এজবাস্টনে এর আগে কখনো টেস্ট জেতেনি ভারত। রেকর্ডটা বদলে গেল।
সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রায়-না-হারার মতো টেস্টে ভারত হেরে গেল। সব সমালোচনার জবাব দেওয়া হয়ে গেল।
চতুর্থ দিনেও ভারত ইনিংস ঘোষণা করতে এত দেরি করছে কেন, সে সমালোচনা ছিল। আজ পঞ্চম দিনে বৃষ্টিতে প্রথম ঘণ্টার খেলা পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সমালোচনার জায়গায় চলে এল প্রায়-নিশ্চিত-জয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা। সে শঙ্কা দূর হয়ে গেল।
দূর হয়ে গেল বলতে, সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে আজ বৃষ্টিতে ঘণ্টাখানেক পণ্ড হতে দেখা পঞ্চম দিনের এক সেশনেরও বেশি হাতে রেখেই জিতে গেল ভারত। সব প্রশ্ন, সব সমালোচনা, সব শঙ্কার উত্তর দিল রেকর্ড গড়া জয়ে। ৬০৮ রানের লক্ষ্যে নামা ইংল্যান্ডকে ২৭১ রানেই গুটিয়ে দিয়ে ভারত পেল ৩৩৬ রানের জয় – ইনিংস ব্যবধানে জয়ের হিসাব বাদ দিলে রানের হিসেবে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয় নিয়েই সিরিজে সমতা ফেরাল শুবমান গিলের ভারত!
পিচ ব্যাটিং সহায়ক, সেটা এই পঞ্চম দিনেও। ভারত গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দ্রুত কেন রান তোলেনি, ইনিংস ঘোষণা করতে এত দেরি কেন করেছে, জয়ের হিসাব পরে রেখে আগে কি ড্র নিশ্চিত করার মতো ‘রক্ষণাত্মক’ অধিনায়কত্ব করেছেন কি না দুই ইনিংসেই ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো গিল – ভারত ৬০৮ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর প্রশ্নগুলো উঠেছিল। প্রশ্নগুলো হয়তো অযৌক্তিকও ছিল না। তারওপর এই টেস্টে ভারত নেমেছে তাদের মূল অস্ত্র যাসপ্রীত বুমরাকে বিশ্রামে রেখেই!
কিন্তু গতকালই মোহাম্মদ সিরাজ আর আকাশ দীপ শঙ্কা ছাপিয়ে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা উসকে দিয়েছিলেন মাত্র ৩০ রানের ভেতর দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি আর বেন ডাকেট এবং ইংল্যান্ডের ৫০ রান হতে হতে তাদের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা জো রুটকে ফিরিয়ে দিয়ে। ইংল্যান্ড দিন শেষ করেছিল ৩ উইকেটে ৭২ রান নিয়ে। বাজবলের যুগে যে ইংল্যান্ড ‘হয় মারো নয় মরো’ ছাড়া কিছু বুঝতে চায়নি বলে মনে হচ্ছিল, তাদের দিক থেকেই দিন শেষে শোনা গেল, তারা ড্রয়ের কথা মাথা থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়ার মতো বাস্তবতাবিবর্জিত চিন্তা করার দলও নয়!
এরপর আজ সকালে বৃষ্টি যখন প্রথম ঘণ্টা খেলা পণ্ড করে দিল, ভারতের জয়ের চেয়েও ড্রয়ের সম্ভাবনা কেউ বেশি ধরে নিলে তাঁকে দোষ দেওয়া যেত না। ক্রিজে যে হ্যারি ব্রুক ছিলেন, যিনি প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড দ্রুত ৫ উইকেট হারানোর পর জেমি স্মিথের সঙ্গে ৩০৩ রানের জুটি গড়েছিলেন! ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের তখন শঙ্কা না জেগে পারে না।
কিন্তু ভারতের বোলাররা – বিশেষ করে আকাশ দীপ – সব হিসেবনিকেশ এমনভাবেই পাল্টে দিলেন যে, ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের এখন মুগ্ধতা না জেগে পারে না।
আগের দিনের দুটির সঙ্গে আরও ৪টি যোগ করে ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছেন আকাশ দীপ – টেস্টে এই প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট তাঁর। সব মিলিয়ে দুই ইনিংসে ১০ উইকেট। সেখানেও রেকর্ড – ১৯৮৬ সালে এই বার্মিংহামেই চেতন শর্মার (১০/১৮৮) পর ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো টেস্টে দশ উইকেট পাওয়া দ্বিতীয় বোলার বনে গেলেন আকাশদীপ।
দিনের চতুর্থ ওভারে – ১৯তম বলে - ওলি পোপকে ফিরিয়ে ধংসযজ্ঞের শুরু আকাশদীপের, ইংল্যান্ডের রান তখন ৮০। এর ১৪ বল পর আবার, ইংল্যান্ড ইনিংসে আর ৩ রান যোগ হতেই ফেরালেন হ্যারি ব্রুককেও। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল ৮৪ রানে, এবার ৮৩ রানে!
এরপর প্রথম ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেটে ৩০৩ রানের জুটিতে ব্রুকের সঙ্গী স্মিথ যখন আজ বেন স্টোকসকে (৩৩) সঙ্গে নিয়ে ইংল্যান্ডকে ১০০ হয়ে ১৫০-ও পার করালেন, লাঞ্চও যখন ঘনিয়ে আসছে, ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের বুঝি আবার দেজা ভ্যু হচ্ছিল! কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হলো না। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে গেলেন স্টোকস, লাঞ্চ ব্রেকও হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। ইংল্যান্ডের রান তখন ১৫৩, ভারতের আর ৪ উইকেট দরকার।
দলের রান ২০০ হওয়ার ঠিক আগে, ১৯৯ রানে ক্রিস ওকসও যখন ফিরলেন, ভারত কিছুটা স্বস্তি পেল। এক প্রান্তে স্মিথ দাঁড়িয়ে গেছেন ঠিকই, প্রথম ইনিংসের মতোই আগ্রাসী ভঙ্গিতে, কিন্তু অন্য প্রান্তে তো ইংল্যান্ডের লেজ চলে এসেছে ততক্ষণে। অত হিসেব-নিকেশও আর করা লাগল না, যখন ইনিংসের ৫৬তম ওভারে জেমি স্মিথকেও (৮৮) ফিরিয়ে দিলেন আকাশদীপ! ইংল্যান্ডের রান তখন ৮ উইকেটে ২২৬, তখন দ্বিতীয় সেশনেও অর্ধেকের বেশি বাকি! ভারতের জয় তখন সময়ের ব্যাপার।
জশ টাংকে ফেরালেন জাদেজা, আর ব্রাইডন কার্সকে ফিরিয়ে হিসেবটা মিলিয়ে দিলেন আকাশদীপই।