নন্দিত লেখক-চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই গল্পের জাদুকর। অজস্র গল্প-উপন্যাস, টেলিভিশন নাটক, আর কিছু চলচ্চিত্র ও গানের মাঝেই বেঁচে রয়েছেন তিনি।
ব্যক্তিজীবনে খুব বেশি সংখ্যক গান না লিখেও গীতিকার হিসেবে শ্রোতাদের কাছে সমাদৃত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর পরিচালিত ৫টি সিনেমার সংগীতপরিচালক হিসেবে ছিলেন মকসুদ জামিল মিন্টু। সেই সিনেমাগুলো হলো ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দুই দুয়ারী’ ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
এসব ছবির অনকে গানই মানুষের মুখে মুখে। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় শ্রাবণ মেঘের দিন সিনেমার ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ গানটি।
এটি তৈরির অজানা গল্প শেয়ার করে এক সাক্ষাৎকারে মকসুদ জামিল মিন্টু বলেন, ‘‘হুমায়ূন আহমেদ ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ গানটা প্রথমে এমনিতেই লিখেছিলেন। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির জন্য লেখেননি কিন্তু। তিনি একদিন আমাকে গানটা সুর করতে বললেন। মাঝে কয়েকদিন কেটে গেছে। গানটি সুর করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।’’
যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা সম্ভবত ১৯৯৮ সালের দিকের কথা। একদিন শান্তিনগরের ‘সাসটেইন’ রেকর্ডিং স্টুডিও থেকে ফোন এলো। আমাকে বলা হলো, হুমায়ূন স্যার এসেছেন আপনি কোথায়? আমি বললাম, তিনি কেন এসেছেন? আমি ভুলেই গিয়েছিলাম গানটির কথা। সেদিন গানটি রেকর্ড করার জন্য স্টুডিও বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। এদিকে গানটির সুর করা হয়নি। কী করি, কী করি ভাবছিলাম! পকেটে রাখা গানটি খুঁজে পেলাম। স্টুডিওতে এসে দেখি গানটির কণ্ঠশিল্পী সুবীর দা (সুবীর নন্দী) বসে আছেন। আমার খুব মন খারাপ হচ্ছিল গানটির কথা ভুলে যাওয়ার কারণে।’’
‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ গানটি গেয়েছিলেন প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী। এ বিষয়ে মকসুদ জামিল মিন্টু বলেন, ‘পরে স্টুডিওতে বসেই এক লাইন এক লাইন করে পুরো গানটি সুর করি। সুবীর দা সেদিনই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। চোখ বন্ধ করলেই সেদিনের স্মৃতিগুলো দেখতে পাই।’
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া শ্রাবণ মেঘের দিন ছবির এই গানের জন্য সুবীর নন্দী এবং সুর ও সংগীত পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন মকসুদ জামিল মিন্টু।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে প্রায় ২১ বছর কাজ করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু। এই সংগীত পরিচালক বলেন, ‘‘আমি যেহেতু গান করি তাই গান নিয়েই বলি। হুমায়ূন আহমেদ একজন বড়মাপের গীতিকার ছিলেন। মানুষের ভেতরের অব্যক্ত কথা তিনি বুঝতে পারতেন। তার পরিচালনায় শেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ জন্য গান করেছিলাম। গানটি হলো ‘বাজে বংশী, রাজহংসী নাচে হেলিয়া দুলিয়া’। প্রথমে গানের একটি লাইন লিখে ফোনে বলেছিলেন। পরে পুরো গানটি লিখেন তিনি। গান সুর করার আগে তিনি গানের দৃশ্য বুঝিয়ে দিতেন।’’
চলচ্চিত্রের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। পাশাপাশি গানও লিখেছেন বেশ কিছু। এর মধ্যে রয়েছে ‘যদি মন কাঁদে’, ‘লিলুয়া বাতাস’, ‘চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে’, ‘আমার আছে জল’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’, ‘মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ’, ‘বরষার প্রথম দিনে’ প্রভৃতি।