জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পরিবেশ বিধ্বংসী সকল কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জোর দাবি জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
আজ মঙ্গলবার বেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একটি যথাযথ ও পরিবেশবান্ধব মাস্টার প্ল্যান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পরিবেশ বিধ্বংসী সকল কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জোর দাবি জানিয়ে চিটি দেওয়া হয়েছে। একইসাথে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণসহ ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসকল বন ও বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে তা নিরূপণসাপেক্ষে একই প্রজাতির বৃক্ষ দ্বারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্ষতিপূরণ বনায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে এ পত্রের মাধ্যমে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গাণিতিক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষদের ডিন বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ ও বিপন্ন বন্যপ্রাণীসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছর শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো অতিথি পাখিতে পূর্ণ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি অতিথি পাখির ক্যাম্পাস হিসেবেও খ্যাত। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এক গবেষণায় দেখা গেছে বিগত ৩৫ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ৪০ শতাংশ জলাশয় হারিয়ে গেছে এবং প্রায় ২৬.৫ শতাংশ গাছপালা বেষ্টিত আবরণ সংকুচিত হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। ফলশ্রুতিতে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে এখন আর অতিথি পাখি আসে না বললেই চলে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘‘সম্প্রতি দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও উপড়ে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী গত ৩০ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে যার বেশির ভাগই সেগুনগাছ। এ ছাড়া কাঁঠালগাছ রয়েছে কয়েকটি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকদের নিয়ে গঠন করা বায়োডাইভারসিটি ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট টিম ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক মহোদয়কে প্রস্তাবিত সাইটে মাঠ পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রমের একটি রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৩০ জুন যেই সাইটে গাছ কাটা হয় সেখানে ভবন নির্মাণ করা হলে ২৮টি প্রজাতির ২০৫৫ টি উদ্ভিদ কাটা পড়বে এবং ২.৩৮ বৈচিত্র্য ইন্ডেক্সের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে পারে যা নিঃসন্দেহে অত্র এলাকার জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।’
বেলা জানায়, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প' এর আওতায় সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নির্মাণের অজুহাতে নির্বিচারে বনাঞ্চল নিধন করছে। এ প্রকল্পটি নগর পরিকল্পনাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় লেক ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন কমিটির কোন মতামত গ্রহণ না করেই চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের প্রণয়নকৃত মাস্টার প্ল্যানটি কার্যত বাতিলই করে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গৃহীত এ প্রকল্পের নেই কোন আলাদা অনুমোদিত মাস্টার প্ল্যান। লে-আউট প্ল্যানকে মাস্টার প্ল্যান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৩১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইলেও ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি একনেক থেকে ১৪৪৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পায় যা পূর্বের চাহিদার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘ইতোপূর্বে গত ২০ এপ্রিল এ পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনে ভবন নির্মাণের জন্য টিনের বেড়া দিয়ে গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না করে ভবন নির্মাণে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে বিষয়টি স্থগিত করা হয়।’
গতবছরের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), টিআইবি, ব্লাস্ট ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও সংগঠন 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে একটি পত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক, জীব বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক অনুষদ ও চারুকলা বিভাগের সভাপতি ও ডিন বরাবর প্রেরণ করে।