হার্ট অ্যাটাকের পর সিঙ্গাপুর থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে তামিম ইকবাল দেশে ফিরেছেন আগেই, মিরপুরে গত শনিবার আম্পায়ারদের সঙ্গে তাওহীদ হৃদয়ের বাকবিতণ্ডার কাণ্ডে বিতর্কিত আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচও দেখেছেন। তামিমের অসুস্থতার পর থেকে মোহামেডানের অধিনায়কত্ব করা হৃদয়ের ওই কাণ্ড নিয়ে এরপর জল গড়িয়েছে অনেক, এর প্রেক্ষিতেই আজ সকাল থেকে বিসিবিতে ছিলেন তামিম।
সকালে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এরপর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে লম্বা বৈঠকে বসেছেন তামিমসহ অন্য ক্রিকেটাররা। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন তামিম। সেখানে হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ইস্যু নিয়ে তো কথা বলেছেনই, এর পাশাপাশি চলমান ডিপিএলে শাইনপুকুর ও গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচে ফিক্সিংয়ের সন্দেহজাগানিয়া একটি ঘটনা এবং এর আগে বিপিএলে ফিক্সিংয়ের সন্দেহে দশ ক্রিকেটারের নাম সংবাদমাধ্যমে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তামিম। তাঁর চোখে, বিসিবি এভাবে তদন্তের রায় প্রকাশের আগেই ক্রিকেটারদের সংবাদমাধ্যমে টেনে এনে তাঁদের অপমান করছেন।
গত ৯ এপ্রিল মিরপুরে গুলশান-শাইনপুকুর ম্যাচে শাইনপুকুরের দুই ব্যাটসম্যানের স্টাম্পড হওয়ার ধরন নিয়ে প্রশ্ন জাগে। বিশেষ করে শাইনপুকুর ইনিংসের শেষ উইকেটে ব্যাটসম্যান যেভাবে স্টাম্পড হলেন, সরাসরি সম্প্রচারিত সে ম্যাচের ওই মুহূর্তের দৃশ্য ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্রিজ ছেড়ে বেরোনো ব্যাটসম্যানের ক্রিজে ফেরার যথেষ্ট সময় ছিল, কিন্তু উইকেটকিপার উইকেট ভাঙার আগে তিনি যেভাবে ক্রিজের দিকে নিতে থাকা ব্যাটটা আবার বাইরে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন, তা সন্দেহ না জাগিয়ে পারেনি।
এই ঘটনায় তদন্তে নামে বিসিবি। কিন্তু তদন্তের প্রক্রিয়ায়ই ওই দুই ব্যাটসম্যানকে তাঁদের আউটের ঘটনাটা আরেকবার অভিনয় করিয়ে দেখাতে বলা হয়! যা নিয়ে কদিন আগে বাংলাদেশের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি সান-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিসিবির সমালোচনা করেছিলেন সাকিব আল হাসান।
আজ বিসিবি সভাপতি ও দুই বোর্ড পরিচালকের সঙ্গে লম্বা সভার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে তামিমও একই কথাই বলেছেন। তাঁর সোজা কথা, রায়ে দোষী প্রমাণিত হলে বিসিবি তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দিতেই পারে, কিন্তু রায় আসার আগে এভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে ওই দুই ব্যাটসম্যানকে তাঁদের আউটের ধরন আবার অভিনয় করে দেখাতে বলা মানে তাঁদের অপমান করা।
সংবাদমাধ্যমে তামিম বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন গুলশান আর শাইপুকুরের ম্যাচে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা বোর্ডকে খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, দেখুন, যদি সেখানে কোনো দুর্নীতি হয় বা কোনো ক্রিকেটার কোনো ভুল কিছু করলে আমরা সবাই চাই শাস্তি হোক। আমরা এটার (শাস্তি হওয়ার ব্যাপারে) সঙ্গে শতভাগ আছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে… আপনার কোনো অধিকার নেই এই দুটো ছেলেকে নিয়ে মিডিয়ার সামনে অভিনয় করাবেন। বিশ্বে এন্টি করাপশন বা কোনো জায়গায় এমন নিয়ম নেই… এই দুটো ছেলেকে বেইজ্জত করবেন মিডিয়ার সামনে একই জিনিস করিয়ে। এটা ক্রিকেটারদের প্রতি অপমান। আমরা এটা নিয়ে এক ফোঁটাও হ্যাপি ছিলাম না।’
এর আগে বিপিএলে ফিক্সিংয়ের সন্দেহ আছে এবং তাঁদের ব্যাপারে বিসিবি তদন্ত করছে - এমন দশ ক্রিকেটারের নাম সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়। তামিমের অভিযোগ, এই দশজনের নাম বিসিবির ভেতর থেকেই কেউ ফাঁস করেছেন। এখানেও তাঁর সোজা কথা, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়া হোক, কিন্তু রায় আসার আগে এভাবে ক্রিকেটারদের নাম সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করার যৌক্তিকতা থাকে না।
‘…এর আগে বিপিএলেও একই জিনিস। দশজনের নাম ফাঁস হয়েছে। বিসিবি থেকে দশজনের ছবি দিয়েছে বিভিন্ন মিডিয়াতে। ওইখান থেকে যদি কোনো ক্রিকেটার দোষী হয়, তাহলে আমরা সব ক্রিকেটার চাই তার শাস্তি হোক। যতটুকু শাস্তি সম্ভব দেয়া হোক। কিন্তু যদি ওইখান থেকে দুজন নির্দোষ… বা আটজন নির্দোষ (প্রমাণিত হয়), নামগুলো লিক করে দেয়া পাবলিকলি এটা ক্রিকেটারদের জন্য অপমানজনক। এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তায় ছিলাম। ক্রিকেটারদের এভাবে ট্রিট করতে থাকলে ভালো কিছু হবে না।’