২০১৮ সালের নির্বাচনেও প্রার্থীতা পেতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন, সেবার হয়নি। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগের হয়ে মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচনে নেমেছেন, এবং জিতেও গেছেন। জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে যায়, ফলে সাকিবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও থেমে গেছে মাস ছয়েক পরই।
একে তো একটা দলের হয়ে নির্বাচনে নামায় ক্রিকেটার হিসেবে সর্বজনীন জনপ্রিয়তা কমেছে, তারওপর সেই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও কিছুদিন না যেতেই থমকে গেছে। আগস্টের পর হত্যা মামলার পাশাপাশি তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে দুর্নীতির মামলায়ও জড়িয়ে গেছেন সাকিব। সে কারণেই প্রশ্ন জাগে, এখন কি সাকিবের মনে হয় যে, রাজনীতিতে যোগ দেওয়াই ভুল ছিল?
ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি সানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছে সাকিবকে। তবে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বারবারই মাগুরার মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা, সিস্টেমকে বদলাতে হলে সেই সিস্টেমের ভেতরে ঢোকার কথা বলেছেন। এ-ও দাবি করেছেন যে, তিনি এখন আবার নির্বাচনে দাঁড়ালে মাগুরার মানুষ তাঁকেই ভোট দিয়ে জেতাবেন। তবে অন্য যাঁরা সাকিবের রাজনীতিতে ঢোকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাদের নিয়ে সাকিবের কথা, তাঁরা যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন। রাজনীতিতে ঢোকার পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত লাভের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলেও জানিয়েছেন সাকিব।
‘দেখুন, ব্যাপারটা হচ্ছে, আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যিনিই রাজনীতিতে যোগ দেবেন, তাঁরটাকেও ভুলই বলতে হবে। ডাক্তার, ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী – যে কারওই রাজনীতিতে যোগ দেওয়া হবে ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দেওয়া তো যেকোনো নাগরিকের অধিকার, যে কেউই সেটা করতে পারে। মানুষ আপনাকে ভোট দেবেন কি না, সেটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় আমার (রাজনীতিতে) যোগ দেওয়া সঠিক ছিল। এখনো বিশ্বাস করি আমি সঠিক ছিলাম, কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা। মনে হয়েছে এভাবে আমি তাঁদের জন্য কিছু করতে পারব’ – সাকিবের ব্যাখ্যা।
মাগুরায় এখনো নির্বাচনে দাঁড়ালে তিনিই জিতবেন বলে বিশ্বাস সাকিবের, ‘..এটাও মনে হয়েছে যে মাগুরার মানুষ আমাকে চেয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি আমার আসনে ভোটটা স্বচ্ছ হয়েছে। এবং আমার মনে হয় না কারও এ ব্যাপারে সংশয় থাকবে যে, আমি যদি আবার (নির্বাচনে) দাঁড়াই তাহলে অন্য কেউ জিতবে। সে কারণে আমি যা করেছি তাতে আমি ভুল কিছু দেখি না। যখন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি, চেয়েছি মাগুরার মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পেতে, মানুষ আমাকে সে সুযোগটা দিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত যেভাবে চেয়েছি সেভাবে তাঁদের জন্য কাজ করার সুযোগ পাইনি, সেটা মেনে নিয়েছি।’
পরিবর্তনের জন্য সিস্টেমের অংশ হয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই – এমনটা তিনি নির্বাচনের আগে-পরে অনেক সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। এবারও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ব্যাখ্যায় সে কথা জানিয়ে সাকিবের যুক্তি, ‘দেখুন, আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ভুল ছিল কি না এ নিয়ে মানুষ যত ইচ্ছা তর্ক করতে পারে। কিন্তু যাঁরা এই তর্কটা করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই আমার এলাকার ভোটার নন। মাগুরার যাঁরা ভোটার, তাঁরা কিন্তু ভিন্নভাবেই দেখেন ব্যাপারটাকে, এবং আমার কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার একটা স্বপ্ন ছিল, তাই আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। (হিসাবটা ছিল) মানুষ আমাকে চাইলে আমাকে ভোট দেবেন, না চাইলে আমাকে ভোট দেওয়ার দরকার নেই। এই তো! আমার নির্বাচনি এলাকার বাইরের মানুষ, যাঁদের চোখে আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়াই ছিল ভুল, তাঁরা কী ভাবছেন, সেটার ওপর ভিত্তি করে আমার আসনে হঠাৎ অনেক পরিবর্তন আশা করলে তো হবে না। আমি এখনো বিশ্বাস করি, আমি যদি আজ আবার নির্বাচনে দাঁড়াই, মাগুরার মানুষ আমাকেই ভোট দেবেন। কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে আমি তাঁদের জন্য কিছু করতে পারব।’
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত লাভের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলেও দাবি সাকিবের, ‘আমার উদ্দেশ্য সৎ ছিল, আর উদ্দেশ্য সৎ থাকলে ঝামেলার কিছু দেখি না আমি। এমন তো না যে ব্যক্তিগত কারণে বা কিছু কামিয়ে নিতে রাজনীতিতে গেছি! আমি গেছি কিছু দিতে, আর সেটা যদি ভুল হয় তাহলে আমি মেনে নেব আমি ভুল ছিলাম।’