অনেক পুরুষ আছেন, যারা মনে করেন তেলতেলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই। তাদের যুক্তি, ত্বক তো আগে থেকেই তেলতেলে এর ওপর আবার ময়েশ্চারাইজার লাগালে আরও তেল বের হবে। মুখ ব্রণেও ভরে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো।
এই ভুল ধারণার কারণে ত্বকে আরও সমস্যা বাড়ে। কারণ ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে যে তেল বের হয়। সেটা কিন্তু সবসময় পক্ষে কাজ করে না। বরং ত্বক আর্দ্রতা হারালে, শরীর তখন তেল তৈরি করে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চায়। তখনই মুখে অতিরিক্ত তেল জমে, রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। আর শুরু হয় ব্রণের উপদ্রব।
তাই যাদের ত্বক তেলতেলে, তাদের জন্যও ময়েশ্চারাইজার জরুরি। তবে সেটা হালকা ধরনের। কেন হালকা ময়েশ্চারাইজারই ব্যবহার করবেন,জানুন।
ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
হালকা ময়েশ্চারাইজার ত্বকে আর্দ্রতা জোগায় কিন্তু রোমছিদ্র বন্ধ করে না। এতে ত্বক মনে করে, ‘ঠিক আছে, আমার এখন পর্যাপ্ত আর্দ্রতা আছে, অতিরিক্ত তেল তৈরি করার দরকার নেই।’ ফলে ত্বক স্বাভাবিক থাকে, অতিরিক্ত তেল কমে যায়।
ডিহাইড্রেশন বা আর্দ্রতার ঘাটতি রোধ করে
তেলতেলে ত্বক মানেই আর্দ্র ত্বক নয়। অনেক সময় বাইরের দিকটা চকচকে থাকলেও ভিতরে ত্বক শুকিয়ে থাকে। হালকা ময়েশ্চারাইজার এই ঘাটতি পূরণ করে, আবার অতিরিক্ত ভারী ভাবও দেয় না।
ব্রণ কমাতে সাহায্য করে
ব্রণ সাধারণত হয় তেল, ধুলাবালি আর মৃত কোষ জমে রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে। হালকা, তেলমুক্ত ও ‘নন-কমেডোজেনিক’ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে রোমছিদ্র খোলা থাকে। ত্বক আর্দ্র থাকে, ব্রণও কম হয়।
ত্বকের মসৃণতা বাড়ায়
যত বেশি ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে, তত মসৃণ দেখাবে। তেলতেলে ত্বকে অনেক সময় রোমছিদ্র বড় দেখায়, আর ত্বকের টেক্সচারও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। হালকা ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও পরিষ্কার দেখায়।
ব্যবহারেও আরামদায়ক
হালকা ময়েশ্চারাইজার দ্রুত ত্বকে মিশে যায়। কোনো ভারী বা তেলতেলে অনুভূতি রাখে না। যারা রোজকার জীবনে কম ঝামেলার স্কিনকেয়ার চান, তাদের জন্য এটা একেবারে পারফেক্ট।
কেনার সময় কোন উপাদানগুলো দেখে নেবেন?
যাদের ত্বক তেলতেলে, তাদের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে ‘অয়েল-ফ্রি’ (অর্থাৎ তেল-মুক্ত) ও ‘নন-কমেডোজেনিক’ (মানে রোমছিদ্র বন্ধ করে না) লেখা আছে কি না, সেটা আগে দেখুন। এসব প্রোডাক্ট ত্বকে অতিরিক্ত তেল জমতে দেয় না। সেই সাথে রোমছিদ্র পরিষ্কার রাখে।
যেসব উপাদান ত্বকের জন্য উপকারী, সেগুলোর মধ্যে আছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। এটি ত্বকে গভীরভাবে আর্দ্রতা দেয়। গ্লিসারিন, যা ত্বককে নরম ও কোমল রাখে। আর অ্যালোভেরা, যা ত্বকে ঠান্ডা অনুভূতি দেয় ও জ্বালাপোড়া কমায়।
এসব উপাদানযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। আবার ভারী অনুভূতিও হয় না। তবে সাবধান। যেসব প্রোডাক্টে ভারী তেলজাতীয় উপাদান বা অতিরিক্ত কৃত্রিম সুগন্ধি আছে। সেগুলো এড়িয়ে চলুন। কারণ এসব থেকে ত্বকে অস্বস্তি, র্যাশ বা ব্রণ হতে পারে।
তাই নিজের ত্বকের ধরন বুঝে, ভেবেচিন্তে বেছে নিন হালকা, সঠিক উপাদানসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার।
ত্বক যতই তেলতেলে হোক, ময়েশ্চারাইজার বাদ দিলে হবে না। হালকা ময়েশ্চারাইজারই তেল নিয়ন্ত্রণ, ব্রণ কমানো ও ত্বককে মসৃণ রাখার চাবিকাঠি। তাই প্রতিদিনের রুটিনে একটা ভালো, হালকা ময়েশ্চারাইজার রাখুন। আর দেখবেন, ত্বকের জেল্লা নিজেই কথা বলবে।