এই টিমোথি শ্যালামে, তিনি যে বয়সেরই হোক, তাঁর সাহস আছে! কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন যে, তিনি বব ডিলানকে এভাবে তুলে ধরবেন? অন্তত আমি এতটা আশা করিনি! তিনি ডিলানের গান কতটা নিঁখুতভাবে গাইতে পারবে? এত একটা-দুটো না, ‘আ কমপ্লিট আননোন’ নামের ১২১ মিনিটের ছবিতে ৪০টি গান গেয়েছেন, বাজিয়েছেন! তাঁর অভিনীত ‘ডুন’ ও ‘ওঙ্কা’ সিনেমা দুটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এবার যেন সেগুলোকে তুড়িতে উড়িয়ে দিয়েছেন।
সত্যি কথা বলতে, আ কমপ্লিট আননোন বেশ উপভোগ্য! এই নতুন ডিলান চমৎকার! সত্যিই, বব ডিলান নিজেই যেন তাঁর জীবনে ফিরে এসেছেন। তাঁর গানগুলোই যেন চিত্রপটে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এক কথায়, এটি ডিলানের প্রতি শ্রদ্ধার একটি মূল্যবান সংযোজন।
সিনেমার শুরুতে আমরা দেখি এক সাধারণ শহরের একটি তরুণ বব ডিলান, যিনি সুরের নেশায় মগ্ন। গল্প শুরু হয় ঠিক তখনই, যখন ডিলান বুঝতে পারে সংগীত তাঁর জন্য এক নতুন জীবনপথ। সিনেমার নির্মাণ শৈলী এতটাই প্রাঞ্জল, যেন ডিলানের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দী হয়ে যায়।
সময়ের অগ্রগতি খুব সূক্ষ্মভাবে চিত্রিত হয়েছে। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট শট থেকে রঙিন জীবনে প্রবাহিত হওয়া—এই পরিবর্তনগুলো সিনেমাকে এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে ঠেলে দেয়। ১৯৬০ এর দশকের রাজনীতি, সামাজিক আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলো সিনেমায় ছড়িয়ে পড়েছে। ডিলানের গান ছিল বিক্ষোভের এক প্রতীক, যা সেই সময়ের মানুষের হৃদয়ে সাহস জুগিয়েছিল।
ডিলানের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতার মাঝে এক ধরনের প্রাণবন্ততা আছে। তাঁর চোখের অভিব্যক্তি, সুরের প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ, আর জীবনের প্রতি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিভঙ্গি—এসবই যেন ডিলানের মনোজগতের একটি মূর্ত প্রতীক।
ডিলানের জীবনে নারীদের অবদান বিশেষভাবে চিত্রিত হয়েছে। তাঁরা তাঁর জীবনে সৃষ্টির উৎস, এবং সিনেমায় তাদের উপস্থিতি ডিলানের মানবিক দিকগুলোকে তুলে ধরেছে। ডিলানকে তাঁর সংগীতের স্রষ্টা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে এই নারীদের অবদান অনেকটা অদৃশ্য কিন্তু দৃঢ়।
এবার আসি সিনেমার সংগীতের দিকে। ডিলানের গানের সুর, কথা, আবেগ—সবই যেন দর্শককে এক অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়। ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ গানটি, যেখানে মানবাধিকার আর শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠে—সেই দৃশ্যায়ন একদিকে যেমন অবিস্মরণীয়, তেমনই আমাদের হৃদয়ে এক অদৃশ্য প্রতিধ্বনি রেখে যায়।
আ কমপ্লিট আননোন শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা। ডিলানের গানের সুর আমাদের হৃদয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়, যেন আমরা তাঁর সঙ্গে এক হয়ে যাই। সিনেমাটি একদিকে যেমন শিল্পীকে বড় করে দেখায়, তেমনি তাঁর সংগ্রাম, অজ্ঞাতত্ব আর জনপ্রিয়তার দ্বন্দ্বের মাঝে দাঁড়িয়ে এক জটিল ছবি ফুটিয়ে তোলে।
এছাড়া, ডিলানের জীবনে যাদের ভূমিকা ছিল, যেমন তাঁর ম্যানেজার আলবার্ট গ্রসম্যান, সংগীত সমালোচক রবার্ট শেলটন—এইসব চরিত্রগুলো সিনেমার মধ্যে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। এতে পিট সিগারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এডওয়ার্ড নরটন, সিলভিয়ে রুশো হয়েছেন এলে ফ্যানিং।
এদিকে, শ্যালামে নিজেই প্রায় ৪০টি গান গেয়েছেন, গিটার বাজিয়েছেন—এটি সিনেমাটির কাছে এক চ্যালেঞ্জ। এটির জন্য তিনি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রাপ্য। তবে, ডিলানোলজি সম্পর্কে অজানা দর্শকদের কাছে কিছু দৃশ্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
শেষে বলতেই হয়, জেমস ম্যানগোল্ড পরিচালিত আ কমপ্লিট আননোন ডিলানের প্রতি একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য। এটি তাঁর জীবন ও সৃষ্টির প্রতি সুবিচার।