শিশুর অযথা বিরক্তি দূর করতে অনেকে অভিভাবকই টিভির সামনে বসিয়ে দেন। কাজটি খুব সহজ হলেও, রয়েছে নানা নেতিবাচক প্রভাব। অনেকে বিষয়টি জানলেও উপায় না পেয়ে এই পথই বেছে নেন।
সম্প্রতি এক মা হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। তার ৭ বছরের ছেলের টিভি দেখার অভ্যাস পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পেরেছেন। এতে শিশুর কোনো রকম সমস্যা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরো বিষয়টি নিকে কথাও বলেছে সেই মা। শিশুর মনে উপর কোন প্রভাব না ফেলে কিভাবে করবেন জেনে নিন।
টাইমস নাউয়ের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কাজটির ফলে তিনি যে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত তার ছেলের ভাষা, আচরণ এবং শারীরিক দিক থেকে অনেক উন্নতি ঘটিয়েছে। মা জানান, তাদের ছেলে আগে প্রতিদিন এক ঘণ্টা টিভি দেখত। সপ্তাহান্তে নিনটেনডো সুইচ খেলত। তবে এখন টিভি এবং সুইচ দুটোই বন্ধ করা হয়েছে।
বর্তমানে, ছেলেটি বই পড়তে বেশি আগ্রহী। বাইরে খেলতে যায়। নিজের কাজ নিজে করে। আর মা-বাবার সঙ্গে আরও ভালোভাবে কথা বলে। তার ভাষার দক্ষতাও বেড়েছে। সে এখন আরও মনোযোগী হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, টিভি এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস শিশুদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে কয়েকটি কারণে এর প্রভাব ব্যাখ্যা করা হলো-
ভাষার উন্নতি ব্যাহত: শিশুরা সাধারণত মানুষের সঙ্গে কথা বলে ভাষা শেখে। অতিরিক্ত টিভি দেখলে শিশুর মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কমে যায়। যার ফলে ভাষা শেখার গতি শ্লথ হতে পারে।
মনোযোগের সমস্যা: টিভি শোতে দ্রুত দৃশ্য পরিবর্তন হয়। যা শিশুর মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন করে দেয়। ফলে তারা ধীর গতির কাজ যেমন, বই পড়া বা খেলাধুলায় মনোযোগী হতে পারে না।
বুদ্ধিমত্তার বিকাশে বাধা: স্মৃতি, সমস্যা সমাধান এবং সৃজনশীলতা গড়ার জন্য খেলাধুলা এবং সক্রিয় প্রচেষ্টা জরুরি। টিভি অতিরিক্ত দেখলে এসব শেখার সুযোগ কমে যায়।
ঘুমের সমস্যা: টিভি পর্দার আলো শিশুর ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমোন মেলাটোনিনের মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে। ফলে তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
আচরণগত সমস্যা: অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে শিশুর মধ্যে আচরণগত সমস্যা, যেমন অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক মনোভাব বা আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শারীরিক স্বাস্থ্য: টিভি দেখতে বসে থাকার ফলে শিশুর শারীরিক গতিবিধি কমে যায়। যা স্থুলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সামাজিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা: টিভি দেখে শিশুদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলা বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ কমে যায়। যার ফলে তাদের সামাজিক দক্ষতা উন্নত হতে পারে না।
এ কারণে বিশেষজ্ঞরা শিশুদের টিভি দেখার সময় সীমিত রাখার পরামর্শ দেন। যা তাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য উপকারী হতে পারে।