সেকশন

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
Independent Television
 

বেশি বয়সের যে অসুখে পুরুষেরা আক্রান্ত হয় বেশি

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৮ এএম

মাল্টিপল মায়েলোমা এমন এক ধরনের রক্তের ক্যানসার, যা প্লাজমা সেল নামের বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন থেকে হয়। এই রোগে অস্বাভাবিক প্লাজমা সেলগুলি অস্থিমজ্জাতে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষতিকর প্রোটিন (M-Protein বা Paraprotein) নিঃসরণ করে। এই প্রোটিনগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কাদের হয়?

মাল্টিপল মায়েলোমা একটি বিরল কিন্তু অপেক্ষাকৃত গুরুতর রক্তের ক্যানসার। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার নতুন মায়েলোমা কেইস সনাক্ত হয়।

এটি মূলত বয়স্কদের অসুখ। ৯০ শতাংশ রোগীর বয়স সাধারণত ৫০ বছরের উপরে থাকে। তবে, গড় বয়স (৬৫-৭০ বছর) থাকে। তরুণদের মধ্যে এই রোগ হবার প্রবণতা কম। আবার ৪০ বছরের নিচে এই রোগের হার ২ শতাংশের কম। পুরুষরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। মহিলাদের তুলনায় ১.৫ গুণ বেশি দেখা যায়।

মাল্টিপল মায়েলোমা কেন হয়?

এ রোগের সঠিক কারণ অজানা। তবে জেনেটিক মিউটেশন, রেডিয়েশন, রাসায়নিক দুষণ, কারখানার বর্জ্য, কৃত্রিম রঙ, কীটনাশক ইত্যাদির প্রভাব থাকতে পারে। এছাড়া বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা ইত্যাদি এই রোগের  ঝুঁকি বাড়ায়। 

এইরোগের জটিলতাসমূহ:

অস্থি মজ্জার কার্যকারিতা বিঘ্নিত হয়:

অস্বাভাবিক প্লাজমা সেল অস্থিমজ্জার স্বাভাবিক কোষগুলিকে (লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা) দমন করে রাখে।  যার ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা, ইনফেকশন, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ  ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হাড়ের ক্ষয়:

মায়েলোমা কোষগুলি অস্টিওক্লাস্ট বা হাড় ভাঙার কোষগুলোকে সক্রিয় করে এবং অস্টিওব্লাস্ট বা হাড় গঠনের কোষগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে। যার ফলে হাড়ের ক্ষয় বা Lytic Lesions হয়। বিশেষ করে মেরুদন্ডের হাড়, খুলি, পাঁজর ও অন্যান্য স্থানে। তখন হাড়ে প্রচন্ড ব্যথা হয়৷

হাড় থেকে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম রক্তে মিশে রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার ফলে  কিডনি রোগের জটিলতা , কনফিউশন, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কিডনি রোগ  বা Renal Damage:

M-প্রোটিন (বিশেষ করে লাইট চেইন) কিডনির নেফ্রনে জমে কাস্ট গঠন করে। ফলে কিডনি ফেইলিওর বা ইনজুরি হয়। এছাড়া রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ডিহাইড্রেশন কিডনির ক্ষতি ত্বরান্বিত করে।

ইমিউন সিস্টেম অকার্যকর বা দুর্বল হওয়া:

স্বাভাবিক ইমিউনোগ্লোবুলিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি (যেমন–ফুসফুসের ইনফেকশন, প্রসাবের ইনফেকশন) ইত্যাদি বাড়ে।

অন্যান্য জটিলতা:

হাইপারভিসকোসিটি সিনড্রোম বা রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ায় কিছু কিছু উপসর্গ (যেমন: মাথা ঝিমঝিম করা, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা) ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

এছাড়া অ্যামাইলয়েডোসিস বা অস্বাভাবিক প্রোটিন জমে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

রোগের লক্ষণ সমুহ:

মাল্টিপল মায়েলোমা একটি ধীর গতির ক্যানসার, যার লক্ষণগুলি প্রায়ই অন্যান্য সাধারণ রোগের মত, যেমন: ব্যথা, দুর্বলতা, ক্লান্তি ইত্যাদি । তাই সতর্ক থাকা জরুরি। 

অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা:

অস্থি মজ্জায় অতিরিক্ত প্লাজমা সেল জমার কারণে স্বাভাবিক রক্তকণিকা কমে যায়। ফলে এনিমিয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা যায়।

হাড়ের ক্ষয়:

অস্টিওক্লাস্ট সক্রিয় হওয়ার ফলে বুকে, পিঠে বা পাঁজরে তীব্র ব্যথা হয়।  ফ্রাকচার পর্যন্ত হতে পারে।

M-প্রোটিন কিডনিতে জমে কিডনি ফেইলিউর বা ইনজুরি হতে পারে। ফলে প্রস্রাব কমে যাওয়া, ফোলা পা, দুর্বলতা  ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

ঘনঘন ইনফেকশন ও জ্বর হতে পারে। অস্বাভাবিক প্লাজমা সেল স্বাভাবিক ইমিউনিটি নষ্ট করে, যার ফলে ফুসফুসের ইনফেকশন, প্রসাবের ইনফেকশন ইত্যাদি হতে পারে।

অন্যান্য লক্ষণসমুহ:

১. ওজন কমা ও ক্ষুধামন্দা।

২. স্নায়বিক সমস্যা (হাত-পায়ে ঝিনঝিনি/দুর্বলতা)।

৩. হাইপারক্যালসেমিয়া বা রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, যার ফলশ্রুতিতে প্রচণ্ড তৃষ্ণা, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, কনফিউশন ইত্যাদি হতে পারে।

মাল্টিপল মায়েলোমাজনিত যে ব্যাথা আমাদের দেশে তাকে সাধারণভাবে ‘বাতের ব্যথা’ ভেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে চলে। এতে করে পেটের আলসার এবং কিডনি রোগের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে রোগটি আরো জটিল হয়ে পড়ে।

শারীরিক দুর্বলতাকেও অনেকসময় ‘বয়সের স্বাভাবিক সমস্যা’ বলে উপেক্ষা করা হয়। নিম্নের লক্ষণগুলো থাকলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:

১.  অবিরাম হাড়ের ব্যথা (বিশেষ করে রাতে)।

.  রক্তস্বল্পতা  বা অকারণে ক্লান্তি।

৩.  ঘনঘন  ইনফেকশন (বছরে ৪-৫ বার)।

৪.  প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা শরীরে ফোলাভাব।

এই রোগের পরীক্ষাসমুহ

⦁ রক্তের সিবিসি (CBC)।

⦁ সিরাম প্রোটিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস (SPEP)।

⦁ M-প্রোটিন  বা Monoclonal Protein শনাক্ত করার প্রধান টেস্ট। 

⦁ মায়েলোমা রোগীদের রক্তে এক ধরনের অস্বাভাবিক ইমিউনোগ্লোবুলিন বেড়ে যায়।

⦁ ইউরিনারি প্রোটিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস (UPEP)।

⦁ ইমিউনোফিক্সেশন ইলেক্ট্রোফোরেসিস (IFE)।

সিরাম ফ্রি লাইট চেইন (sFLC) পরীক্ষা:

বোন ম্যারো পরীক্ষা (Bone Marrow Biopsy)।

ফ্লো সাইটোমেট্রি এবং সাইটোজেনেটিক্স টেস্ট করে ক্যানসার সেলের জিনগত বৈশিষ্ট্য দেখা হয়।

অন্যান্য পরীক্ষা:

⦁ Bence Jones প্রোটিন (ফ্রি লাইট চেইন) শনাক্ত করা হয়, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

⦁ এক্স-রে (X-ray) skull: হাড়ের ক্ষয় (Lytic Lesions) দেখা হয়।

⦁ MRI বা PET-CT।

⦁ β2-মাইক্রোগ্লোবুলিন (রোগের প্রোগনোসিস বুঝতে করা হয়)।

⦁ S. LDH, S. Creatinine, S. Albumin ইত্যাদি টেস্ট করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের স্টেজ ও রোগীর স্বাস্থ্যের উপর। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

⦁ টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি।

⦁ কেমোথেরাপি।

⦁ স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট।

সহায়ক চিকিৎসা

⦁ বিসফসফোনেট (হাড়ের ক্ষয় রোধে, যেমন Zoledronic Acid)।

⦁ পেইন ম্যানেজমেন্ট ও ফিজিওথেরাপি।

জীবনযাপন ও প্রতিরোধ:

১. ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

২. ভিটামিন D ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।

৩. নিয়মিত ফলো-আপ করানো (রক্ত পরীক্ষা, ইমেজিং) ইত্যাদি)।

সচেতনতাই পারে জীবন বাঁচাতে। মাল্টিপল মায়েলোমা জটিল হওয়ার আগেই সনাক্ত হলে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সফলতা পাওয়া যায়। সময়মত চিকিৎসা পেলে রোগীরা স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করতে পারে।

লেখক: সহকারি অধ্যাপক, রক্তরোগ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (পিজি হাসপাতাল)

ইনহেলার এবং ওষুধ হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকেরা রিলিভার ইনহেলার (লক্ষণগুলি থেকে তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য) এবং কন্ট্রোলার ইনহেলার (দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনার জন্য) লিখে দিতে...
আমাদের প্রায় প্রতিদিন কম্পিউটারের স্ক্রিন দেখে কাজ করতে হয়। এতে চোখের ক্ষতি হয় বেশি। সাধারণভাবে লেখা পড়তে যদি চোখ ছোট করে দেখতে হয় বা মোবাইলে কিছু পড়তে কাছে আনতে কিংবা দূরে নিতে হয় তাহলে বুঝতে হবে...
হাঁপানি বা অ্যাস্থমা শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। হাঁপানি হলো শ্বাসনালির এক ধরনের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া। বংশানুক্রমিকভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয় সন্তান। এ ছাড়া যাদের শ্বাসনালি খুবই...
এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে যতই গরম বাড়বে, ততই শরীরে নানা ধরনের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমের কারণে পানিশূন্যতা এবং স্ট্রেসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ঠান্ডা, হাইড্রেটিং এবং...
পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ —এমন ব্যতিক্রমী স্লোগান নিয়ে ঈদুল আজহায় মুক্তি পাচ্ছে নতুন সিনেমা 'উৎসব'। তানিম নূরের পরিচালনায় এই সিনেমায় কাজ করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা একঝাঁক অভিনয়শিল্পী। ১৩ মে...
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন চাঁদাবাজি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। আজ বুধবার ফেসবুকে নিজের...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.