বিশাল ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে। সদ্য মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি এই দেশে ব্যবসা করতে চলে আসছেন! এটুকু জানার পর বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে তো আক্কেল গুড়ুম হওয়ার দশা। ট্রাম্প নাকি এরই মধ্যে বাংলাদেশে দোকান খুলেও ফেলেছেন। তাহলে বাসা নিয়েছেন কোথায়?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশে কাঁকড়া ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ইলন মাস্ক ও মার্ক জুকারবার্গকে রেস্তোরাঁ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে ডিএনসিসি।
সংবাদমাধ্যমের দেওয়া খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ করেছে ডিএনসিসি। আর এ সুযোগে ভুয়া তথ্য দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এমন কিছু ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া গেছে।
তা সংবাদমাধ্যমগুলো যা–ই বলুক না কেন, আসল কথা হলো, ঢাকায় ব্যবসা করতে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! সরস টিমের কাজ হলো বিষয়টি নিয়ে একেবারেই অগভীর ও ফালতু একটা অনুসন্ধান করা। আর এই লেখায় সেটিই করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রথমে যেসব প্রশ্ন ওঠে, সেগুলো হলো—ট্রাম্প ব্যবসা করার জন্য দোকান খুলছেন কোথায়? নাকি খুলেই ফেলেছেন? ব্যবসা যদি খুলেই থাকেন, তাহলে থাকছেন ঢাকার কোথায়? কারণ যত যাই টাকা–পয়সার কারবার তো আমেরিকা থেকে হবে না! ব্যবসা–বাণিজ্য আসলে কখনোই দূর থেকে হয় না। ব্যবসায়ী ট্রাম্প কী আর এই বিষয় বুঝবেন না!
খোঁজ নেওয়ার শুরুতেই যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে বাধিত করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে কান পাততেই জানা গেল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ই-ট্রেড লাইসেন্স বের করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর আফতাবনগরে। আবার বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র দেওয়া হয়েছে তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ার। আবেদনে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বরও! পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে আবার একজন চীনা নাগরিকের।
অর্থাৎ, এতটুকু জানা হয়ে গেল যে, ট্রাম্প দোকান খুলেছেন রাজধানীর আফতাবনগরে। একটু মাথা খাটাতেই দুইয়ে দুইয়ে হয়ে গেল চার! কাঁকড়ার ব্যবসা তো এমন জায়গাতেই খুলতে হবে, যেখানে ন্যূনতম খোলা পানির উৎস আছে, নাকি? আফতাবনগরের পাশে যেহেতু মরা হলেও একটা খাল অন্তত আছে, সুতরাং সেখানে ট্রাম্পের দোকান খোলা অস্বাভাবিক কিছু নয়! হ্যাঁ, সেই খালে গন্ধ হয়তো কিছুটা পাওয়া যায়, ময়লাও মেলে। কিন্তু তাই বলে তো আর ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা খারিজ হয়ে যায় না।
এতটুকু বোঝার পরই সরস টিমের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের একেবারেই দূর সম্পর্কের একটি অনির্ভরশীল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। টেলিপ্যাথির মাধ্যমে স্থাপিত সেই যোগাযোগের মাধ্যমে জানা গেল, ট্রাম্প আফতাবনগরে দোকান তো খুলেছেনই, সেই সঙ্গে খালের অপর পাড় অর্থাৎ বনশ্রী’তে দ্বিতীয় শাখা খোলারও পরিকল্পনা নাকি করছেন! বুঝুন অবস্থা, কতটা এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প!
ওই বায়বীয় সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে, ট্রাম্প তেজগাঁওয়েই বাসা নিয়েছেন। আফতাবনগরের দোকান থেকে একটু দূর হয়ে যায় বটে। তবে ট্রাম্প নাকি একটু ভ্রমণ করেই দোকানে আসতে চান। নাহলে নাকি ঠিক জমে না! অবশ্য এক্ষেত্রে একটু ঝামেলা আছে। ট্রাম্প বাড়িওয়ালাকে পুরো টাকা এখনও দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের দেওয়া শেষ চেক নাকি বাউন্স করেছে। তবে ট্রাম্পের লোকেরা এই তথ্য মিডিয়াতে না জানাতে বলে নিশ্চিত করেছে যে, বস্ একটু চাপে আছেন ইউক্রেন নিয়ে। জেলেনস্কি ও পুতিনকে একটু সাইজ করেই তিনি বাকি টাকা শোধ করে দেবেন!
তবে ট্রাম্প নিজেও নাকি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওপর একটু খেপে আছেন। নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি নাকি বলেছেন যে, ‘ব্যবসা করব আমি। ওরা চীনের পাসপোর্ট ব্যবহার করল কেন? ওরা কি জানে না, চীনের সাথে আমার ঝামেলা? আমার কি পাসপোর্ট নেই? চাইলে কি আমি দিতাম না?’ এরপরই নাকি মুখ বেঁকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন ট্রাম্প!
সে যাক গে। ট্রাম্প যা–ই করুন না কেন, আসল কথা হলো কাঁকড়ার ব্যবসা তিনি এ দেশে করছেনই। আপনারা যারা ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ নিতে চান, তারা দয়া করে সিভি তৈরি করতে লেগে পড়ুন। মনে রাখবেন, ভদ্রলোক কিন্তু কম কথার মানুষ। বেশি পাতার সিভি বানালেই চাকরি হবে, এমন নয়। এক্ষেত্রে ধান্দা বোঝাটাই আসল। আর এমন লোকের সংখ্যা আমাদের এই সুজলা, সুফলা, শস্য–শ্যামলায় ঢের আছে। এখন দেশের নাম উজ্জ্বল হলেই হয়!
রম্য থেকে আরও পড়ুন: