সন্তানের বিকাশে বেশ কার্যকর ৭-৭-৭ নিয়ম। এই পদ্ধতিতে শিশুর বয়সকে তিন ধাপে ভাগ করা হয়। যেমন, ০-৭ বছর খেলার জন্য, ৭-১৪ বছর শেখানোর জন্য এবং ১৪-২১ বছর দিকনির্দেশনার জন্য। এই ধাপগুলো অনুযায়ী আপনার সন্তানের সৃজনশীলতা, জীবন দক্ষতা এবং স্বাধীনতা গড়ে তুলতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতি শিশুর সামাজিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমরা নিশ্চয় অনেকেই সম্পর্কের ৭-৭-৭ নিয়ম সম্পর্কে জানি। যেখানে প্রতি ৭ দিনে একবার কোথাও ঘুরতে যাওয়া, তারপর প্রতি ৭ সপ্তাহে একদিন ছোট্ট ভ্রমণের পরিকল্পনা এবং প্রতি ৭ মাসে একটি পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও যাওয়া। ঠিক একই ভাবে ৭-৭-৭ নিয়মটি অভিভাবকত্বেও প্রয়োগ করা যায়। এই নিয়ম আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশের পর্যায়গুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কী এই ৭-৭-৭ অভিভাবকত্ব নিয়ম?
এটি একটি অভিভাবকত্বের কৌশল যা আপনার সন্তানের জীবনের ২১ বছরকে তিনটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। যেমন, ০-৭ বছর, ৭-১৪ বছর এবং ১৪-২১ বছর। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে ৭ বছর করে সময় নিয়েছে। এগুলো আপনার সন্তানের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। ২১ বছর বয়সে, আপনার সন্তান কলেজ শেষ করে। এখন সে আরও স্বাধীন ও দায়িত্বশীল জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই ২১ বছর বয়স পর্যন্তই আপনি অভিভাবকত্বে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারেন।
তবে, আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যখন আপনার সন্তান টিনএজার হবে, তখন সে আরও বেশি স্বাধীন হতে চাইবে। এ কারণে আপনাকে অভিভাবকত্বের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি যেন আপনার সন্তানকে জোর কিছু করার জন্য বাধ্য করবেন না। বরং তাদের নিজস্ব আগ্রহ অনুসন্ধান করতে সুযোগ দিতে হবে।
এটি কীভাবে কাজ করে?
প্রথম সাত বছর: খেলার সময় (০ থেকে ৭ বছর)
এম ইয়োগম্যানের ‘এ পেডিয়াট্রিক রোল ইন এনহ্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট ইন ইয়াং চিলড্রেন’ শিরোনামের একটি লেখাতে তিনি শিশুর বিকাশের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। পর্যালোচনায় বলা হয়, খেলা শিশুর প্রথম কাজ, তারপর ভাষার বিকাশ এবং গাণিতিক উন্নয়ন। এই পর্যালোচনাটি একাধিক লেখক করেছেন। যেখানে সবাই উল্লেখ করেছেন যে, খেলা মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
ডি হোয়াইটব্রেডের ‘শিশুদের বিকাশে খেলার ভূমিকা: প্রমাণের পর্যালোচনা’ লেখাতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় খেলা শিশুদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দক্ষতা এবং একাডেমিক সাফল্যে সাহায্য করে।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম বছর: শেখানোর পর্যায় (৭ থেকে ১৪ বছর)
এই পর্যায়টি শুরু হয়, যখন আপনার সন্তান ৭ বছর বয়সী। আর এটি চলতে থাকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত। এটি শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধির প্রথম ধাপ হিসেবে ধরা হয়। এই সময় শিশু কাঠামোবদ্ধ ভাবে শিখতে শুরু করে। একই সাথে তাকে শেখানো হয় সামাজিকতাও। জেএ ডারলেকের একটি গবেষণার মতে, ‘শিশুদের সামাজিক এবং মানসিক শিক্ষা তাদের আচরণ, সম্পর্ক গড়ার ক্ষমতা এবং একাডেমিক সাফল্যকে অনেক ভালোভাবে প্রভাবিত করে।’ এই গবেষণাটি ২১৩টি স্কুলে সামাজিক এবং মানসিক শেখার প্রোগ্রাম বিশ্লেষণ করেছে। এছাড়া সামাজিক ও মানসিক দক্ষতা, মনোভাব, আচরণ এবং একাডেমিক পারফরম্যান্সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও খেয়াল করেছে।
এমডি হোল্ডারের ২০১৬ সালের একটি গবেষণা বলছে, যারা আধ্যাত্মিক বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেয়, তারা বেশি সুখী থাকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই আধ্যাত্মিকতার বিষয়গুলো রয়েছে। তবে এই সময়টাতে আপনার সন্তানের সবচেয়ে বেশি দিকনির্দেশনার প্রয়োজন। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তানের জীবনে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো শেখাতে হবে।
শেষ সাত বছর: পরামর্শ দেওয়ার পর্যায় (১৪ থেকে ২১ বছর)
এটি শেষ পর্যায়, তারপর সে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে এবং নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করবে। তবে এটি সেই সময়ও নয়, যখন আপনি তাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে হাত ধরে শেখাবেন। বরং আপনি তাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আপনি কীভাবে তাদের দিকনির্দেশনা দেবেন? আপনি তাদের উপদেশ দেবেন। কীভাবে কাজ করতে হয়, তা দেখানোর বদলে আপনি তাদের বলবেন, উদাহরণ দেবেন। কিন্তু তাদের কিছু করে দিবেন না। নিজেদের করতে সুযোগ দেবেন।
২০১৬ সালে জেকে এলিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কিশোর-কিশোরীকে পরিবারে আলোচনা করতে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে স্বতন্ত্রতা এবং সামাজিক দক্ষতা বেশি ছিল।
এই শেষ পর্যায়টি অভিভাবকদের জন্য কম মাইক্রো-ম্যানেজিং করা এবং বেশি পর্যবেক্ষণের সময়।
তথ্যসূত্র: টাইমস নাউ নিউজ