ওয়েলস বোনারের ডিজাইন করা অ্যাডিডাস সামবা অনেকটা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়া জুতা। রুপালি রঙের এই স্নিকার এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, এখন এটি শুধু ফ্যাশন নয়, বরং রুচির প্রতীক।
এই জুতা যতটা আলোচিত হয়েছে, তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, এটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ আলোচিত সব স্নিকার তৈরির পেছনে কাজ করছেন নারী ডিজাইনাররা।
স্নিকারের জগতে ‘কল্যাব’ নতুন কিছু নয়। অনেক বছর ধরেই ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন ডিজাইনার বা সেলিব্রিটির সঙ্গে কাজ করে নিজেদের নিজেদের পণ্যের মান ধরে রেখেছে। তবে এটি শুধু লোগো বসানো নয়। বরং সেখানে গল্প আছে, চিন্তা আছে, নকশার সৃষ্টিশীলতা আছে।
কমপ্লেক্স স্নিকারসের লেখক ও ইউটিউবার জ্যাক স্লেড বলেন, ‘ব্র্যান্ডগুলো এখন বোঝে, কাদের সঙ্গে কাজ করলে সত্যিকারের প্রভাব তৈরি করা যায়। ফলে এই কাজটি এখন অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠছে। যা পুরো স্নিকার কালচারকে পাল্টে দিয়েছে।’
স্নিকার কালচার শুরু থেকেই ছিল পুরুষদের দখলে। বাটা শু মিউজিয়ামের ইতিহাসবিদ এলিজাবেথ সেমেলহ্যাক বলেন, ‘৭০–এর দশকে নিউ ইয়র্কে স্নিকার কালচারের জন্ম হয় মূলত ছেলেদের ঘিরে। পরে ব্র্যান্ডগুলো যখন আন্তর্জাতিক বাজারে যায়, তখনও সেরা স্নিকারগুলো কেবল ছেলেদের সাইজেই পাওয়া যেত।’
এই প্রবণতা বদলাতে শুরু করে ২০১০ সালে। যখন নিউ ইয়র্কের স্ট্রিটওয়্যার সংস্কৃতির পরিচিত মুখ ডিজে ভাসটি কোলা প্রথম নারী হিসেবে ডিজাইন করেন ‘এয়ার জর্ডান’। সেমেলহ্যাক বলেন, ‘স্নিকার কালচারের প্রাণ হচ্ছে গল্প। যত বেশি ভিন্ন গল্প বলা যাবে, এই সংস্কৃতি তত বেশি সমৃদ্ধ হবে।’
আজকের দিনে সেই গল্পের মূল চরিত্র হয়ে উঠছেন নারী ডিজাইনাররা। বড় বড় ব্র্যান্ড এখন নারীদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ইতিহাসবিদের ভাষায়, ‘নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, আর স্নিকার এখন তাই নারীদের ফ্যাশনের মূলধারায়।’
নারীদের ফ্যাশনে যারা আলোচিত নাম, তাঁদের অনেকেই এখন স্নিকার ডিজাইনে সফল। যেমন, ড্যানিয়েল গুইজিওর তৈরি করা পুমা স্পিডক্যাট। যা প্রতিবারই বাজারে এলেই বিক্রি শেষ। স্যান্ডি লিয়াংয়ের ডিজাইন করা স্যালোমনের গরপ-কোর স্টাইলও দারুণ চলছে।
জ্যাক স্লেড বলেন, ‘স্নিকার কালচার আসলে মানুষের গল্পের জায়গা। এখানে জুতার প্রতি ভালোবাসা থেকে সম্পর্ক তৈরি হয়। কারুশিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হয়। সেই সাথে পুরোনো দিনের প্রতি একধরনের ভালোবাসা কাজ করে।’
এই জায়গায় নারী ডিজাইনাররা এখন কেবল শুরু করেননি, বরং তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা নিজেদের নারীত্ব থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন, নারী প্রতিভাকে তুলে ধরছেন। এই অনবরত বদলে যাওয়া দুনিয়ায় নিজেদের জায়গা শক্ত করে নিচ্ছেন।
পরের পর্বে থাকবে সেই পাঁচ নারী ডিজাইনারের গল্প, যারা স্নিকার দুনিয়া বদলে দিচ্ছেন নিজের মতো করে।
তথ্যসূত্র: ইনস্টাইল