গুঞ্জনটা ছড়িয়ে পড়েছিল একদিন আগে। গুঞ্জনটা বাস্তবে রূপ নিল গতকাল মঙ্গলবার। দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়ে দিলেন, চলমান ভারত সিরিজেই শেষ, বাংলাদেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে আর নয়! এ ঘোষণার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটা চক্রও পূরণ হয়ে যায়। মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে "পঞ্চপাণ্ডব" হিসেবে পরিচিত ৫ জনেরই টি-টোয়েন্টি অধ্যায়ের সমাপ্তিরেখা আঁকা হয়ে গেল। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অবসরে যাওয়ার ‘বিরল’ কীর্তিতেও নাম লেখালেন ৩৮ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার।
বিরল শব্দটা নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে অনেকের। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অবসরের ইতিহাসের দিকে তাকালে এ শব্দটাই যথার্থ। বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটার শেষ ম্যাচ খেলার অনেকদিন পরে এসে বুঝতে পারেন, জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন!
এটার সর্বশেষ উদাহরণ সাকিব আল হাসান। ভারত সফরে কানপুর টেস্টের আগে সাকিব জানান, টি-টোয়েন্টিতে শেষ ম্যাচটা খেলেছেন গত বিশ্বকাপেই! অর্থাৎ আগেই ঘোষণা দিয়ে বিদায় বলার সৌভাগ্য হয়নি দেশসেরা অলরাউন্ডারেরও। টি-টোয়েন্টিতে না হলেও টেস্টে অবশ্য আগেই বিদায় সূচি জানিয়েছেন। ‘খেলতে পারলে’ ঘরের মাঠে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজটা হবে সাকিবের লাল বলের ক্রিকেটে শেষ সিরিজ।
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দেড়শর বেশি ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে খেললেও আগেই বলে-কয়ে শেষ ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে হাতে গোনা কয়েকজনের। যে সংখ্যাটা এখনো দুই অঙ্ক ছোঁয়নি, তাকে বিরল না বলে আর উপায় আছে কি?
আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। অবসর সিদ্ধান্ত জানানোর পর এটাই হতে যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এরপর হায়দরাবাদে সিরিজের শেষ ম্যাচে এ সংস্করণে শেষবার দেখা যাবে তাঁকে।
মাহমুদউল্লাহর শেষের শুরুর আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ‘বিদায়ের’ ঘোষণা দিয়ে খেলতে নামার তালিকায় থাকা ক্রিকেটাররা পরের ম্যাচগুলোতে কেমন করেছেন-
খালেদ মাহমুদ সুজন:
সংক্ষিপ্ত এ তালিকায় গেলে সবার আগে আসে সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজনের নাম। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুজন জানান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তিনি।
বাংলাদেশ সফরে শ্রীলঙ্কা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেললেও সুজন শুধু প্রথম ওয়ানডে খেলেই বিদায় নিয়েছেন। সে ম্যাচে ৬২ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করছিলেন সুজন। পরে বল হাতে ২ ওভারে ১৫ রান দিলেও কোনো উইকেট পাননি। শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা জিতেছিল ৫ উইকেটে।
মোহাম্মদ রফিক:
দুই বছর পর আরেক ফেব্রুয়ারিতে ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেন মোহাম্মদ রফিক। ২০০৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাঁহাতি অলরাউন্ডার জানান, ঘরের মাঠে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবেন তিনি। ঘোষণা অনুযায়ী প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ খেলে লাল বলকে চিরতরে বিদায় জানান সাবেক এ অলরাউন্ডার।
কিন্তু সে দুই ম্যাচে নিজের ছাপ রাখতে পারেননি রফিক। মিরপুরে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে মোটে ১৪ রান (০ ও ১৪) রান করার পর দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০ রান করতে পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ডাক মেরেছিলেন। উইকেট নিয়েছিলেন ৩টি। দুটি টেস্টেই বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
মাশরাফি বিন মুর্তজা:
এ তালিকায় দীর্ঘদিন কারও নাম যোগ না হলেও ২০১৭ সালে আচমকা ঢুকে যান মাশরাফি। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে কলম্বোয় সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে হুট করে জানিয়ে দেন, এ সংস্করণে এটাই শেষ সিরিজ। বিদায় ঘোষণার পর খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ৫ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকার পর বল হাতে ৩২ রানে দুই উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি। ম্যাচটাতে ৬ উইকেটের হার সঙ্গী হয়েছিল বাংলাদেশের।
একই ভেন্যুতে ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রানের খাতা খোলার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন মাশরাফি। পরে বল হাতে ৩০ রানে ১ উইকেট নেন তৎকালীন জাতীয় দলের অধিনায়ক। সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে (৩১ বলে ৩৮ রান ও ২৪ রানে ৩ উইকেট) বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছিল ৪৫ রানে।
সাকিব আল হাসান:
অবসর ঘোষণার পর খেলতে নামাদের তালিকায় সাকিবের নামটা যোগ হয়েছে কয়েকদিন আগে। লাল বলের ক্রিকেটে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত একটা টেস্ট খেলেছেন সাকিব। কানপুরে বৃষ্টি বিঘ্নিত সে ম্যাচে ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে ৯ রান করেছেন (৯ ও ০) সাকিব। পরে বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে থেকেছেন উইকেটশূন্য। বৃষ্টি ও ভেজা মাঠের কারণে আড়াই দিন ভেস্তে যাওয়া এ টেস্টটা ভারত পঞ্চম দিনে জিতে নিয়েছে ৭ উইকেটে।