অনেকে ভাবতে পারেন অন্দরসজ্জায় আবার কিসের ট্রেন্ড! সেখানে ফ্যাশনের মতো চলতি ধারা কি মানায়? উত্তর, হ্যাঁ। মানায়। পোশাকের যেমন ট্রেন্ড বদলায়, ঠিক তেমনি ঘরের সাজও সময়ের সঙ্গে বদলে যায়। যদিও তা একটু ধীর গতিতে হয়। তাই অনেকেরই নজর পড়ে না।
ছয়ের দশকে জনপ্রিয় ছিল চিন্টজ কাপড়। আর নব্বইয়ের দশকে ছিল একেবারে মিনিমালিস্ট ঘর সাজানোর ধারা। এখন আমরা যখন ২১ শতকের এক চতুর্থাংশ পেরিয়ে এসেছি, তখন প্রশ্ন হলো, ঘর সাজাতে কী বেছে নিলে সেটি সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকবে?
এই ভাবনা থেকেই ভোগ ১০ জন আন্তর্জাতিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে জানতে চেয়েছে, কোন ধারা আসছে? আর কোনটা বিদায় নিচ্ছে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
নতুন ট্রেন্ড হয়ে যা ফিরে আসছে
পর্দা: পর্দা এখন শুধু দরজা-জানালা ঢাকার উপকরণ নয়। বরং হয়ে উঠছে এক ধরনের শিল্পকর্ম। ব্রিজেট রোমানেক বলেন, ‘প্লিটেড বা প্যাটার্নযুক্ত, এমনকি বড়সড় ফ্যাব্রিক ইনস্টলেশন যেন ঘরের কাঠামোকে এক নতুন মাত্রা দিচ্ছে।’ হেইডি কাইলার যোগ করেন, ‘ব্যালুন শেড, নানা প্রিন্ট মিশিয়ে ও রঙের খেলা, এখন পর্দায় সবই চলছে।’
আর্ট ডেকো: এই আর্ট ডেকো এখন ফিরছে নতুন রূপে। জেরেমায়া ব্রেন্ট বলছেন, ‘ল্যাকার, ফার্নিচারের শেপ এসব তো আছেই, এবার ডিজাইনাররা মনোযোগ দিচ্ছেন আর্ট ডেকো যুগের লেআউট, মোটিফ ও প্যাটার্নের দিকেও।’
ব্রাউন ফার্নিচার: ইংরেজ ও আমেরিকান প্রাচীন কাঠের ফার্নিচার আবার জনপ্রিয় হচ্ছে। আলফ্রেডো প্যারেডেস বলেন, ‘যারা ঘরে ইতিহাস আর চরিত্র আনতে চান, তাঁদের কাছে এই পুরোনো ধাঁচের আসবাব এখন নতুন করে প্রিয় হয়ে উঠছে।’
ভারডিগ্রিস: সবুজ-নীল ছোপ ছোপ রঙ ভারডিগ্রিস। এখন হালকা অথচ দৃষ্টিনন্দন রঙ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। জেরেমায়া বলেন, ‘এটা যেন একসঙ্গে নিউট্রাল ও রঙিন, আলো, ডেকর বা অ্যাকসেসরিতে এর ব্যবহার বাড়বে।’
ভেলভেট: পূর্বের নরম বোকলে কাপড়কে সরিয়ে এখন মসৃণ ভেলভেট ফিরে আসছে। টিমোথি কোরিগান বলেন, ‘ভেলভেট হোক সেটা কটন, লিনেন বা কাট-প্যাটার্ন, সবই এখন টেক্সচারের জন্য পছন্দের। মানুষ এখন রাফ লিনেন নয়, নরম ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকছে।’
ফ্লেম স্টিচ: সতেরো শতকের আগুনের আঁচের মতো জিগজ্যাগ প্যাটার্ন ফেব্রিক, ওয়ালপেপার আর রাগে ব্যবহার হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। টিমোথি বলেন, ‘এই ডিজাইন পুরোনো ও আধুনিকতার সেতুবন্ধন তৈরি করে, সব বয়সের মানুষের কাছেই আকর্ষণীয়।’
অন্দরসজ্জায় যা আর ট্রেন্ড থাকবে না
অল-হোয়াইট ইন্টেরিয়র: ব্রিজেট রোমানেকের কথায়, ‘আমরা এখন ‘স্টেরাইল’ বা নীরস সাদা ঘরের ট্রেন্ড পেছনে ফেলে দিচ্ছি। মানুষ চায় তাদের ঘর যেন জীবন্ত হয়, ব্যক্তিত্ববহুল হয়। যেখানে এমন জিনিস থাকে যেগুলো ইতিহাস, চরিত্র ও অনুভূতি প্রতিফলিত করে।’
অত্যধিক মিনিমাল ও সমন্বিত সাদা ঘর এখন অনেকের কাছে নির্জীব মনে হয়। ডিজাইনের নতুন ধারায় ঘর বলতে শুধু সাজসজ্জা নয়, বরং সেই ঘর যেন গল্প বলে, যেখানে বৈচিত্র্য ও স্বতন্ত্রতা গুরুত্ব পায়, এই ধারণার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে।
কালো রান্নাঘর: ২০১৮ সালে কার্দাশিয়ানদের মাধ্যমে জনপ্রিয় কালো-সোনালী ব্রাসের রান্নাঘর এখন পুরানো হয়ে যাচ্ছে। টিমোথি কোরিগানের মতে, ‘একটি রান্নাঘর হওয়া উচিত উষ্ণ ও স্বাগতপূর্ণ, ১৯৮০-এর দশকের নাইটক্লাবের মতো নয়।’
অতিরিক্ত কিউরেশন: সোফার নিচে কার্পেট দেয়া, সিলভার কালেকশন রাখা, মার্কেট ঘুরে ভিনটেজ জিনিস খোঁজা, সবই ঘরকে আরও জীবন্ত করে। কিন্তু এই সবই পুরোনো।