ব্যাংকক আর পাতায়া। থাইল্যান্ড মানেই যেন এই দুই শহরের নাম ঘুরে ফিরে আসে। কিন্তু থাইল্যান্ড শুধু গ্ল্যামার আর পার্টির দেশ নয়। পর্যটন এই দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে লুকিয়ে আছে চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অনন্য সংস্কৃতি। যারা শহরের কোলাহল এড়িয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, তাঁদের জন্য রইল থাইল্যান্ডের এমন ৮টি গন্তব্য।
চিয়াং মাই, পাহাড় আর প্রার্থনার শহর
থাইল্যান্ডের উত্তরে অবস্থিত চিয়াং মাই যেন এক আলাদা জগৎ। ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। এই শহরে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির। পাহাড়ে ঘেরা সবুজ বন, হস্তশিল্পের বাজার আর আরামদায়ক সব ক্যাফে।
শান্ত আর হৃদয় ছোঁয়া পরিবেশের জন্য চিয়াং মাই হতে পারে অনেকেরই প্রিয় গন্তব্য। লণ্ঠন উড়ানোর উৎসবে অংশ নেওয়া হোক কিংবা পাহাড়ি ট্রেকিং করে স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন দেখা, সব কিছুতেই আছে মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিজ্ঞতা।
যা মিস করা যাবে না
- দই ইনথানন ন্যাশনাল পার্ক: থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যেখানে মিলবে ঝর্ণা, বন আর চমৎকার ট্রেকিং রুট।
- এলিফ্যান্ট ন্যাচার পার্ক: অবসরপ্রাপ্ত হাতিদের আশ্রয়স্থল, যেখানে পশুদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো যায়।
- ই বা ইয়ি পেং লণ্ঠন উৎসব: হাজারো উড়ন্ত লণ্ঠনে আকাশ ভরে ওঠে, এই দৃশ্য একবার না দেখলে বোঝা যাবে না।
কোহ লান্টা, নিরিবিলি দ্বীপজীবনের ঠিকানা
থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় দ্বীপগুলো হইচই আর ভিড়ে ঠাসা। ঠিক তার উল্টো অভিজ্ঞতা দেবে কোহ লান্টা। এখানে আছে দীর্ঘ প্রশান্ত সৈকত, রঙিন সূর্যাস্ত আর ধীরস্থির এক দ্বীপজীবন।
একটা স্কুটার ভাড়া করে দ্বীপ ঘুরে বেড়ানো, ফাঁকা সৈকতে অলস দুপুর কাটানো কিংবা তুলনামূলক কম দামে বিলাসবহুল রিসোর্টে থাকা। সব মিলিয়ে কোহ লান্টা মানেই নিরিবিলি এক স্বপ্নের ছুটি।
যা মিস করা যাবে না
- কোহ রকের স্নোরকেলিং ট্রিপ: নীল জলের নিচে প্রবালের রাজ্য আর রঙিন সামুদ্রিক প্রাণীদের দেখা মিলবে এখানেই।
- খ্লং নিন সৈকতে সূর্যাস্ত: সমুদ্রের ধারে বসে ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া সূর্য দেখা যেন মনকেও শীতল করে।
- লান্টা ওল্ড টাউন: কাঠের দোতলা বাড়ি, ছোট ক্যাফে আর স্থানীয় দোকানে মিলে যাবে থাই সংস্কৃতির ছোঁয়া।
পাই, যেখানে সময় যেন থেমে যায়
চিয়াং মাই থেকে উত্তরে পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট শহর পাই যেন এক জাদুময় জগৎ। গরম পানির ঝরনা, প্রাকৃতিক ক্যানিয়ন, বাঁশের কুঁড়েঘর, নদীর ধারে অলস দুপুর আর রাস্তার ধারে একের পর এক অভিনব ক্যাফে। সব কিছুতেই আছে ছন্দহীন ছুটির মাদকতা।
যা মিস করা যাবে না
- পাই ক্যানিয়ন: সূর্যাস্তের সময় এই প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন এক চলচ্চিত্রের দৃশ্য হয়ে ওঠে।
- থা পাই হট স্প্রিংস: প্রাকৃতিক উষ্ণ জলে সময় কাটানো মানেই দেহ-মনের আরাম।
- বাঁশের সেতু পেরিয়ে ধান খেতে হাঁটা: নিরিবিলি সবুজে ঢেকে থাকা পথ যেন এক মেঘলা স্বপ্নের জগৎ।
খাও সক ন্যাশনাল পার্ক, প্রকৃতির কোলে এক টুকরো স্বর্গ
চোখ বন্ধ করে ভাবুন, আপনি ভেসে আছেন শান্ত এক হ্রদের ওপর। আর আপনার চারপাশে আকাশ ছোঁয়া চুনাপাথরের পাহাড় ও ঘন সবুজ জঙ্গল। এটাই থাইল্যান্ডের খাও সক ন্যাশনাল পার্কের জাদু।
বিশ্বের প্রাচীনতম রেইনফরেস্টগুলোর একটি এই পার্ক। যেখানে আছে হাইকিং, জঙ্গল ট্রেক, নদীতে সাফারি থেকে শুরু করে পানির ওপর ভাসমান বাংলোতে রাত কাটানোর মতো দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।
যা মিস করবেন না
- চেউ লান হ্রদের জলে ভাসার অভিজ্ঞতা।
- ভাসমান রাফ্ট হাউসে রাতের নিঃসঙ্গতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ।
- বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের সাফারি—হাতি, গিবন বানর বা বিরল পাখি দেখতে পারেন আপনি।
কোহ ইয়াও দ্বীপপুঞ্জ, এক শান্ত স্বর্গ
ফুকেট আর ক্রাবির মাঝামাঝি অবস্থিত হলেও কোহ ইয়াও দ্বীপপুঞ্জ যেন একেবারে অন্য জগত। এখানে জীবন চলে ধীর গতিতে, স্থানীয় মানুষজন অসাধারণ অতিথিপরায়ণ। আর সমুদ্রতট, নির্জন, শান্ত আর অপার সৌন্দর্যে ভরপুর।
যা মিস করবেন না
- ম্যানগ্রোভ বনের ভেতর দিয়ে কায়াকিং।
- লেম হা আদ সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যাস্ত দেখা—এক কথায় মোহময়।
- ঐতিহ্যবাহী থাই রান্নার ক্লাস—স্বাদ আর সংস্কৃতির অনন্য অভিজ্ঞতা।
সুখোথাই, ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক প্রাচীন রত্ন
যারা ইতিহাসে ডুবে থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য সুখোথাই হলো এক অনন্য গন্তব্য। ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসের ভিড় এড়িয়ে চলে আসুন থাইল্যান্ডের প্রথম রাজধানী সুখোথাই-এ। যেখানে ছড়িয়ে আছে বিশাল সব মন্দির, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আর পদ্মফুলে ভরা পুকুর। সবকিছুতেই যেন এক শান্ত, ধ্যানমগ্ন পরিবেশ।
যা মিস করবেন না
- সাইকেল চালিয়ে ঘুরে দেখুন সুখোথাই ঐতিহাসিক পার্ক।
- প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তির ছায়ায় ভোরের আলোয় ছবি তোলার অভিজ্ঞতা। যা আলোকচিত্রীদের জন্য স্বপ্নপুরণ।
ত্রাং, দ্বীপে ঘোরাঘুরি তবে পার্টি নয়
যদি আপনি দ্বীপে ঘোরা পছন্দ করেন কিন্তু পার্টি এড়িয়ে চলতে চান। তাহলে ত্রাং হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা। এখানকার সমুদ্রতট এখনও অনেকটাই অজনপ্রিয়। অর্থাৎ নিঃশব্দ, শান্ত, আর স্বচ্ছ নীল জলে মোড়া। সঙ্গে আছে চুনাপাথরের গুহা আর প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য।
যা মিস করবেন না
- দ্বীপে দ্বীপে ঘোরা, বিশেষ করে কো ক্রাদান ও কো মুক।
- এমেরাল্ড কেভ (পান্না গুহা) অভিযানের রোমাঞ্চ।
মে হং সন, মেঘে ঢাকা পাহাড়ি শহর
থাইল্যান্ডের উত্তরের এক নিভৃত কোণে, পাহাড়, কুয়াশা আর সোনালি মন্দিরে ঘেরা মে হং সন যেন এক স্বপ্নের শহর। ‘সিটি অব থ্রি মিস্টস’ নামে পরিচিত এই জায়গাটি সকাল যেন থাকে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। অফবিট যাত্রা, পাহাড়ি পথ আর প্রকৃতির খাঁটি সৌন্দর্য খুঁজে পেতে চাইলে অ্যাডভেঞ্চারসিকদের জন্য মে হং সনই সেরা ঠিকানা।
যা মিস করবেন না
- সালউইন ন্যাশনাল পার্কের অরণ্য আর নদীপথ।
- আর যদি নভেম্বরে থাইল্যান্ডে থাকেন, তবে একবার ঘুরে আসুন ডই মে ইউ-খোর বুয়া টং ফিল্ডস। যেখানে মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য সূর্যমুখী ফুল ফোটে।