ঈদ মানেই আনন্দ। আর সেই আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে যায় শিশুদের চোখে-মুখে হাসি দেখলে। নতুন জামা, সেমাই, সালামি, এসবের বাইরেও ছোটরা খুঁজে ফেরে একটু মুক্ত হাওয়া। একটু খেলার জায়গা। ঈদের ছুটিতে সারাদিন ঘরে বসে থাকতে কারই বা ভালো লাগে? তাই তো বাবা-মায়েরা খুঁজে বেড়ান এমন কিছু জায়গা, যেখানে শিশুরা খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি আর আনন্দে সময় কাটাতে পারে নিরাপদে।
ঢাকায় অনেক জায়গাই আছে যেখানে ঈদের ছুটিতে শিশুদের নিয়ে ঘুরে আসা যায় স্বস্তিতে। কোথাও আছে প্রকৃতির ছোঁয়া, কোথাও রোমাঞ্চকর রাইড। আবার কোথাও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ। চলুন জেনে নিই ঢাকায় ঈদের ছুটিতে শিশুদের নিয়ে ঘোরার সেরা কিছু জায়গার কথা।
জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা দেশের অন্যতম বড় এবং পুরোনো চিড়িয়াখানা। প্রায় ৭৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে প্রায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী, যার মধ্যে দেশি-বিদেশি সিংহ, বাঘ, হরিণ, জেব্রা, ভালুক, কুমির, উট, বানর, নানা রকম পাখি ও সরীসৃপ আছে।
বিশেষ আকর্ষণ
- শিশুদের জন্য আলাদা খেলার জায়গা ও হরিণ দেখার স্পট।
- হাঁটার জন্য খোলা চওড়া রাস্তা।
প্রবেশ মূল্য: প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ টাকা। আর ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য থাকছে বিনামূল্যে।
সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা
বিমান বাহিনী জাদুঘর, আগারগাঁও
এটি একটি ওপেন-এয়ার জাদুঘর। যেখানে শিশু-কিশোররা বাস্তবে দেখতে পাবে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, রাডার ও সামরিক সরঞ্জাম। এখানে রয়েছে বিমান বাহিনীর ইতিহাস তুলে ধরার জন্য নানা গ্যালারি এবং একটি ছোট লেক।
বিশেষ আকর্ষণ
- বাস্তব বিমান ও হেলিকপ্টারে চড়ার অনুভূতি।
- ছোট নৌকায় লেক ভ্রমণ।
- শিশুদের জন্য খেলাধুলার জায়গা।
- টয় ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ।
প্রবেশ মূল্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা। সামরিক বাহিনীর পরিবারের সদস্য ২৫ টাকা।
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
বাবুল্যান্ড, ঢাকা
বর্তমান সময়ে বাবুল্যান্ড ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় ইনডোর শিশু বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এটি একটি নিরাপদ ও ক্লাইমেট-কন্ট্রোল্ড প্লে-জোন। যেখানে নানা রকম মজার গেমস, রাইড ও স্লাইড রয়েছে। মিরপুর, ধানমন্ডি, উত্তরা, বনানীসহ ঢাকার বেশ কিছু জায়গায় শাখা রয়েছে।
বিশেষ আকর্ষণ
- বল পুল, ট্রাম্পোলিন, রেইনবো স্লাইড, ক্লাইম্বিং দেয়াল।
- শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দৌড়াদৌড়ি ও খেলাধুলা করতে পারে।
- হাইজিন এবং সুরক্ষার জন্য আলাদা টিম।
প্রবেশ মূল্য (প্রতি ২ ঘণ্টা): শিশু ৪ ফুট ৩ ইঞ্চির নিচে হলে ৪০০ টাকা। আর অভিভাবকদের জন্য ১৫০ টাকা।
টগি ফান ওয়ার্ল্ড, বসুন্ধরা সিটি
এটি দেশের অন্যতম বড় ইনডোর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর একটি। ৮ম থেকে ১৮তম তলা পর্যন্ত বিস্তৃত এই জায়গাটিতে নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার, ভার্চুয়াল গেমস এবং রাইড রয়েছে।
বিশেষ আকর্ষণ
- ভিআর গেমস, বাম্পার কার, জিপ রাইড, রোলার কোস্টার।
- বাচ্চাদের জন্য নির্দিষ্ট প্লে জোন।
- ফুড কোর্ট ও ফ্যামিলি জোন।
প্রবেশ মূল্য: ১৫০ টাকা হলেও রাইড ও গেমের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা প্যাকেজ। যার শুরু ৫০০ টাকা থেকে।
লালবাগ কেল্লা, পুরান ঢাকা
মোগল আমলের এই ঐতিহাসিক দুর্গটি শিশুদের জন্য একটি ইতিহাসের জীবন্ত পাঠশালা। এখানে রয়েছে শাহী মসজিদ, দরবার হল, স্নানাগার, জাদুঘর ও পরী বিবির মাজার।
বিশেষ আকর্ষণ
- মোগল স্থাপত্য দেখার সুযোগ।
- সবুজ ঘাসে খেলার মতো জায়গা।
- পারিবারিক পিকনিক ও ছবি তোলার ভালো পরিবেশ।
প্রবেশ মূল্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। আর শিশু ও শিক্ষার্থী জন্য ১০ টাকা।
সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা।
সামরিক জাদুঘর, বিজয় সরণি
এই আধুনিক জাদুঘরে রয়েছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জাম, মডেল যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক, সাবমেরিন, বিমানের প্রদর্শনী। এখানে শিশুরা চোখে দেখে শিখতে পারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত ইতিহাস।
বিশেষ আকর্ষণ
- শিশুদের জন্য ইন্টার্যাক্টিভ ডিসপ্লে।
- ভিডিও টিউন ও মিনি থিয়েটার।
প্রবেশ মূল্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০ টাকা।
হাতিরঝিল লেক
শহরের মাঝখানে অবস্থিত এই চমৎকার লেকটি শুধু হাঁটার জায়গাই নয়। বরং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর এক অনন্য স্থান। সন্ধ্যার পর আলোর ঝলকানি ও ঠাণ্ডা বাতাস শিশুর মন ভালো করে দেয়।
বিশেষ আকর্ষণ
- ওয়াটার ট্যাক্সি ভ্রমণ।
- ব্রিজ থেকে ঢাকার সুন্দর দৃশ্য উপভোগ।
- খোলা আকাশের নিচে হাঁটা ও খেলা।
বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর
প্রায় ২০৮ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই গার্ডেনে রয়েছে প্রায় ৮০০ প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদ। এটি শিশুদের জন্য একটি প্রাকৃতিক শিক্ষাকেন্দ্র। যেখানে তারা গাছ, পাখি ও সবুজ পরিবেশ উপভোগ করতে পারে।
বিশেষ আকর্ষণ
- গাছ চিনে শেখা।
- হাঁটার জন্য খোলা এলাকা।
- ছোট লেক ও পাখির বাসস্থান।
প্রবেশ মূল্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। আর শিশুদের জন্য ৫ টাকা।
ঈদের ছুটিতে ঘরবন্দি না থেকে শিশুদের নিয়ে শহরের মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন এসব স্থানে। আনন্দের পাশাপাশি শেখার সুযোগও পাবে তারা। তবে যেখানেই যান, শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সদা সচেতন থাকুন।