কে বিউটি, কে পপ, কোরিয়ান খাবার আর আধুনিক শহরের ঝলমলে স্বাদ নিতে চাইলে এ বছরের জন্য আপনার সেরা গন্তব্য হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল। এই শহরে পা রাখলেই যেন ডুবে যাবেন এক অনন্য সংস্কৃতি, রঙিন আলো আর ছন্দের জগতে।
শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে রূপচর্চা, সঙ্গীত, খাবার আর প্রযুক্তির এক বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা। তাই সিউল ঘুরে দেখা মানেই একসঙ্গে পুরোনো ঐতিহ্য আর আধুনিক জীবনের স্বাদ নেওয়া। ছুটি কাটানোর জন্য এ বছরের আদর্শ ঠিকানা হতে পারে সিউল।
এই শহরে একসঙ্গে মেলে ইতিহাসের ছোঁয়া আর আধুনিকতার স্বাদ। আর সবচেয়ে বড় কথা, গরমে রোদ বেশি, শীতে ঠান্ডা কাঁপুনি ধরায়। তবুও সিউল ঘুরে দেখার জন্য খারাপ কোনো সময় নেই। ঋতু বদলের সঙ্গে বদলায় শহরের রূপ আর অভিজ্ঞতা। তাই সব সময়েই সিউল বিশেষ।
সিউলে কবে ভ্রমণে যাবেন, সেটা ঠিক করতে সাহায্য করবে ঋতুভিত্তিক এই গাইড। বছরের কোন সময় গেলে কেমন অভিজ্ঞতা মিলবে, তার একঝলক রইল এখানে।
বসন্ত (মার্চ থেকে জুন)
চেরি ব্লসম আর প্রেমের সুবাসে ভরা সিউল। সিউলের বসন্ত যেন একটি কবিতা। শহর জেগে ওঠে চেরি ফুলে সাদা-গোলাপি ছায়ায়। জনপ্রিয় স্পট ইয়োয়ুইদো পার্ক, হান নদীর তীর, আর নামসান পার্কে তখন ভিড় করে পর্যটক ও স্থানীয়রা।
শুধু ফুল নয়, এই সময় শহরের বাতাস থাকে হালকা ঠান্ডা ও পরিষ্কার। এছাড়া বসন্তে সিউলের রাস্তায়-রাস্তায় দেখা মেলে ছোট ছোট স্ট্রিট পারফরম্যান্স, সাংস্কৃতিক মেলা ও স্ট্রবেরি উৎসবের।
এপ্রিলের শুরুর দিকে গেলে চেরি ব্লসমের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
গ্রীষ্ম (জুলাই থেকে আগস্ট)
গরম, বৃষ্টি, কিন্তু থেমে নেই শহরের গতি। সিউলের গ্রীষ্ম আর্দ্র, মাঝে মাঝেই বৃষ্টি। কিন্তু শহরের গতি কমে না একটুও। বরং এই সময় কে–পপ কনসার্ট, ওপেন এয়ার ফেস্টিভাল আর নাইট মার্কেটগুলো জমজমাট থাকে।
যারা গরমে ঘুরতে আগ্রহী নন, তারা বেছে নিতে পারেন ইনডোর এক্সপ্লোরেশন। যেমন, এশিয়ার সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ শপিং মল কোএক্স। যেখানে আছে বিশাল অ্যাকুরিয়াম, আধুনিক লাইব্রেরি, সিনেমা হল ও ক্যাসিনো। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে ওঠে হংডে ও ইতায়েওন এলাকার রেস্টুরেন্ট ও ক্লাবগুলো।
ছাতা ও হালকা, পাতলা পোশাক নিতে ভুলবেন না। আর গরমের বিকেল কাটানোর জন্য ক্যাফেতে ঠান্ডা বিংসু (বরফের ডেজার্ট) চাই–ই চাই।
শরৎ (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর)
সিউলের সবচেয়ে জনপ্রিয় মৌসুম শরৎ। আকাশ থাকে ঝকঝকে নীল, বাতাস হালকা ঠান্ডা আর চারদিকে পাতার রঙ লাল, কমলা, হলুদ—দারুণ ছবি তোলার সময়। এই সময় কোরিয়ায় পালিত হয় ছুসক কোরিয়ান থ্যাঙ্কসগিভিং। শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো যেমন গিয়ংবকগুং প্রাসাদ সাজানো হয় ঐতিহ্যিক সাজে।
শরৎ মানেই হাইকিংয়ের সেরা সময়। বুখানসান ন্যাশনাল পার্ক বা নামসান ট্রেইল হয়ে উঠতে পারে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। আর যারা একটু আড়ালে শান্ত সময় কাটাতে চান, সামচিয়ংডং বা বুকচন হানক ভিলেজে ছোট্ট কোনো ক্যাফেতে বসে কাটিয়ে দিতে পারেন এক বিকেল।
অক্টোবরের মাঝামাঝি গেলে শরতের রঙ সবচাইতে উজ্জ্বল থাকে।
শীত (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)
সিউলের শীত তীব্র ঠান্ডার হলেও সেই সঙ্গে নিয়ে আসে এক ধরনের নিস্তব্ধ সৌন্দর্য। পর্যটক কম, ফলে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায় আরামেই। গিয়ংবকগুং বা চাংদেয়োকগুং প্রাসাদের টালির ছাদে যখন সাদা তুষার পড়ে, তখন সেগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ইতিহাসের কাহিনিতে।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে গরম ভাজা বাদাম, হটটক (ভাজা পিঠা জাতীয় খাবার) আর কিমচি স্টু খাওয়ার অভিজ্ঞতা—অন্যরকম। আর হ্যাঁ, চাইলে সিউল থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে গিয়ে স্কি করতে পারেন জিসান ফরেস্ট রিসোর্টে।
শীতে হিট প্যাক আর ভালো মানের জ্যাকেট সঙ্গে নিন।
প্রকৃতি ভালোবাসুন বা খাবার, হালকা ঠান্ডায় শহর দেখা পছন্দ হোক বা গরমে নাইট মার্কেট ঘোরা সিউল সব ঋতুতেই আপনাকে দেবে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। প্ল্যান করতে দেরি নয়, এই বছর একটা সময় রেখে দিন সিউলের জন্য।