অফিস ডেস্ক ছেড়ে নারকেল গাছের ছায়ায় দোল খাওয়া একটা হ্যামকে শুয়ে থাকার স্বপ্ন কার না দেখতে ভালো লাগে। কিংবা স্বচ্ছ নীল পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢেউয়ের ছন্দে হারিয়ে যেতে নিশ্চয় চান? যদি এমন কোনো ভাবনা আপনার মনে ঘোরাফেরা করে। তবে বুঝবেন এশিয়ার সৈকতগুলো আপনাকে ডাকছে। আর ২০২৫ সাল আপনার জন্য হতে পারে সেই ডাক শোনার আদর্শ সময়।
খুব দূরে কোথাও যেতে হবে না, এশিয়াতেই রয়েছে চমৎকার সব সৈকত। প্রতিটিই সৈকত যেন তার ভিন্ন মেজাজ, সৌন্দর্য ও মোহ নিয়ে হাজির। চলুন দেখে নেওয়া যাক এশিয়ার সবচেয়ে চমকপ্রদ ৭টি সৈকত। যা আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখতেই পারেন।
কেলিংকিং সৈকত, নুসা পেনিদা, বালি, ইন্দোনেশিয়া
বালির সবচেয়ে আইকনিক দৃশ্যগুলোর একটি কেলিংকিং বিচ। ওপর থেকে দেখলে পাহাড়ি গঠনটি যেন ডাইনোসরের মাথার মতো দেখতে। যা একটি সৈকতে নেমে গেছে। নিচে নামার পথ খাড়া ও দুঃসাধ্য। তবে এখানে গেলে প্রকৃত অভিযাত্রার স্বাদ মিলবেই। আর নিচে আপনার জন্য যা অপেক্ষা করছে, তা নিখাদ প্রাকৃতিক মোহ। দিগন্তজোড়া নীল জলরাশি আর বিশাল পাহাড়ে ঘেরা এক নির্জন সৈকত।
পিঙ্ক বিচ, কোমোডো দ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া
বাস্তবে এই বিচটি দেখতে অনেক সুন্দর, যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়। সাদা বালির সঙ্গে মিশে মাইক্রোস্কোপিক লাল অণুজীব। যা তৈরি করেছে প্রাকৃতিক গোলাপি ছায়া। এখানে সমুদ্রের নিচে দেখা মিলবে রঙিন প্রবাল আর খেলায় মগ্ন মাছ। আপনি যদি সৌভাগ্যবান হন তবে কচ্ছপের সঙ্গেও দেখা হয়ে যেতে পারে। কোমোডো দ্বীপে এলে অবশ্যই কমোডো ড্রাগনের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে ভুলবেন না।
মিরিসা বিচ, শ্রীলঙ্কা
মিরিসা মানেই নির্ভার এক ‘বেয়ারফুট ট্রাভেলার’ অভিজ্ঞতা। দারুণসব কাফে, সোনালি বালিতে ছোটাছুটি আর সার্ফিংয়ের জন্য সেরা একটি স্থান হতে পারে এটি। এখানে সময় যেন থেমে থাকে। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এখানের খাবারের স্বাদ আপনাকে তৃপ্ত করবে। এখানে কী খাবেন সেটি ঠিক করতেও আপনার অনেক চিন্তা করতে হবে। কোনটি ছেড়ে কী খাবেন। এখানে নারকেল প্যানকেক আর টাটকা মাছ বেশ জনপ্রিয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল, এই সময়টা এখানে তিমির দেখা মেলে। এটি বিশ্বের সেরা জায়গাগুলোর একটি।
নিহিওয়াতু বিচ, সুম্বা দ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া
প্রচলিত পথ ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ালেই পাবেন নিহিওয়াতুর জাদু। সুম্বা দ্বীপের একান্তে অবস্থিত এই সৈকত সত্যিকারের বিলাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব মেলবন্ধন। এখানে আছে ‘গড’স লেফট’ নামক সেরা সার্ফিং ওয়েভ আর বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল ইকো-রিসোর্ট। অ্যাডভেঞ্চার আর আরামের যুগল চাইলে এই সৈকত আপনার জন্য।
নাকপান বিচ, পলাওয়ান, ফিলিপাইন
যারা পর্যটকের ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতিকে একান্তে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য আদর্শ নাকপান বিচ। এল নিডো থেকে প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা। এই ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত এখনও বেশ নির্জন। বড় রিসোর্ট নেই। শুধু ছোট কুঁড়েঘর, নারকেল গাছ আর হালকা ঢেউ। স্কুটার নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কাছের টুইন বিচ ঘুরে দেখতে পারেন। যেখানে নাকপান ও ক্যালিতাং সৈকত একসঙ্গে মিশেছে।
রেইলি বিচ, ক্রাবি, থাইল্যান্ড
রেইলি বিচ শুধু সৈকত নয়, যেন এক গোপন স্বর্গ। চারপাশে সুউচ্চ চুনাপাথরের পাহাড়। যা জাহাজ ছাড়া আর কোনো পথেই পৌঁছনো যায় না। সকালবেলা পাহাড়ে উঠে চোখ জুড়ানো দৃশ্য উপভোগ করুন। দুপুরে সিল্কি স্যান্ডে শুয়ে রোদ পোহান কিংবা কায়াক নিয়ে গোপন জলাভূমিতে ঘুরে আসুন। সন্ধ্যায় পায়ের নিচে বালির ছোঁয়া নিয়ে সামুদ্রিক মাছ দিয়ে এক থালা ভোজন সেরে নিন।
হোয়াইট বিচ, বরাকায়, ফিলিপাইন
বরাকায়ের হোয়াইট বিচ সাম্প্রতিক সংস্কারে যেন নতুন আলোয় ঝলমল করছে। ৪ কিমি দীর্ঘ এই সৈকতের বালি এতই মিহি, যেন ময়দা। স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটুন। কিংবা সৈকতের ধারে কাফেতে বসে সামুদ্রিক খাবার খেতে পারেন। তবে এখানে এলে তাদের ম্যাংগো শেক উপভোগ করতে একদম ভুল করবেন না। দিনভর প্যারাসেইলিং আর রাতে ককটেলের আনন্দ, বরাকায়ের প্রাণচাঞ্চল্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
এই ৭টি সৈকত শুধু ঘুরে দেখার নয়। প্রতিটিই একেকটি অভিজ্ঞতা, যা আপনার মন থেকে কখনও মুছে যাবে না।
তথ্যসূত্র: টাইমস নাউ