প্রিন্সেস ডায়ানা থেকে কেট মিডলটন, বিশ্বের আলোচিত নারীদের সাজিয়েছেন যিনি, তাঁর গল্পটা শুরু হয়েছিল এক সাধারণ দিনে ওয়েম্বলিতে।
গত ৪০ বছর ধরে তিনি ছিলেন অনেকটাই পর্দার আড়ালে। তবু তাঁর হাতে তৈরি গয়না নিয়েই বারবার আলোচনায় এসেছেন রাজপরিবারের সদস্যরা। লন্ডনের এই গয়নাশিল্পী গড়ে তুলেছেন এমন সব ডিজাইন, যেগুলো পরেছেন প্রিন্সেস ডায়ানা, কেট মিডলটন থেকে শুরু করে আরও অনেকেই।
সবকিছুর শুরুটা হয় এক অবাক করা মুহূর্তে। ওয়েম্বলিতে লিভারপুলের খেলা দেখতে গিয়ে কিকি ম্যাকডোনা হঠাৎ সামনে এক নারীকে দেখেন। যার কানে দুল, যেটা তাঁর নিজের বানানো। সেই মুহূর্তেই মনে হয়েছিল, ‘তুমি এটা করে ফেলেছো, কিকি।’
সেই কিকি ম্যাকডোনাই এখন বলছেন তাঁর গল্প। কীভাবে রাজপরিবারের পছন্দের গয়নাশিল্পী হয়ে উঠলেন, কীভাবে নিজের স্টাইল ধরে রেখেছেন এত বছর, আর কেন এখনো থেমে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তাঁর।
এই উপলব্ধিই যেন এক যাত্রার সূচনা। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত, কিকি ম্যাকডোনার হাতে তৈরি হয়েছে রাজপরিবারের বহু বিখ্যাত গয়না। প্রিন্সেস ডায়ানার পরা সেই মুক্তা-অ্যামেথিস্ট দুল, কেট মিডলটনের ব্লু টোপাজ, কিংবা সারা ফার্গুসনের এনগেজমেন্ট ছবির গয়না। সবই তাঁর ডিজাইন।
শুরুটা মেফেয়ার থেকে
আশির দশকে এক বন্ধুর অনুরোধে কিকি প্রথম গয়না ডিজাইন করতে শুরু করেন। তখন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। তবে বাবার কাছ থেকে জর্জিয়ান গয়নার প্রতি ভালোবাসা পেয়েছিলেন ছোটবেলায়।
‘তখনকার গয়নার দোকানগুলো ছিল পুরুষদের হাতে, নারীরা নিজের জন্য গয়না কিনতেন না,’ বলছিলেন কিকি। তাই তিনি তৈরি করলেন এমন গয়না, যা গ্ল্যামারাস। কিন্তু প্রতিদিন পরার মতো।
১৯৮৫ সালে খুললেন নিজস্ব দোকান। তখন তাঁর এক জোড়া দুলের দাম ছিল ৯০০ পাউন্ড। যা সে সময়ের জন্য বেশ দামি। সেই দোকানেই হঠাৎ একদিন হাজির হন প্রিন্সেস ডায়ানা।
রাজপরিবারের পছন্দের নাম
ডায়ানার জন্য ডিজাইন করা অ্যামেথিস্ট ও মুক্তার দুল পরে ১৯৯০ সালে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন তিনি। ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়তেই সেটি হয়ে ওঠে সেনসেশন ৪০০ জোড়া বিক্রি হয় খুব অল্প সময়ে।
ডায়ানার পর কেট মিডলটনও কিকির গয়না পরেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। রানি ক্যামিলাও রয়েছেন তাঁর ক্লায়েন্ট তালিকায়।
গয়না নয়, মানুষটাই গুরুত্বপূর্ণ
কিকি চান, গয়না যেন নজর না কাড়ে। বরং গয়না পরা মানুষটির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। তিনি বলেন, ‘গয়না হচ্ছে এমন কিছু, যা মানুষকে সুন্দর অনুভব করায়। ট্রেন্ড নয়, মানুষই মুখ্য।’
এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি সামলেছেন তিনটি মন্দা, লয়েডস ব্যাংকিং সংকট, একটি বিবাহবিচ্ছেদ ও করোনা মহামারির মতো ধাক্কা। তারপরও তিনি থেকে থাকেন নি। ‘অভিযোগ করা আমাকে একদমই পছন্দ নয়,’ বলেন কিকি। ‘সমস্যা থাকবেই, কিন্তু আমার কাজ হলো সমাধান খোঁজা।’
৪০ বছর পূর্তি উদ্যাপন
এ বছর জুনে কিকির ব্র্যান্ড ৪০ বছরে পা রাখছে। সেই উপলক্ষে আসছে ‘রেট্রোস্পেকটিভ কালেকশন’। থাকছে পুরোনো প্রিয় ডিজাইনের নতুন সংস্করণ। যেখানে দেখা মিলবে ডায়ানার দুল, বড় রত্নের রিং এবং রঙিন পাথরের মালা।
নতুন ডিজাইনেও থাকছে তাঁর পছন্দের পাথর—ব্লু টোপাজ, পেরিডট, মর্গানাইট এবং ফায়ার ওপাল। প্রদর্শনী হবে লন্ডনের সাচি গ্যালারিতে। এরপর স্লোন স্কোয়ারের দোকানে। সঙ্গে প্রকাশ পাবে তাঁর স্মৃতিকথা ‘এ লাইফ অফ কালার’। যেখানে থাকবে গয়না ও জীবনের গল্প।
৭০ বছর বয়সেও কিকি ক্লান্ত নন। বরং কাজ করছেন ব্যালে থেকে অনুপ্রাণিত এক নতুন কালেকশন নিয়ে। ভবিষ্যতের স্বপ্ন? ‘রয়্যাল অপেরা হাউসে উশার হয়ে ব্যালে দেখব, বিনা মূল্যে!’ হেসে বলেন তিনি।