১৪১ বলে ১৭ চার ৪ ছক্কায় ১৪০ রান – অ্যাডিলেইড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পাশাপাশি ট্রাভিস হেডের কাছেই হেরে গেছে ভারত। শুধু রান করার জন্যই নয়, রান করার ধরনেও ভারতের বোলারদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
শুধু এই টেস্টই তো নয়, এর আগে ভারতের বিপক্ষে বড় ম্যাচগুলোকেই জ্বলে ওঠার উপলক্ষ বানিয়ে নিয়েছেন হেড। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে কিংবা তার আগে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও হেডের দাপট দেখেছে ভারত। তা দুই দলের টেস্ট এখন যতটা আলোড়ন তোলে, এসব ম্যাচে হার কিংবা জয় যেভাবে বিশ্লেষণের তোড়ে ভাসায়, অ্যাডিলেইড টেস্টের পর হেডকে নিয়ে তাই নানামূখী আলোচনা তো হওয়ারই কথা।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক টিম পেইন এমন এক বিশ্লেষণ নিয়ে এসেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার কোচের বদলের সঙ্গে হেডের ব্যাটিংয়ে বদলের সম্পর্ক নিয়ে। পেইনের চোখে, আগের কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার চেয়েছিলেন হেডের ব্যাটিংয়ের ধরন বদলাতে। কিন্তু বর্তমান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স নিজের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন হেডকে, সে কারণেই হেড এমন দাপুটে হয়ে দেখা দিতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে পেইনের।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়াবিষয়ক পডকাস্ট ‘এসইএন ব্রেকফাস্টে’ পেইন বলেছেন, ‘মনে হয় না ওদের দুজনের কেউই (হেড ও ল্যাঙ্গার) আমি এটা বললে মনে খারাপ করবে, তবে আমার মনে হয় ও (হেড) এবং জেএল-এর (জাস্টিন ল্যাঙ্গার) মধ্যে মতের অনেক অমিল ছিল।’
সেটা কীরকম? ব্যাখ্যায় পেইন বলেছেন, ‘ধারাভাষ্যে টেস্টের সব কিংবদন্তিরা তো ছিলেনই, একজন টেস্ট গ্রেট (ল্যাঙ্গার) আপনাকে কোচিং করাচ্ছেন, ব্যাটিং কোচ হিসেবে তখন ওকে (হেড) পরামর্শ দিচ্ছিলেন ১০১টি ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি করা গ্রায়েম হিক। তাঁরা সবাই খুব করে চেষ্টা করছিলেন ওর ডিফেন্স নিয়ে কাজ করতে। ও এভাবে খেলতে চাইত না, কিন্তু তখন ও মাত্রই টেস্ট দলে ঢুকেছে, সবাইকে মুগ্ধ করে টেস্ট দলে টিকে থাকার চেষ্টা করছিল। তখন তাই ও সবার মন জেতার চেষ্টা করছিল।’
কিন্তু নতুন কোচ ম্যাকডোনাল্ড আর অধিনায়ক কামিন্স আসার পর হেডকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পেইন বললেন, ‘আমার মনে ওর খেলায় বড় পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে সেটিই, কারণ ও এখন যেভাবে খেলতে চায়, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করে।’
আগ্রাসী এই খেলার ধরনের ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দিয়েও পেইন বললেন, ‘মাঝে মাঝে ও ব্যর্থ হবে, কিছু খারাপ সময় যাবে। তবে ও এমন আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলেই যাবে। নিজের শটগুলো খেলবে, চেষ্টা করবে ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড় হওয়ার। সে কারণেই ওকে সব সংস্করণেই আলো ছড়াতে দেখছি আমরা।’
পেইনের বিশ্লেষণের সূত্র ধরে পরিসংখ্যান ঘেঁটে ল্যাঙ্গারের সময়ে এবং ল্যাঙ্গারের বিদায়ের পরে হেডের ব্যাটিংয়ে পার্থক্যটা সহজে চোখে পড়ে। ২০১৮ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়া দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ল্যাঙ্গার, দায়িত্ব ছেড়ে দেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ল্যাঙ্গারেরই সহযোগী হিসেবে কাজ করা ম্যাকডোনাল্ড এরপর অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্ব নেন। হেডের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি অভিষেক ২০১৬ সালে হলেও টেস্ট অভিষেক হয়েছে ২০১৮ সালেই।
তা ল্যাঙ্গারের কোচিংয়ের সময়ে টেস্টে হেডের স্ট্রাইক রেট ছিল ৫৫.১৬, ম্যাকডোনাল্ডের অধীনে সেটি দাঁড়িয়েছে ৭৮.৬০-তে। যদিও ব্যাটিং গড় কাছাকাছিই – ল্যাঙ্গারের সময়ে ২৩ টেস্টে ছিল ৪৩.১৪, ম্যাকডোনাল্ডের সময়ে ২৮ টেস্টে গড়টা দাঁড়িয়েছে ৪৩.২৫।
ওয়ানডেতে ল্যাঙ্গারের সময়ে ৪২ ম্যাচে হেডের ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ছিল ৩৪.৪০ ও ৯০.০২, ম্যাকডোনাল্ডের সময়ে সেটি ২৭ ম্যাচে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫৯.৬৫ ও ১২১.৬৩।
টি-টোয়েন্টিতেও চিত্রটা একই – ল্যাঙ্গার-যুগে ১৬ টি-টোয়েন্টিতে গড় ছিল ২৬.৫৮, স্ট্রাইকরেট ১৩০.২০। ম্যাকডোনাল্ড-যুগে ২২ টি-টোয়েন্টিতে হেডের গড় ৩৬.৮৫, স্ট্রাইক রেট ১৭৭.৫২।