সেকশন

রোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

সন্তানের সামনে ঝগড়া? বাবা–মায়ের যা যা করা উচিত

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৫ এএম

‘শিশুরা কথা নয়, আচরণ অনুকরণ করে। তাই আপনার ব্যবহার হোক তার শিক্ষার শুরু।’

বর্তমান সময়ে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক দক্ষতা গঠনে পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। আর এই পরিবারের মূল ভিত্তি হলো মা–বাবা। যারা একসঙ্গে সন্তানের ভালো চান। কিন্তু অনেক সময় সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মা-বাবার মধ্যে মতের বিরোধ দেখা দেয়। সে মতবিরোধ যদি সন্তানের সামনে প্রকাশ পায়, তবে সেটি  শুধু তাৎক্ষণিক অস্বস্তি নয়, বরং সন্তানের মনোজগতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করে।

সন্তানের সামনে মতবিরোধ প্রকাশ

এটি একটি অতি পরিচিত দৃশ্য—মা বলছেন, ‘আজ আর ফোন নিও না। ঘুমাতে যাও।’ বাবা সঙ্গে সঙ্গে বলছেন, ‘একটু ফোনে দেখতেই তো চায়, এতে সমস্যা কী?’ এই ছোটখাটো বাক্য বিনিময়ও সন্তানের মনে বিভ্রান্তি, দ্বিধা ও সুযোগসন্ধানী মানসিকতা তৈরি করতে পারে।

উদাহরণ-০১:

বারো বছর বয়সের রায়ান। ক্লাস সিক্সে পড়ে। তার মা চান রায়ান টিউশনি পড়তে যাক এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়াশোনা করুক। কিন্তু রায়ানের বাবা মনে করেন, এতো চাপ দিয়ে কোনো লাভ নেই। একদিন মা রায়ানকে রাগ করে বলেন, ‘আজ থেকে পড়া না হলে টিভি বন্ধ।’ সঙ্গে সঙ্গে বাবা বলেন, ‘এই বয়সে টিভি না দেখলে মাথা গরম হবে। ওকে একটু টিভি দেখতে দাও।’ রায়ান বুঝে যায় একজন কঠিন, অন্যজন নরম। ফলে মায়ের কথা উপেক্ষা করে রায়ান । আর বাবাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিয়ম ভাঙাকে স্বাভাবিক মনে করা শুরু করে দেয়।

উদাহরণ-০২:

নয় বছর বয়সের আনুশকা পিয়ানো শিখতে চায়। তার মা খুব খুশি হয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু আনুশকার বাবা বলেন, ‘এসব শিখে কী দরকার? পড়াশোনা করলেই সব হবে।’ মেয়ের সামনেই তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। আনুশকা প্রথমে কাঁদে, পরে চুপ হয়ে যায়। এখন সে আর কিছুতে আগ্রহ দেখায় না। কারণ, সে অনুভব করে, তার ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই বরং তার পছন্দ ঝগড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সন্তান যদি বারবার মা-বাবার দ্বন্দ্বের সাক্ষী হয়, তবে তার মধ্যে উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছবি: ফ্রপিকগবেষণা কী বলছে?

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সন্তান যদি বারবার মা-বাবার দ্বন্দ্বের সাক্ষী হয়, তবে তার মধ্যে উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার স্ট্যানফোর্ড চাইল্ডডেভেলপমেন্ট ল্যাব-এর মতে, যেসব পরিবারে অভিভাবকরা সন্তানের সামনে দ্বিমত পোষণ করেন, সেসব শিশুরা কৌশলী আচরণ শেখে এবং ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। হার্ভার্ড সেন্টার অন দ্যা ডেভেলপিং চাইল্ড মনে করে যে, বাচ্চারা তখনই সঠিকভাবে বিকশিত হয়, যখন তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে সংহতি ও নিরাপত্তাবোধ থাকে।

এই আচরণের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কী?

দ্বিধা ও বিভ্রান্তি: মা এক কথা বলছেন, বাবা আরেক কথা—সন্তান বুঝতে পারে না কার কথা মানবে।

নিয়মের প্রতি অবজ্ঞা: সে ভাবে, যেহেতু বড়রা নিজেরাই একমত নয়, তাই নিয়ম মানা জরুরি নয়।

পারিবারিক সম্পর্ক দুর্বল হওয়া: সে এক অভিভাবকের পক্ষ নেয়, অন্যজনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে।

সত্য লুকানো ও কৌশল প্রয়োগ: সন্তান বুঝে ফেলে যে, কাকে ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছে পূরণ করা যায়।

আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত: যখন সন্তান দেখে যে তাকে নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে, তখন সে ভাবে যে, সে হয়ত পরিবারের জন্য একটা সমস্যা।

করণীয় কী?

একে অপরকে সম্মান করুন: মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন পরস্পরের প্রতি অসম্মান না হয়।

একসাথে একটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করুন: অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতে পৌঁছে তারপর সন্তানের সামনে একটি সিদ্ধান্ত জানানো উচিত।

একটা দল হয়ে থাকুন: কোনো বিষয়ে বাবা-মায়ের আলাদা আলাদা অভিমত থাকতে পারে কিন্তু সন্তানের সামনে তারা যেন একটি টিম হিসেবে কাজ করে।

সন্তানের চোখ দিয়ে ভাবুন: ভাবুন, যদি আপনি ছোট থাকতেন এবং দেখতেন আপনার মা-বাবা সব সময় আপনার জন্যই মতবিরোধ করছে- তখন কেমন লাগত?

সন্তানের সামনে অভিভাবকের মতভেদ প্রকাশ একটিমাত্র মুহূর্তের ভুল নয় বরং এটি সন্তানের মানসিক নিরাপত্তা, আত্মবিশ্বাস, নৈতিকতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। সন্তান চায়, তার মাবাবা একসাথে থাকুক, কোনো বিষয়ে একমত না হলেও যেন একমত থাকার মতো আচরণ করুক। আপনি যদি চান আপনার সন্তান দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠুক, তবে আপনার নিজের আচরণ দিয়েই তাকে সে শিক্ষাটি দিতে হবে।

লেখক: শিশু বিকাশ বিষয়ক গবেষক, শিশুবিকাশ ডট ক

আমরা অনেকেই আছি, যারা কারও অনুরোধে ‘না’ বলতে পারি না। চেনা হোক বা অচেনা, কেউ কিছু চাইলে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। ভাবি, না বললে যদি মন খারাপ করে! অথচ নিজের ইচ্ছেটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। পরে মনটা...
সামাজিক মাধ্যমের বন্ধুদের আমরা কখনোই ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধু’ বলি না। এমনকি জীবনের জরুরি মুহূর্তেও তাদের কথা মনে পড়ে না। কিন্তু তবুও তারা আছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার এক কোণে। নীরবে আপনাকে পর্যবেক্ষণ...
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমাদের চারপাশে সবাই ভালো আছে, শুধু আপনি ছাড়া। নিজেদের ভালো মুহূর্তের ছবি, ভিডিও বা রিলে যেন সয়লাব ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম। তখন নিজের জীবনটাকে বড় একা লাগে। মনে হয়, আমিও যদি কারও...
আজকের দিনে কিশোর-কিশোরীদের ইনস্টাগ্রাম থেকে দূরে রাখা বেশ কঠিন কাজ। চারপাশে সবাই আছে, বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চাপও কম নয়। ‘সবাই আছে, শুধু আমি নেই কেন?’, ‘আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই?’, ‘তোমার...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.