মাস দেড়েক আগেও ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ইন্তের মিলান। কিন্তু ইতালিয়ান ক্লাবটির সেই আশার গুড়েবালি। কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে এসি মিলানের কাছে হারের পর সেরি আঁতে ১ পয়েন্টের জন্য লিগ শিরোপা হাতছাড়া। এরপর গত শনিবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পারি সাঁ জামেইর (পিএসজি) কাছে বিধস্ত হয় ইন্তের। এতে নিশ্চিত হয়, মৌসুমটা খালি হাতেই শেষ করতে হচ্ছে সিমিওনে ইনজাগির শিষ্যদের।
ইউরোপিয়ান পেশাদার মৌসুম আপাতত শেষ! এ মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হতে যাচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ। সে টুর্নামেন্টের আগে মাঝে ফিরছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের উন্মাদনা। এ সময় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে নরওয়ে ও মলদোভার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলবে ইতালি। আর এ দুটি ম্যাচের জন্য জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন ইন্তেরের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো সেন্টার ব্যাক ফ্রান্সেসকো আচেরবি। কিন্তু কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তির ডাক উপেক্ষা করেন আচেরবি। আর এ ঘটনায় নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন ৩৭ বছর বয়সী এ ডিফেন্ডার।
শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, টানা খেলার কারণে শারীরিক ধকল কাটাতে আরেববি জাতীয় দলের জার্সিতে ম্যাচ দুটি খেলতে চান না। কিন্তু স্পালেত্তি অভিযোগ তোলেন, শারীরিক কোনো জটিলতা নয়, বরং নিজে থেকেই জাতীয় দলে খেলতে চাননি আচেরবি, ‘ও (আচেরবি) জাতীয় দলের ডাক প্রত্যাখান করেছে। এটার পেছনে শারীরিক কোনো সমস্যা দায়ী নয়। সে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়ে ভাবছে। আমরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে পরের ধাপে যাচ্ছি।’
কোচের এমন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন আচেরবি। এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরে ইন্তের ডিফেন্ডার জানিয়েছেন, কোচের থেকে যথাযথ সম্মান পাননি বলেই জাতীয় দলে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিবৃতিতে আচেরবি লিখেছেন, ‘অনেক চিন্তা-ভাবনার পর কোচকে জানিয়েছি, আমি জাতীয় দলে যোগ দিচ্ছি না। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি, এই পথে শান্তভাবে এগিয়ে যাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই… আমি কোনো অযুহাত দিচ্ছি না বা কারও অনুগ্রহ চাই না। তবে আমি সম্মান চাই। আর সেই সম্মানটা যদি না পাওয়া যায়, বিশেষ করে যিনি একটা গ্রুপকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি যদি সম্মানটা না দেখান, তবে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াকেই ভালো বলে মনে করি।’
নিজে জাতীয় দলের ম্যাচ দুটি না খেললেও সতীর্থ ও দলকে শুভেচ্ছা্ জানাতে ভোলেননি আচেরবি, ‘জাতীয় দল ও সতীর্থদের প্রতি শুভ কামনা। মাঠে যেমন নিবেদন দেখিয়েছি, বাইরে থেকেও ওদের একইভাবে সমর্থন করে যাব।’
জাতীয় দলের ডাক প্রত্যাখ্যান করে যতই দলকে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলেন না কেন, ইন্তের মিলানের জার্সিতে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা তৈরি হয়েছে ৩৭ বছর বয়সী এ ডিফেন্ডারের। ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (এফআইজিসি) অভ্যন্তরীণ ফেডারেল রেগুলেশনের ৭৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, চোটে পড়ার মতো যথাযথ কারণ ছাড়া জাতীয় দলের ডাক প্রত্যাখ্যান করলে শাস্তির বিধান আছে। এক্ষেত্রে ওই খেলোয়াড় ক্লাব পর্যায়ের ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা পেতে পারেন।
আচেরবির ক্ষেত্রে কারণ যথাযথ প্রমাণিত না হলে এ আইনের অধীনে নিষিদ্ধ হতে পারেন। তবে এ নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্লাব বিশ্বকাপে খেললেও লিগ চ্যাম্পিয়নশিপে নাও দেখা যেতে পারে আবেরবিকে।
আইনে শাস্তির বিধান যতই স্পষ্ট হোক না কেন, সংবাদমাধ্যম লা গাসেত্তা দেল্লো স্পোর্ত জানাচ্ছে, এ ঘটনায় আচেরবির বিরুদ্ধে হয়তো কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেবে না ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। এক্ষেত্রে আচেরবির বয়সকে একটা ফ্যাক্টর হিসেবে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে বলা হয়েছে, আচেরবি এখন তরুণ পর্যায়ে নেই। কিংবা পরিস্থিতি এমন নয় যে, তাঁকে শাস্তি দিয়ে সেটা (তরুণদের জন্য) উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করানো যায়। সংবাদমাধ্যমটির ধারণা, জাতীয় দল থেকে অবসরের কথা ভাবছেন আচেরবি। তবে দেখার বিষয়, সে ঘোষণার আগে কোচ স্পালেত্তির সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের সমাধান হয় কিনা।