক রেবেকা স্লিক হান্টার এর নিকট হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক জনাব আশীষ কুমার কুন্ডু এবং উপপরিচালক জনাব মো নাহিদুল হাসান।
অপরদিকে দ্বিতীয় লাইসেন্সটি রেবেকা স্লিক হান্টার এর কাছে হস্তান্তর করেন স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক ড. মোঃ সোহেল রানা। এ সময় স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আমিনুল হক এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাকারিয়া ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১০ বছরের জন্য বিটিআরসি হতে স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেডের অনুকূলে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৯ মার্চ মার্কিন এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের বাজারে ব্যবসা করার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)।
স্টারলিংকের মাধ্যমেই বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে একমাত্র শ্রীলংকাতে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। ভারতেও অচিরেই স্টারলিংকের আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি পরীক্ষা প্রথম চালানো হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এরপর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের মধ্যে ভিডিও কলে বাংলাদেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। তাঁদের মধ্যকার আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর নির্দেশ দেন।
এ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে স্টারলিংক তাঁদের বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের এনজিএসও নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার করবে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টারলিংক। বিশ্বজুড়ে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে তাঁরা। বর্তমানে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ৪৬ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করছেন স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। উল্লেখ্য, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ৭, ১৩৫টি স্যাটেলাইট রয়েছে স্টারলিংকের এবং এই স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।