গত মাসেই ইলন মাস্কের এআই স্টার্টআপ এক্সএআই তাঁদের ‘গ্রোক ২’ চ্যাটবটটিকে এক্স প্ল্যাটফর্মের নন-পেইড ব্যবহারকারীদের জন্যেও উন্মুক্ত করে দেয়। পাশাপাশি গত মাসেই উন্মোচিত হয়েছে নতুন ইমেজ জেনারেটর এআই মডেল ‘অরোরা’। কিন্তু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক্সএআই তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের এআই মডেল ‘গ্রোক ৩’ রিলিজ করতে পারেনি গত বছরের শেষ নাগাদ। তাই এখন প্রশ্ন কবে আসছে ‘গ্রোক ৩’ এআই মডেল।
‘গ্রোক ৩’ মডেলটি নিয়ে এআই ব্যবহারকারীদের আগ্রহের শেষ নেই। গত বছর জুলাই’তে মাস্ক তাঁর এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানায় যে, গ্রোক ৩ ‘স্পেশাল’ মডেলটির প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হয়েছে এনভিডিয়া’র এআই সক্ষমতার ১ লাখ এইচ১০০ জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) এবং ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রিলিজ করা হবে এই মডেলটি। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে মাস্ক এই মডেলটিকে এআই খাতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় এক পদক্ষেপ বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এইচ১০০ জিপিইউ জিপিইউগুলোর প্রতিটি’র দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এআই চিপ দিয়ে গ্রোক ৩ মডেলটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘হপার’ নামে পরিচিত এনভিডিয়া’র এই জিপিইউগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই সক্ষমতাসম্পন্ন। তাই লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেলের (এলএলএম) জন্য উচ্চ ভলিউমের ডেটা প্রসেস করতে এই চিপগুলো সিদ্ধহস্ত।
তবে নির্ধারিত সময়ে গ্রোক ৩ বাজারে আনতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ সম্পর্কে এক্সএআই এখনও পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। এমনকি কবে নাগাদ এটি রিলিজ পেতে পারে সে সম্পর্কেও কিছু বলেনি প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে আরও একবার ইলন মাস্ক তাঁর প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে ব্যর্থ হলো।
তবে এক্সএআই-এর ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত কিছু কোড থেকে এআই-বিষয়ক সংবাদদাতা তিবর ব্লাহো ধারণা করছেন যে, গ্রোক ৩ এর আগে মধ্যবর্তী একটি এআই মডেল- গ্রোক ২.৫- বরং নিয়ে আসতে পারে এক্সএআই।
অবশ্য গত আগস্টে পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সাথে এক আলোচনায় মাস্ক ২০২৪ সালে গ্রোক ৩ রিলিজ করার আশার কথাই শুধু জানিয়েছেন। কোন প্রকার নিশ্চয়তা দেননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রোক ৩ এর মতো বেশ কয়েকটি এআই মডেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুত সময়ে বাজারে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যানথ্রপিকের ক্লদ এআই মডেলের আপডেটেড সংস্করণ ক্লদ ৩.৫ অপাস। একইভাবে ওপেনএআই ও গুগলও সম্প্রতি তাঁদের ফ্ল্যাগশিপ এআই মডেল নির্ধারিত সময়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন?
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে এআই প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রচলিত পদ্ধতি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কম্পিউটিং সক্ষমতা ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডেটাসেটের আকার বৃদ্ধি করলেই পরবর্তী প্রজন্মের এআই মডেলের পারফর্মেন্সে বড় ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসা যেত। কিন্তু এখন বিষয়টি আর ততটা সহজে করা যাচ্ছে না বলেই জানা গেছে। ফলে এআই প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এআই মডেল তৈরিতে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গ্রোক ৩ মডেলটির উন্নয়নে গ্রোক ২-এর তুলনায় ১০ গুণ বেশি কম্পিউটিং সক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে এবং অচিরেই সেটা ২০ গুণে উন্নীত হতে পারে। গ্রোক ৩ মডেলটির বিলম্বের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এক্সএআই’তে মানবসম্পদের অপ্রতুলতা। নিশ্চিতভাবেই গুগল ও ওপেনএআই-এর মতো বিশাল মানবসম্পদ নেই এক্সএআই-এর কাছে।
তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ, বিজনেস ইনসাইডার