সেকশন

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

সব প্রতিবেশীর সঙ্গেই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারতের

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২২ এএম

২০১৪ সালে ক্ষমতায় বসেই নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’। অর্থাৎ, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করাই তাঁর মূলনীতি। আজ ১০ বছর পর দেখা যাচ্ছে, ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সম্পর্কের উন্নতির চেয়ে অবনতিই হয়েছে বেশি। আর সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে সম্ভবত এই চব্বিশেই।

ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত রয়েছে সাতটি দেশের–নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রসীমান্ত। অর্থাৎ, এক লাইনে বলা যায়, মোট নয়টি প্রতিবেশী দেশ রয়েছে ভারতের।

নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার আগে ২০১৪ সালে তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এই নয়টি দেশেরই রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এমনকি চিরবৈরী পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, প্রতিবেশী যেসব দেশের সঙ্গে টুকটাক বৈরিতা রয়েছে ভারতের, তা এই দফায় ঘুচবে হয়তো। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, তার উল্টো ঘটনাই ঘটেছে বেশি।

এ বছরের এপ্রিলে নেপালে অর্থনৈতিক অবরোধ চলছিল ভারতেরই প্রচ্ছন্ন সমর্থনে। তাই নেপালের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। এখনো সে দেশে ভারতবিরোধিতা তুঙ্গে। সহসা নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

এরপর সামরিক, বৈদেশিক ও অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল একটি দেশ ভুটান। এমনকি ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভুটানের বিদেশনীতি পর্যন্ত পুরোপুরি দেখভাল করত ভারত। ২০০৭ সালে চুক্তি নবায়নের পর কিছুটা স্বাধীনতা পেয়েছে ভুটান। সেই ভুটানও এখন চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্ত সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। অর্থাৎ, ভুটান ও ভারতের মাঝে যে ‘দোকলাম’ নিয়ে ঝামেলা রয়েছে, সেটি চীনের কাছে ছেড়ে দিলেই সীমান্ত সমস্যা মিটে যায়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী মূলত দোকলামকে চীনের কাছে ছেড়ে দেওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চীনের প্রস্তাবকেও সরাসরি নাকচ করেনি দেশটি। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ভারতের হাত গলে বেরিয়ে যাচ্ছে ভুটান।

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব একটা সুবিধাজনক নয় ভারতের। ছবি: রয়টার্সআফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব একটা সুবিধাজনক নয় ভারতের। তালেবান সরকারকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতিই দেয়নি ভারত। তালেবান সরকার ভারতের জন্য সরাসরি বিপজ্জনক না হলেও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা ও জয়শ-ই-মুহাম্মদের সঙ্গে আফগানিস্তানের সংযোগ রয়েছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের। কিন্তু এই উদ্বেগ নিরসনে মোদি সরকার ২০২৪ সালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

মিয়ানমারে এখন গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে। ভারত সমর্থিত জান্তা সরকারের কাছ থেকে এরই মধ্যে বহু এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এর মধ্যে ভারতের মণিপুর রাজ্যঘেঁষা মিয়ানমারের ‘চিন’ রাজ্যও রয়েছে। অর্থাৎ, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যও দখলে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা। প্রতিবেশী এই দেশে ভারত কোটি কোটি অর্থ বিনিয়োগ করে রেখেছে। সবই এ বছর প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল।

মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মণিপুর রাজ্যের। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই চার রাজ্যের সামান্তজুড়েই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ঘোষণা দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর দাবি, মিয়ানমার থেকে প্রচুর আফিমচাষী মণিপুরে অনুপ্রবেশ করেছে এবং তারাই মণিপুরের জাতিগত সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।

আর চীনের সঙ্গেও ভারতের দ্বন্দ্ব তো বহু পুরোনো। মূলত তিব্বত সীমান্ত নিয়েই এই দ্বন্দ্ব। এ ছাড়া তিব্বতের নেতা দালাই লামাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া নিয়েও অস্বস্তি রয়েছে চীনের।

ভারত দাবি করে, চীনের সাথে থাকা সীমান্ত ঘেঁষে তাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনের ভেতরে ঢুকে গেছে। চীনের উচিত সেগুলো ফেরত দেওয়া। অন্যদিকে চীন পাল্টা দাবি করে, তাদের অন্তত দুই হাজার বর্গকিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ভারতের ভেতরে রয়েছে।

ভারত ও চীনের সীমান্ত শুরু হয়েছে মূলত ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় লাদাখ থেকে এবং শেষ হয়েছে অরুণাচল প্রদেশে। চীন এই বিশাল অংশকে বলে দক্ষিণ তিব্বত।

তিব্বত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি এই ২০২৪ সালেও দেখা যায়নি। বরং এ বছরের অক্টোবরে পূর্ব লাদাখে ভারত ও চীনের সেনারা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারত-চীন সীমান্তে। পরে অবশ্য দুই দেশই সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেয়।

আর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চিরবৈরী এই দেশের সঙ্গে কখনোই সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি ভারতের। মূলত ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভেঙে পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি দেশ ‍সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই দুটি দেশের বৈরিতার শুরু। সেটি এখনো চলমান। ১৯৪৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। চারটি যুদ্ধই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে।

এ বছর মালদ্বীপের ক্ষমতায় বসেছেন মুহাম্মদ মুইজ্জু। ছবি: রয়টার্সএ বছর মালদ্বীপের ক্ষমতায় বসেছেন মুহাম্মদ মুইজ্জু। তাঁর নির্বাচনী স্লোগানই ছিল–‘ইন্ডিয়া আউট’। তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পরপরই ভারতকে অনুরোধ করেন মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার। ভারত বাধ্য হয়ে সেনা প্রত্যাহার করে। এ ছাড়া মালদ্বীপের প্রথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম সফরে ভারত যাওয়া। কিন্তু মুইজ্জু দীর্ঘদিনের সেই প্রথাটিও ভেঙেছেন। তিনি প্রধামন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম তুরস্ক সফরে গেছেন। এরপর তিনি চীন সফরে যান। প্রবলভাবে চীনপন্থী মুইজ্জুর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের যে উন্নতি হবে না, তা হলফ করেই বলা যায়।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় এতদিন রাজাপক্ষে সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছে ভারত। কিন্তু সেখানেও ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেছেন বামপন্থী অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক। তাঁর রাজনীতির পাঠ শুরু হয়েছিল চীনা বিপ্লব দিয়ে। দিশানায়েক চীনের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। ফলে শ্রীলঙ্কায় এখন ভারতের বদলে চীনের প্রভাব বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রীলঙ্কাও ভারতের হাত ফসকে বের হয়ে গেল এই দফায়। মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তামিল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আর দিশানায়েক তো আগেই বলে দিয়েছেন, তিনি শ্রীলঙ্কায় গৌতম আদানির বায়ুশক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করবেন। কারণ, তা শ্রীলঙ্কার ‘জ্বালানি সার্বভৌমত্বের’ বিরোধী। এই প্রকল্পের আকার কম নয়, ১০ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে যা বোঝা যাচ্ছে, রনিল বিক্রমাসিংহের সময় ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কা আর ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ইকোনমিক পার্টনারশিপ ভিশন’-এর ভবিষ্যৎ এখন পুরোটাই অনিশ্চিত।

সবশেষে বলা যায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক স্থিতিশীল ছিল। কিন্ত গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ও সরকার ব্যবস্থায় পটপরিবর্তনের ফলে ঢাকার সঙ্গেও দিল্লির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়া সীমিত করে দিয়েছে। ফলে চিকিৎসা, বিনোদন, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকাংশে ব্যহত হয়ে পড়েছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি দূতাবাসে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সবমিলিয়ে বিশ্লেষকেরা এখন বলছেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতেই কি এমন কিছু গুরুতর ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটেছে, যার কারণে একের পর এক প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে?

তথূসূত্র: দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে, বিবিসি, এএফপি ও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ কী বলেছেন শুনুন। তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও সাধারণ অরওয়েলীয় ফ্যাশনের (১৯৮৪ বইয়ে লেখক জর্জ অরওয়েল বর্ণিত পরিবেশ) মতো করে তিনি...
দক্ষিণ এশিয়ার এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া পাকিস্তান তার সামরিক বাহিনীর জন্য ৮১ শতাংশ অস্ত্র কেনে চীন থেকে। গত ৫ বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। আর ভারত? ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় অস্ত্রক্রয়কারী দেশ। দেশটি...
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ...
এশিয়ার অনেক দেশ এখনো ব্যাংকে অর্থ রাখার চেয়ে অল্প অল্প সোনা কেনাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে। এই অঞ্চলের অনেক দেশেই পেনশন ব্যবস্থা নেই, বা থাকলেও তা অপ্রতুল। ফলে তারা সোনাকে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা মনে...
নরসিংদীর পলাশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করাসহ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মেয়র প্রত্যাশী বিএনপি নেতা ফজলুল কবির জুয়েলের ওপর হামলা করে তাঁকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের...
ঘটনাস্থলে ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সংবাদদাতা বলেছেন, ‘স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়। কোনো স্থাপনায় আঘাত করার আগেই ড্রোনটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।’
পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি সম্প্রতি জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কাউকে নিজ দলে নিতে চান না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি একই সঙ্গে বলেছেন, যারা ভালো মানুষ তাদের তারা বাদও দেবেন না।
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.