আধুনিকতা মানে অনেকে মনে করেন পশ্চিমা ধারার সঙ্গে গা ভাসানো। কিন্তু এটি একইসঙ্গে পুরোনোকে নতুন রূপে ফিরয়ে আনাও। ২০২৪ সালে পুরোনো ফ্যাশন নতুন রূপে ধরা দিয়েছে ফ্যাশনিস্তাদের কাছে। পুরোনো এমন কিছু ফ্যাশন ট্রেন্ডের কথাই এখানে উল্লেখ করা হলো–
ওভারসাইজড ফ্যাশন: জেন‑জিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওভারসাইজড ফ্যাশন। ১৯৮০-৯০ এর দশকে এ ধরনের পোশাকের চল ছিল। ২০২৪ সালে সেই ফ্যাশন যেন আবারও ফিরে এসেছে। বড় মাপের শার্ট, টি-শার্ট, হুডি বা প্যান্টের মতো পোশাকগুলো একদিকে যেমন আরামদায়ক, অন্যদিকে স্টাইলিশও বটে। জেন‑জি বা তরুণেরা ফ্যাশনপ্রেমীরা হালকা ঢিলেঢালা পোশাকই বেশি পছন্দ করছে। কারণ, এসব পোশাক স্টাইলের পাশাপাশি আরাম নিশ্চিত করে।
ডেনিম ট্রেন্ড: ডেনিম এখনকার ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে বেশ আগ্রহের বিষয়। বিশেষ করে ডেনিম জ্যাকেট, ডেনিম প্যান্ট ও শার্ট। বলা যায় ২০২৪ সালে আবার ফ্যাশনের মঞ্চে প্রতাপের সঙ্গে ফিরে এসেছে ডেনিম। ফ্যাশনে ডেনিমের আবির্ভাব হয় মূলত গত শতকের পঞ্চাশের দশকে, ঠিক যখন লেদার জ্যাকেটের আবির্ভাব হয়। ডেনিম বলতে অনেকে অবশ্য মনে করেন জিন্স। কিন্তু জি্স আসলে ডেনিম ফেব্রিক থেকে বানানো প্যান্ট। সহজভাবে বললে, সব জিন্সই ডেনিম, কিন্তু সব ডেনিম জি্স নয়। পুরোনো এই ফেড ডেনিম এবং হালকা ব্লু বা ডার্ক ব্লু ডেনিমের স্টাইলও এখন ট্রেন্ডে রয়েছে।
স্নিকার্স: ২০২৪ সালে কেডস থেকে স্নিকারের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। কারণ, একটু ওভারসাইজড পোশাক বা ঢিলেঢালা প্যান্টের সঙ্গে কেডসের থেকে স্নিকার বেশ মানানসই। ছেলে‑মেয়ে সবাই স্নিকার বেশ পছন্দ করছেন। এই স্নিকারের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কনভার্স কোম্পানি প্রথম স্নিকার তৈরি করেছিল, যার নাম ‘নন-স্কিড’। ১৯৫০-৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল দলগুলো স্নিকার্স জনপ্রিয় করে তোলে। এরপর ফ্যাশন দুনিয়াতেও তার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়।
ফ্লোরাল প্রিন্টস: ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক। বিশেষ করে ইউরোপীয় রেনেসাঁ এবং ভিক্টোরিয়ান যুগে। যখন ফুলের প্যাটার্নের ডিজাইন‑সমৃদ্ধ পোশাক তৈরি করা হতো। তবে ১৯৬০ ও ১৯৭০‑এর দশকে পপ কালচার এবং হিপি মুভমেন্টের সাথে ফ্লোরাল প্রিন্ট আবারও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০২৪ সালে এটি আবার ফিরে এসেছে। বিভিন্ন ধরনের ফ্লোরাল প্রিন্ট যেমন ছোট, বড় ও অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ফ্লোরাল প্রিন্টের ব্যবহার বেশ বেড়েছে বলতে হবে।
ক্রপ টপস: ক্রপ টপস ফ্যাশন ১৯৬০‑এর দশকে হিপি আন্দোলন ও পপ কালচারের মাধ্যমে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছিল। ১৯৮০-৯০ এর দশকে এটি আরও বিস্তৃত ঘটে। ২০০০ সালের গ্রীষ্মকালীন পোশাক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে তা স্ট্রিট ফ্যাশন, ক্যাজুয়াল স্টাইল ও অফিসওয়্যার হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালে এসে ক্রপ টপস আরও আধুনিক ও স্টাইলিশ ডিজাইনে ফিরে এসেছে। স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এসব পোশাক।
ব্যাগি প্যান্ট: ১৯৮০ দশক ব্যাগি প্যান্ট প্রথমে হিপহপ কালচার ও র্যাপ মিউজিকের সাথে যুক্ত হয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আমেরিকান তরুণরা অনেক সময় এসব ঢিলেঢালা প্যান্ট পরত। এগুলো তাদের চলাচলে আরাম ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করত। ৯০‑এর দশকে এই প্যান্ট সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০০ সাল থেকে এই প্যান্টের কদর কমতে থাকে। প্রায় দুই যুগ পর ব্যাগি প্যান্ট আবার ফ্যাশনে ফিরে এসেছে। তবে এটি আধুনিক স্টাইল ও ডিজাইনের সঙ্গে মিশে নতুনভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে। ব্যাগি প্যান্ট এখন স্ট্রিট ফ্যাশন ও ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে পরা হচ্ছে। এগুলো হাইওয়েস্ট, ডিস্ট্রেসড বা ডিপ ফিট স্টাইলে পরা হয়।
ভিনটেজ জুয়েলারি: ভিনটেজ জুয়েলারির ফ্যাশন শুরু হয় মূলত ১৯২০-এর দশক থেকে। এই জুয়েলারিগুলো ঐতিহ্য, ক্লাসিক ডিজাইন ও গ্ল্যামারের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। আজকাল, এটি ফ্যাশনেবল এবং নস্টালজিক এক্সপ্রেশন হিসেবে তরুণদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।