বিলাসবহুল ফ্যাশনের বাজারে চমক দেখাচ্ছে ফরাসি ব্র্যান্ড হার্মেস। এলভিএমএইচকে (মোয়েত হেনেসি লুই ভিতোঁ) পেছনে ফেলে এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান বিলাসপণ্য কোম্পানি।
প্যারিসে শেয়ারবাজারে হার্মেসের বাজারমূল্য এখন ২৪৮.৬ বিলিয়ন ইউরো, যা প্রায় ২৯ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যেখানে এলভিএমএইচের মূল্য ২৪৪.৪ বিলিয়ন, যা প্রায় ২৯ লক্ষ ৮ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।
গত এক বছরে হার্মেসের শেয়ারমূল্য বেড়েছে ২ শতাংশ। বিপরীতে এলভিএমএইচের কমেছে ৩৮ শতাংশ। বিলাসপণ্যের বাজারে মন্দা থাকলেও হার্মেস ঠিকই মাথা উঁচু করে টিকে আছে।
তবে এই সাফল্যের পেছনে যে একটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তা হলো তাদের তৈরি হ্যান্ডব্যাগ, বারকিন।
কীভাবে তৈরি হলো বারকিন ব্যাগ?
১৯৮৪ সালের কথা। ফ্রান্সের এক বিমানে হার্মেসের তৎকালীন প্রধান জঁ লুই ডুমা সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী জেইন বারকিন। তিনি নিজের ব্যাগের অগোছালো অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তখনই শুরু হয় আলোচনা, আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় বারকিন ব্যাগের ধারণা।
পরে হার্মেসের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয় প্রথম ‘বারকিন ব্যাগ’, যার সামনের ফ্ল্যাপে লেখা ছিল জেইনের আদ্যক্ষর ‘জেবি’। এরপর থেকেই এই ব্যাগ হয়ে ওঠে এক অনন্য প্রতীক। যেখানে ফ্যাশন, বিলাসিতা ও রহস্য এক হয়ে যায়।
বারকিন কেন এত দুর্লভ?
বারকিন ব্যাগের মূল আকর্ষণ শুধু এর ডিজাইন বা চামড়া নয়। এটি কেনার পদ্ধতি, যা রহস্যে ঘেরা। হার্মেস কাউকে সরাসরি দোকান থেকে এই ব্যাগ দেয় না। আগে হতে হয় তাদের নিয়মিত ক্রেতা। সেই সাথে তার থাকতে হয় ভালো অর্ডার হিস্ট্রিও। অনেকেই বছরে হাজার হাজার ডলার খরচ করেও এই ব্যাগের তালিকায় জায়গা পান না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই একচেটিয়া বিক্রয়নীতিই বারকিনকে বানিয়ে তুলেছে ফ্যাশনের ইতিহাসে অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। বিজনেস অব ফ্যাশন জানায়, এই ব্যাগ এখন শুধু ফ্যাশনের উপকরণ নয়। বরং একধরনের সম্পদ। কারণ এটি দ্বিতীয়বার বিক্রির সময় দামও দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি হয়ে যায়।
জেনে নিন দুষ্প্রাপ্য কিছু বারকিন ব্যাগ সম্পর্কে-
হিমালয়া বারকিন: সবচেয়ে দামি ও বিখ্যাত বারকিন এটি। ২০২২ সালে লন্ডনের প্রখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান সথেবিজ নিলামে একটি ‘ডায়মন্ড হিমালয়া বারকিন ৩০’ বিক্রি হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারে। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সাদা ও ধূসর কুমিরের চামড়ায় তৈরি এই ব্যাগের রঙ হিমালয়ের তুষারে ঢাকা চূড়া থেকে অনুপ্রাণিত। এটি বাজারে খুব কমই দেখা যায়।
ক্লাব বারকিন: ২০১২ সালে প্রথম আসে ক্লাব বারকিন। মাঝখানে থাকে বিশেষ চামড়ার প্যানেল। কিছু সংস্করণে কুমির বা লিজার্ডের চামড়াও ব্যবহার হয়। ২০২৩ সালে হংকংয়ে ক্রিস্টিজ নিলামে সাদা ক্লেমেন্স লেদার ও মাইকোনস নিলোটিকাস লিজার্ড চামড়ার ‘ক্লাব বারকিন ৩৫’ বিক্রি হয়।
ফোবুর বারকিন: ২০১৯ সালে মুক্তি পায় ফোবুর্গ বারকিন, হার্মেসের প্যারিসের প্রধান দোকান রু দ্যু ফোবুর্গ সাঁ হোনোরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। প্রথমে আসে ডে ও নাইট সংস্করণ, পরে যুক্ত হয় মিডনাইট এবং স্নো। ব্যাগের সঙ্গে ছোট্ট হার্মেস শপিং ব্যাগ যুক্ত করা হয়, কমলা এইচ সুইফট চামড়ায় তৈরি যা সাধারণ ক্লোচেটের জায়গায় থাকে।
শ্যাডো বারকিন: ২০০৯ সালে ডিজাইনার জঁ-পল গলতিয়েরের তৈরি এই ব্যাগ একেবারে ন্যূনতম নকশার অনন্য উদাহরণ। ২০২১ সালে এটি সীমিত সংস্করণে ফের বাজারে আসে। সথেবিজ অনুযায়ী, ২০২২ সালে একটি ‘শ্যাডো বারকিন ২৫’ বিক্রি হয় ৫২ হাজার ডলারে। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
বারকিন ব্যাগ আজ শুধু একটি হ্যান্ডব্যাগ নয়। এটি ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অবস্থানের প্রতীক। একে ঘিরে আছে গল্প, ইতিহাস আর আভিজাত্য।