মানুষের সৃজনশীলতার ছাপ দেখা যায় খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন খাবারের উপকরণের মধ্যে ফিউশন ঘটিয়ে নতুন নতুন রেসিপি উদ্ভাবন করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যে সেই রেসিপি ছড়িয়ে পড়ছে, পাচ্ছে ‘ভাইরাল’ তকমা।
২০২৪ সালের তেমনই কিছু উদ্ভট এবং আলোচিত রেসিপির কথা থাকল এখানে–
দুবাই কুনাফা চকলেট বার
আপনি যদি ইউটিউব বা টিকটকে প্রায়ই ডেজার্টের রেসিপি খুঁজে থাকেন, তাহলে এই ভাইরাল চকলেট নিশ্চয়ই আপনার চোখ এড়ায়নি।
এ চকলেট বারটি বাজারে এনেছে দুবাইয়ের ফিক্স ডেজার্ট চকোলেটিয়ার কোম্পানি। সেখানে প্রতিটি বারের বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৬২ দিরহামের মতো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার টাকা! যেহেতু দুবাইয়ে গিয়ে এই চকলেট খাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়, আবার লোভনীয় ভিডিওগুলো দেখে এই খাবার চাখতে না পারার লোভ সংবরণও কঠিন, তাই পৃথিবীজুড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজেদের রান্নাঘরে এটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
সাধারণত আমরা ড্রাই ফ্রুটস, জ্যাম বা লিকুইড চকলেটের ফিলিং দেওয়া চকলেট বার খেয়েই অভ্যস্ত। কিন্তু এই ভাইরাল চকলেটের বিশেষত্ব হলো, এর মধ্যখানে রয়েছে পেস্তাবাদাম আর সেমাইয়ের ঘন মিশ্রণ, যা মধ্যপ্রাচ্যে ‘কুনাফা’ নামে পরিচিত।
কোকো পাউডার, মাখন, চিনি, পেস্তাবাদাম, ঘি আর সেমাই–মাত্র এই ক’টি উপাদানে চাইলে আপনিও কিন্তু দারুণ সুস্বাদু এই চকলেটটি ঘরে বানিয়ে নিতে পারেন।
টাংহুলু
নামটা খটমটে হলেও এই ডেজার্টটা বাচ্চাদের অনেক পছন্দ। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা স্ট্রিট ফুড, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় শত শত মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। বানানো সহজ, খেতেও ‘ক্রাঞ্চি’; একে অনেকটা আমাদের দেশের কটকটির আধুনিক সংস্করণ বলা যায়।
রেসিপি দেখে পুরো পৃথিবীর মানুষ ২০২৪ সালে টাংহুলু তৈরি করেছে! এর জন্য চুলায় প্রথমে চিনির সিরা তৈরি করে নিতে হবে। চিনির বদলে তরল চকলেটেও কাজ হবে, স্বাদ বরং আরও বাড়বে। এরপর একটা কাঠিতে পছন্দের ফলের কয়েক টুকরা নিয়ে তা সিরা বা চকলেটে ডোবাতে হবে। শেষে আবার কাঠিটা নিয়ে বরফঠান্ডা পানিতে চুবাতে হবে। এতে চিনি বা চকলেট ফলের ওপর শক্ত আর মচমচে একটা আবরণ তৈরি করবে। আনারস, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, কিউই–যেকোনো ফল নিতে পারবেন।
এমা দাতশি
এই খাবারকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় অবদান বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের। সামান্য কিছু উপকরণ দিয়ে তৈরি এমা দাতশির রীতিমতো প্রেমে পড়ে যান নায়িকা! ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে কথা জানাতেই মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে এটি তৈরিতে।
এমা দাতশিকে ভুটানের জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর দুটি প্রধান উপাদান হলো ‘এমা’ বা মরিচ এবং ‘দাতশি’ বা চিজ। কাঁচামরিচ, চিজ, রসুন দিয়ে এই খাবার বানিয়ে নিতে পারেন আপনিও।
গরম ভাতের সঙ্গে এমা দাতশির স্বাদ সবচেয়ে ভালো জমে। ভাতের সঙ্গে চিজ খেতে কেমন, কেনইবা দীপিকা এর স্বাদে মুগ্ধ হলেন, সেসব জানতে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকতে থাকতেই বানিয়ে নিন এমা দাতশি।
পিকল জুস কোলা
বরফঠান্ডা কোলার মধ্যে একগাদা টক স্বাদযুক্ত পিকলসের রস ঢেলে দেওয়া হলো। কেমন লাগবে খেতে ভাবুন তো! ব্রিটিশ পপতারকা ডুয়া লিপার মতে, এর স্বাদ দারুণ! নিজের প্রিয় ফিজি কোলার গ্লাসে ইচ্ছামতো হ্যালাপিনো পিকলসের রস মেশান তিনি; এরপর তৃপ্তিসহকারে চুমুক দেন!
তাঁর এ ভিডিও ভক্তদের মধ্যে কৌতূহল থেকে বিরক্তি সব ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রচুর লোক এই রেসিপি অনুসরণও করেছে। অনেকে আবার এতে ‘অ্যাড অন’ হিসেবে নিজেদের মতো গরম মধু, টাকিলা ইত্যাদি যোগ করেছে। সাধারণ কোলা খেতে একঘেয়েমি লাগলে টক স্বাদের এই ভাইরাল কোলা না হয় একবার চেখে দেখুন!
কিউকামবার সালাদ
সালাদে শসা তো আমরা সবাই খেয়েছি, কিন্তু ২০২৪ সালে এর একটি ‘ভাইরাল ভার্সন’ দেখেছে সবাই। এই ট্রেন্ডের জনক বলা যায় কানাডিয়ান ভ্লগার লোগান মোফিতকে। শশাকে পাতলা পাতলা স্লাইস করে এর সঙ্গে তিনি মিশিয়েছেন তিলবীজ, স্প্রিং অনিয়ন, সয়া সস, ফিশ সস, রসুন কুচি ইত্যাদি।
টিকটকে তার কিউকামবার সালাদের প্রথম ভিডিওটি ইতিমধ্যে ১৫ মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছে। মোফিত তাঁর অরিজিনাল রেসিপিটি নিয়ে পরে নানা নিরীক্ষা করেছেন। স্যামন, ক্রিম চিজ, পিনাট বাটার, স্ট্রবেরি জ্যাম, থাউজেন্ড আইল্যান্ড ড্রেসিং কিছুই বাদ রাখেননি।
বাঘের দুধের শরবত
টাকায় নাকি বাঘের দুধও মেলে, প্রচলিত এই কথাই যেন চলতি বছর সত্যি হয়ে ধরা দেয় ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলের বিয়েতে। অনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের চার দিনব্যাপী তারকাখচিত বিয়েতে প্রায় ২৫০০ খাবারের আইটেমের আয়োজন ছিল বলে জানা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় ‘পিসটাশিও টাইগারস মিল্ক’ বা বাঘের দুধের পেস্তাবাদাম শরবত নিয়ে।
এই শরবত বানানো কিন্তু খুবই সহজ; আর এর জন্য বাঘের দুধের আসলে প্রয়োজন নেই!
ব্লেন্ডার বা ফুড প্রসেসরে পেস্তাবাদাম কুচি নিয়ে ময়দার মতো মিহি গুঁড়া করে নিন। যে গ্লাসটিতে পরিবেশন করবেন, তার মুখটা পেস্তার গুঁড়া দিয়ে সাজিয়ে নিন। এরপর একে একে তাতে নারকেলের দুধ, পেস্তা কুচি, দারুচিনি, চিনি এবং ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে নিন। সবশেষে ওপরে বরফ কুচি দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন।
তথ্যসূত্র: টেস্টিং টেবল, হিন্দুস্তান টাইমস, ডেলিশ