সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

মধ্যবিত্ত কারা? কেন চেনা দরকার?

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

উত্তম ও অধম থেকে তফাতে চলা ব্যক্তিটিই মধ্যম। এই পর্যন্ত এসে যারা একটু নাক উঁচু করলেন, তাঁদের জন্য বলতে হয়–এই মধ্যম কিন্তু ওই দুই প্রান্তের সংযোগ সেতুও। তাই এই সেতুটিকে চেনাটা জরুরি। সেটা অর্থনৈতিক ও সামাজিক শ্রেণি–দুই বিবেচনাতেই।

মধ্যবিত্ত মানে কী
মধ্যবিত্ত একটি বিশেষণ পদ। এর বাংলা ব্যাকরণগত অর্থ হলো, ‘ধনী‑দরিদ্রের মধ্যবর্তী অবস্থাপন্ন গৃহস্থ; বিশেষ ধনী বা নিতান্ত দরিদ্র নয় এমন।’ বাংলা অভিধানের দেওয়া এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, মধ্যবিত্ত অবশ্যই অবস্থাপন্ন। অর্থাৎ, অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্তরা স্বচ্ছল থাকে। মূলত দরিদ্র অবস্থা থেকে ধনীর দিকে যে যাত্রা, তার যাত্রাবিরতি এই মধ্যবিত্তে ঘটে।

মধ্যবিত্ত শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Middle Class’। ক্যামব্রিজ ডিকশনারি এর অর্থ হিসেবে বলছে, ‘এটি একটি সামাজিক গোষ্ঠী, যাতে সুশিক্ষিত মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন: চিকিৎসক, আইনজীবী ও শিক্ষকেরা, যাদের অর্থ উপার্জনের ভালো উৎস থাকে এবং এরা গরিব নয়, তবে খুব ধনীও হয় না।’

প্রতীকী ছবিআর ব্রিটানিকা ডিকশনারি বলছে, ‘মধ্যবিত্ত একটি নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণি। উচ্চ ও নিম্নবিত্তের মাঝখানে এর অবস্থান। মূলত এই শ্রেণিতে থাকে ব্যবসা‑বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ও পেশাজীবী মানুষেরা। পেশাজীবীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি–উভয়ই থাকে। পাশাপাশি থাকে দক্ষ শ্রমজীবীরাও।’

অর্থাৎ, মধ্যবিত্তরা ঠিক গরিব মানুষের মতো অভাবে ভোগে না। তবে স্বচ্ছল হলেও মাত্রাতিরিক্ত অর্থ‑বিত্ত তাদের থাকে না। সবই থাকে মাঝামাঝি।

মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা কী
যেকোনো কিছুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গেলেই সাধারণত কিছু পরিমাপকের প্রয়োজন হয়। কিছু চিহ্নের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। সেসব বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেই আগে থেকে নির্ধারিত সংজ্ঞার সাথে মেলানো সম্ভব হয়।

সমস্যা হলো, বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত বা মিডল ক্লাসের সংজ্ঞায়ন নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা আছে। কোনো পক্ষ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যবিত্তকে চিহ্নিত করে। আবার কোনো পক্ষ মনে করে, মধ্যবিত্তকে সমাজতত্ত্বের নিরিখে বিচার করা উচিত। কারণ, দিনশেষে এটি একটি সামাজিক স্তরভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস। অনেকেই আবার মধ্যবিত্তের সংজ্ঞায়ন বা মধ্যবিত্তকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডকে গুরুত্ব দিতে বলেন। কারণ, তাঁদের মতে অর্থের পাশাপাশি এই সবকিছু মিলিয়েই একটি সামাজিক শ্রেণি মধ্যবিত্ত নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে নানা মতের কারণে মূল যে সমস্যাটি হয়েছে, সেটি হলো–পুরো বিশ্বে মধ্যবিত্তের একটি সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা গড়ে ওঠেনি।

তবে হ্যাঁ, আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যবিত্ত নির্বাচনের নানা পদ্ধতি আছে। যেমন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি মনে করে, দৈনিক আয় ২ থেকে ২০ ডলারের মধ্যে হলে মধ্যবিত্তের আওতায় পড়ে। এই হিসাব কিন্তু ২০০৫ সালের ডলার পিপিপি বা ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার ভিত্তিতে তৈরি। এটি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতিও বটে। তবে বিভিন্ন দেশ আবার নিজেদের উপযুক্ত বা পছন্দের বিভিন্ন সংজ্ঞা বা চিহ্নিত করার পদ্ধতিও প্রণয়ন করে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যভেদে মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক সংজ্ঞায়ন ভিন্ন। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট মোট জনগোষ্ঠীর মিডিয়ান ইনকামের (গড় আয়) ৭৫ থেকে ১২৫ শতাংশ আয় করতে পারলে মধ্যবিত্তের তকমা মেলে। এ তো গেল একেবারে কথিত সর্বোচ্চ উন্নত দেশের উদাহরণ। এর বাইরে ভারতের পদ্ধতিকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। সেখানে এখন পর্যন্ত বছরে ৩ লাখের কিছু বেশি থেকে ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত আয় করলে মধ্যবিত্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট আবার এ ব্যাপারে ভিন্ন মাপকাঠি অনুসরণের কথা বলে। অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)‑এর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময়ের হার বিবেচনায় যেসব পরিবার বছরে ৩ হাজার ডলার থেকে ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য আয় করে থাকে, তাদেরই ধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

অন্যদিকে বিখ্যাত পিউ রিসার্চ সেন্টার মধ্যবিত্ত ও অন্যান্য ক্যাটাগরির জন্য একটি মান নির্ধারণ করেছে। যেমন, চার সদস্যের একটি পরিবারের দৈনিক আয় যদি ১০ ডলার ১ সেন্ট থেকে ২০ ডলারের মধ্যে হয়, তবে তারা মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে এই শ্রেণির মানুষের বার্ষিক আয় ১৪ হাজার ৬০০ থেকে ২৯ হাজার ২০০ ডলার। আর বাকি শ্রেণিগুলোর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে–দৈনিক ২ ডলার বা এর কম আয় হলে দরিদ্র, ২ ডলার ১ সেন্ট থেকে ১০ ডলারের মধ্যে আয় হলে নিম্ন আয়ের, ২০ ডলার ১ সেন্ট থেকে ৫০ ডলার হলে উচ্চমধ্যবিত্ত এবং ৫০ ডলারের ওপর হলে তাকে উচ্চবিত্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। হিসাবটি করা হয়েছে ২০১১ সালের ক্রয়ক্ষমতার (পিপিপি) মানের ভিত্তিতে।

 প্রতীকী ছবিএখানে ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা বা সমতা বা ইংরেজিতে ‘পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি)’ নিয়ে একটু ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। অল্প কথায় বললে, বিশ্বের দেশে দেশে যেহেতু বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম কম‑বেশি হয়, সে জন্য বিভিন্ন দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানকে তুলনীয় করার জন্য পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি নামক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে নমিনাল জিডিপিকে ‘পিপিপি ডলারে জিডিপি’তে রূপান্তরিত করা হয়।

যা হোক, এতক্ষণ মূলত উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন–এই তিন ভাগের কথা ভেবেই আলোচনা হচ্ছিল। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মধ্যবিত্তের মধ্যেও একাধিক স্তর রাখার কথা বলেন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এসথার ডুফলো মধ্যবিত্তকে দুই ভাগে ভাগ করার পক্ষে। তাঁদের মতে, যাদের প্রতিদিনের আয় ২ থেকে ৬ ডলার, তাদের নিম্নমধ্যবিত্ত অভিহিত করা প্রয়োজন। আবার যাদের দৈনিক আয় ৬ থেকে ১০ ডলার, তাদের উচ্চমধ্যবিত্ত বলা যায়।    

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন একটি নিবন্ধে বলছে, মধ্যবিত্ত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি পরিমাপককে মাথায় রাখা প্রয়োজন। এগুলো হলো 3C বা তিনটি সি। যথাক্রমে ক্যাশ, ক্রিডেনশিয়ালস ও কালচার। ক্যাশ বলতে বোঝানো হয়েছে আর্থিক অবস্থা, সঙ্গতি, সম্পদের পরিমাণ ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তির বিষয়গুলো। ক্রিডেনশিয়ালস বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষাগত অর্জন ও যোগ্যতা এবং পেশাগত মর্যাদাকে। আর কালচার বলতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও মানসিক গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন আরও বলছে, এই তিনটি পরিমাপকই নানাভাবে একে‑অপরকে প্রভাবিত করে। যেমন: শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি থাকলে তা আয় বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। অন্যদিকে এক ধরনের সুনির্দিষ্ট সামাজিক মর্যাদা যুক্ত কর্মসংস্থানের উৎস থাকলে, তাও মধ্যবিত্তে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে যুক্তি তৈরি করে।

সমাজতান্ত্রিক কাঠামোয় মধ্যবিত্তকে বুর্জোয়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জার্মান দার্শনিক ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক কার্ল মার্ক্স বলেছেন, মধ্যবিত্তরা মূলত বুর্জোয়া শ্রেণির একটি অংশ। একে পেটি বুর্জোয়া বলা যেতে পারে। সমাজতান্ত্রিক ভাবনা অনুযায়ী, পুঁজিবাদ সব সময় শ্রমিক শ্রেণির বিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাদের হয়ে কাজ করে বুর্জোয়া শ্রেণি, দমিয়ে রাখতে চায় শ্রমিক শ্রেণি বা প্রলেতারিয়েতদের। আর এই বুর্জোয়াদের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখে মধ্যবিত্তরা।

ছবি: সংগৃহীতঅর্থাৎ, বোঝা গেল যে, মধ্যবিত্ত এমন একটি সামাজিক শ্রেণি, যাতে অন্তর্ভুক্তির শর্তসমূহের পরিধি অনেক ব্যাপক এবং এ নিয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে নিখুঁত সমঝোতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তবে যেসব দেশ মধ্যবিত্ত নিয়ে ভাবে, চিন্তা করে এবং এই শ্রেণিকে আর্থিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে আক্ষরিক অর্থেই প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা এ ক্ষেত্রে নিজস্ব জাতীয় সংজ্ঞা বা পরিমাপক পদ্ধতির সূচনা করেছে। এবং তাতে সেসব দেশগুলো উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে বলা চলে।

অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বিশেষজ্ঞ এও বলছেন যে, আধুনিক সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে। প্রকট আয়বৈষম্যের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন। আর এর মধ্য দিয়ে লাভবান হচ্ছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ অতিধনীরা।

মধ্যবিত্ত কেন প্রয়োজন?
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে মধ্যবিত্তের উত্থানকে বিবেচনা করা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিকদের মত হচ্ছে, একটি দেশে যখন মধ্যবিত্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন সে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শক্ত ভিত্তি পায়। একই সাথে সেই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যক্রম গতি পায়।

অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এসথার দুফলো ২০০৭ সালে বিশ্বের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। সেই গবেষণায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে মধ্যবিত্তের কয়েকটি প্রধান ভূমিকার কথা উঠে আসে। প্রথমত, মধ্যবিত্ত শ্রেণি সাধারণত উদ্যোক্তা বেশি তৈরি করে। এতে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে কর্মসংস্থানও। দ্বিতীয়ত, মধ্যবিত্তরা মানব পুঁজি তৈরিতে বিনিয়োগ করতে চায়, সঞ্চয়ের ওপর জোর দেয়। এতে করে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা শিক্ষার সুযোগ দরিদ্রদের তুলনায় বেশি পায়। ফলে প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি সৃষ্টির বা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত সহায়ক। তৃতীয়ত, মধ্যবিত্তের হাতে দরিদ্রদের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ থাকে। ফলে দরিদ্রদের তুলনায় বেশি ভোগ করে মধ্যবিত্তরা। যেকোনো বাজারকে চাঙা রাখার জন্য এই ভোগ অতীব প্রয়োজন। এতে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হয়, যা বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করে।

এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক। ছবি: রয়টার্সএশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ২০১০ সালের অক্টোবরে বৈশ্বিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিল। এর শিরোনাম ছিল, ‘Who are the Middle Class and What Values do They Hold? Evidence from theWorld Values Survey’। এই গবেষণায় আর্থিক বা সামাজিক সূচকে মধ্যবিত্ত নির্ণয়ের বদলে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছিল। মূলত কারা নিজেদের মধ্যবিত্ত মনে করেন, সেই দাবিটিকে প্রাধান্য দিয়ে এরপর বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। গবেষকেরা বলেছেন, যেসব দেশে উচ্চহারে বৈষম্য থাকে, সেসব দেশে আয়ের ভিত্তিতে নিজেদের মধ্যবিত্ত দাবি করার প্রবণতা কম। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার বৃদ্ধি মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সমানুপাতিক। অর্থাৎ, মধ্যবিত্তের সংখ্যা যত বাড়ে, রাজনীতি নিয়ে আগ্রহের পরিমাণ তত বাড়ে। কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক সচেতনতা সাধারণত উচ্চ ও নিম্নবিত্তের তুলনায় বেশি থাকে। এবং বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেই এই চিত্র পাওয়া গেছে। কারণ, মধ্যবিত্ত শ্রেণি তুলনামূলক ভালো পণ্য ও সেবা পাওয়ার চাহিদা জানায়। সেই সঙ্গে মধ্যবিত্তরা দেশের সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে চায়। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকার যত বড় হতে থাকে, তত ভালো পণ্য ও সেবা পাওয়ার চাহিদা বাড়ে। বাড়ে সরকারের অধিকতর জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবিও।

ওইসিডি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে লিখেছিল, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রায়শই মধ্যবিত্তরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এক অর্থে কোনো ভৌগলিক এলাকার সামগ্রিক সম্পদ বৃদ্ধিও। আর যখনই সমাজে ধন‑সম্পদের পরিমাণ বাড়ে, তখন গণতান্ত্রিক চর্চা ও অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো এবং দুর্নীতির পরিমাণ কমানোর তাগিদও বাড়ে। ফলে সুশাসনের ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয় এবং এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এসবের পক্ষে সমর্থন আসলে আসে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছ থেকেই। কারণ, এই শ্রেণির কাছেই সুস্থির গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে। আর এভাবেই মধ্যবিত্তের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে দেশ ও সরকারের স্থিতিশীলতার পথ উন্মুক্ত হয়।

ছবি: এআইয়ের সহায়তায় তৈরিএর বাইরে একটি সমাজের সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও মধ্যবিত্ত শ্রেণি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি একটি সমাজে নতুন নতুন সাংস্কৃতিক উপাদান যোগ করে এবং পুরোনো উপাদানকেও হালনাগাদ করার চেষ্টা চালায়।

অর্থাৎ, মধ্যবিত্ত শ্রেণি যেমন কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকে সুস্থির করতে প্রয়োজন, তেমনি সেই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে শক্ত ভিত্তি দিতেও অতীব দরকার। মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়াতে কাজ করে। আবার এই শ্রেণিভুক্ত মানুষেরাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তুলনামূলকভাবে বেশি অংশ নেয়। হ্যাঁ, অঞ্চলভেদে এসব বৈশিষ্ট্যের প্রাবল্যের মাত্রার রকমফের হয় বটে। তবে অনুপস্থিত কখনো থাকে না।

লেখক: উপবার্তা সম্পাদক, ডিজিটাল বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন

আগামীকাল পড়ুন তৃতীয় পর্ব: বৈশ্বিক মধ্যবিত্তের আকার কত, অবস্থা কী?

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যায় বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। সেই ২০২২ সাল থেকেই বেশি। একটি দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বিতর্কিত করে, দমন করার চেষ্টা করে, কেবলই পুরুষের যৌনবস্তু...
পয়লা বৈশাখ শুধু একটি দিন বা উৎসব নয়–এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক। বাংলা নববর্ষের এই দিনটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য, ঐক্য ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইংরেজি নববর্ষের মতো...
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যাই হলো, এ দেশে আদর্শ নায়ক বা ব্যক্তিত্বের অভাব। আমরা যাদের আইডল বানাই, সময়ের ফেরে তারাই এমন রূপ পরিগ্রহ করে যে, শ্রদ্ধার বারোটা বেজে যায় একেবারে। তারা এমন সব কাজ করতে...
এ দেশে আসলে কোন বিষয়টির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে, তাহলে তালিকার প্রথম দিকেই হয়তো চলে আসবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ‘হা হা’ রিঅ্যাকশন!  স্বাভাবিকভাবেই যাদের বেশি হাসি পায় বা যারা অট্টহাসি দেয়,...
তারেক রহমানের বিরোধিতাকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিশ্বব্যাপী এআই প্রযুক্তির উচ্চ চাহিদার শক্তিতে রেকর্ড মুনাফার মুখ দেখেছে তাইওয়ান সেমিকনডাকটর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি), যাদের গ্রাহক তালিকায় আছে অ্যাপল, এনভিডিয়া, এএমডি, কোয়ালকমের মতো...
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক সমাবেশে হামলা ও সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একইসঙ্গে সংগঠনটি...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.