প্রশ্ন: ইরানের ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ফাতিমা’ প্রদর্শিত হয়েছিল, তখন কি সিনেমাটি দেখেছিলেন?
ফারিণ: ইরানে সবার সঙ্গে বসে দেখার একটা সুযোগ হয়েছিল। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ফিল্মমেকাররা ছবিটা দেখেছেন। কিন্তু আজকে আমার সহকর্মী ও দর্শকদের সঙ্গে বসে দেখা। আমার কাছে ভালো লেগেছে যে সবাই মনোযোগ দিয়ে ছবিটি দেখেছেন।
প্রশ্ন: পর্দায় নিজেকে দেখে কী মনে হলো?
ফারিণ: পর্দায় নিজের খুঁতগুলোই আগে চোখে পড়ে। সেটাই আসলে আগে দেখি। তবে দর্শকের ভালো লাগাটাই আমার কাছে প্রধান। এটা তো সবে শুরু, আমি চাই সামনে যেন আরও ভালো ভালো ছবিতে কাজ করার সুযোগ পাই।
ফাতিমা বা সুবর্ণার গল্প, যা-ই বলি না কেন—বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়ের গল্পই এখানে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত।
প্রশ্ন: সিনেমাটির ‘ফাতিমা’ চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবে আপনার মিল কতটুকু?
ফারিণ: বাস্তব জীবনে ফাতিমার সঙ্গে আমার অনেক মিল রয়েছে। আমি অনেক স্পষ্টবাদী, আবার প্রতিবাদীও। কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারি না, সাথে সাথেই প্রতিবাদ করি। এবং আমার মনে হয় যে সবকিছুতেই আমি খুব সৎ থাকি। কেউ কোনো মিথ্যা অভিযোগ তুললে সাথে সাথেই প্রতিবাদ করি। তো ফাতিমাও অনেকটা এমন! আমার সঙ্গে অনেক মিল ছিল, আবার কিছু জায়গায় অমিলও ছিল। হয়তো ওর সংগ্রামের যে অভিজ্ঞতা সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু আমার নিজস্ব একটা সংগ্রাম রয়েছে, প্রত্যেকের জীবনে যেমনটা থাকে। ফাতিমা বা সুবর্ণার গল্প, যা-ই বলি না কেন—বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়ের গল্পই এখানে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত।
প্রশ্ন: শুটিংয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
ফারিণ: ২০১৭ সালে প্রথমে এই ছবির শুটিং করেছিলাম। তারপর হঠাৎ স্থগিত হয়ে যায়, পুরো জিনিসটাই তখন আমার মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে আবার যখন গল্পটা অন্যভাবে সাজানো হয়, তখন বর্তমানের চরিত্রটা আমি আমার মতো করে করেছি। কিন্তু আগের লুকের (একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ) সঙ্গে মিল রেখে আমাকে কিছু সিক্যুয়েন্স করতে হয়েছে। মানে ২০১৭ সালের লুকে আমাকে ২০২৩ সালেও শুটিং করতে হয়েছে। যে কারণে আমার সবেচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে অ্যাক্টিংয়ে কোনো পরিবর্তন হবে কি-না? তো ইচ্ছে করেই হয়তো কিছুটা খারাপ অ্যাক্টিং করতে হয়েছে আগের লুকের সঙ্গে মিল রেখে!
আমি তো অতীতে গিয়ে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে পারব না, কিন্তু ভবিষ্যতটা পরিবর্তন করতে পারব, তাই ভবিষ্যতটা যত ভালো করা যায়।
প্রশ্ন: তার মানে আরও ভালো করা যেত?
ফারিণ: প্রতিটা জিনিসই তো আরেকটু ভালো করার সুযোগ থাকে, শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে। বিশেষ করে এই সিনেমায় (ফাতিমা) মুক্তিযুদ্ধের যে গল্পটা, সেটা একদম প্রথমদিকের অ্যাক্টিং। আমার জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল যে, একদম প্রথমদিকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে একটা কাজ করা, আবার পুনরায় যখন শুটিং হয় ২০২৩ সালে, তখন প্রথমটার সঙ্গে এটা মানাবে কি-না। অবশ্য পরিবর্তনের অনেকগুলো জায়গাই রয়েছে। কিছু করার নেই, সময়ের সাথে সাথেই তো পরিবর্তন হয় সবকিছু। আমি তো অতীতে গিয়ে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে পারব না, কিন্তু ভবিষ্যতটা পরিবর্তন করতে পারব, তাই ভবিষ্যতটা যত ভালো করা যায়। অভিনয়ের দিক থেকে আমার নিজেকে সমৃদ্ধ করার অনেক জায়গা বাকি। অনেক কিছু শিখতে চাই।
প্রশ্ন: বয়সের এই যে ফারাক সেটাকে কী বলবেন?
ফারিণ: প্রতিটা বয়সেরই একটা সৌন্দর্য থাকে। হ্যাঁ, ২০১৭ সালে হয়তো আমার অ্যাক্টিং তেমন পরিপক্ক ছিল না। তবে সেখানেও আলাদা একটা সৌন্দর্য ও সরলতা ছিল। এখন হয়তো বিষয়গুলো আরও পরিপক্ক হয়েছে। দেখা যায়, একটা কাজ করতে করতে দক্ষতা তৈরি হয়। আমি চাই যে সামনে আরও অনেক শিখতে, আমার শেখার অনেক কিছু বাকি।
প্রশ্ন: অভিনয় আর পারিবারিক জীবন—এই দুটো কীভাবে সামলান?
ফারিণ: আমার পারিবারিক জীবন নেই বলতে গেলে, কাজই আমার পরিবার। কোনো না কোনোভাবে দুটোরই একটা ভারসাম্য থাকছে। শুরু থেকে যেভাবে হচ্ছিল সেভাবেই!
যখন একটা কাজ দর্শকের ভালো লাগে, তখন অবশ্যই আমার ভালো লাগে। কিন্তু সেটা আমি বেশিক্ষণ মাথায় রাখি না। মনে করি এই কাজটাই আমার শেষ কাজ, এরপর মানুষ আমাকে আবার প্রথম কাজ হিসেবেই দেখবে
প্রশ্ন: কোনো কাজের সফলতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ফারিণ: আমার কাছে সফলতার সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। আমি কাজের প্রক্রিয়াটা অনেক এনজয় করি। যখন কোনো কাজ করতে থাকি, তখন শুটিংয়ের মধ্যেই মনে হয় যে এটাই আমার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। আসলে এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য, এই কারণেই হয়তো এই প্রফেশনটা আমি বেছে নিয়েছি। এবং দিনশেষে অবশ্যই কাজের ফলাফলটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন একটা কাজ দর্শকের ভালো লাগে, তখন অবশ্যই আমার ভালো লাগে। কিন্তু সেটা আমি বেশিক্ষণ মাথায় রাখি না। মনে করি এই কাজটাই আমার শেষ কাজ, এরপর মানুষ আমাকে আবার প্রথম কাজ হিসেবেই দেখবে, আগের কাজ মানুষ মনে রাখবে না। তাই প্রাপ্তির আনন্দটা সবসময় কম উপভোগ করি, কিন্তু প্রত্যাশাটা সবসময় অনেক বেশি থাকে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি তাহসানের সঙ্গে আপনার ‘রঙে রঙিন হবো’ গানটি শ্রোতারা পছন্দ করেছেন, আবার কবে আপনাকে গানে পাওয়া যাবে?
ফারিণ: এখন আপাতত ‘ফাতিমা’ নিয়েই বেশি ব্যস্ত আছি। এরপর দেখা যাক।