আগেই বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত বা মিডল ক্লাসের সংজ্ঞায়ন নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা আছে। কোনো পক্ষ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যবিত্তকে চিহ্নিত করে। আবার কোনো পক্ষ মনে করে, মধ্যবিত্তকে সমাজতত্ত্বের নিরিখে বিচার করা উচিত। অনেকেই আবার মধ্যবিত্তের সংজ্ঞায়ন বা মধ্যবিত্তকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডকে গুরুত্ব দিতে বলেন। কারণ, তাঁদের মতে অর্থের পাশাপাশি এই সবকিছু মিলিয়েই একটি সামাজিক শ্রেণি মধ্যবিত্ত নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে নানা মতের কারণে মূল যে সমস্যাটি হয়েছে, সেটি হলো–পুরো বিশ্বে মধ্যবিত্তের একটি সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা গড়ে ওঠেনি।
তবে হ্যাঁ, আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যবিত্ত নির্বাচনের নানা পদ্ধতি আছে। যেমন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি মনে করে, দৈনিক আয় ২ থেকে ২০ ডলারের মধ্যে হলে মধ্যবিত্তের আওতায় পড়ে। এই হিসাব কিন্তু ২০০৫ সালের ডলার পিপিপি বা ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার ভিত্তিতে তৈরি। এটি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতিও বটে। আবার ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)‑এর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময়ের হার বিবেচনায় যেসব পরিবার বছরে ৩ হাজার ডলার থেকে ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য আয় করে থাকে, তাদেরই মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।তবে বিভিন্ন দেশ আবার নিজেদের উপযুক্ত বা পছন্দের বিভিন্ন সংজ্ঞা বা চিহ্নিত করার পদ্ধতিও প্রণয়ন করে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যভেদে মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক সংজ্ঞায়ন ভিন্ন। এ বিষয়ে আগের পর্বে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
তারপরও দীর্ঘ আলোচনায় স্মৃতিবিভ্রম ঠেকাতে কিছু বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া যাক। অধিকাংশ মানদণ্ডই মধ্যবিত্ত শ্রণিকে চিহ্নিত করতে উচ্চ ও নিম্ন চিহ্নিত করে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মধ্য ধাপকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মধ্যবিত্তের মধ্যেও একাধিক স্তর রাখার কথা বলেন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এসথার ডুফলো মধ্যবিত্তকে দুই ভাগে ভাগ করার পক্ষে। তাঁদের মতে, যাদের প্রতিদিনের আয় ২ থেকে ৬ ডলার, তাদের নিম্নমধ্যবিত্ত অভিহিত করা প্রয়োজন। আবার যাদের দৈনিক আয় ৬ থেকে ১০ ডলার, তাদের উচ্চমধ্যবিত্ত বলা যায়।
আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন একটি নিবন্ধে বলছে, মধ্যবিত্ত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি পরিমাপককে মাথায় রাখা প্রয়োজন। এগুলো হলো 3C বা তিনটি সি। যথাক্রমে ক্যাশ, ক্রিডেনশিয়ালস ও কালচার। ক্যাশ বলতে বোঝানো হয়েছে আর্থিক অবস্থা, সঙ্গতি, সম্পদের পরিমাণ ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তির বিষয়গুলো। ক্রিডেনশিয়ালস বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষাগত অর্জন ও যোগ্যতা এবং পেশাগত মর্যাদাকে। আর কালচার বলতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও মানসিক গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন আরও বলছে, এই তিনটি পরিমাপকই নানাভাবে একে‑অপরকে প্রভাবিত করে। যেমন: শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি থাকলে তা আয় বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। অন্যদিকে এক ধরনের সুনির্দিষ্ট সামাজিক মর্যাদা যুক্ত কর্মসংস্থানের উৎস থাকলে, তাও মধ্যবিত্তে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে যুক্তি তৈরি করে।
অর্থাৎ, এটি হচ্ছে সেই শ্রেণি–যারা দক্ষ শ্রমের জোগানদাতা এবং যে উচ্চবিত্তের চেয়ে কম কিন্তু নিম্নবিত্তের চেয়ে বেশি ভোগের সক্ষমতা রাখে। মাঝামাঝি অবস্থানে থাকায় তার ভোগও আবার বহুবিচিত্র। বাজারের পণ্যসম্ভারের একটি বড় অংশেরই ভোক্তা এই মধ্যবিত্ত। তাই এর চিহ্নায়ন অর্থনীতির জন্য বিশেষভাবে জরুরি। কোনো কোনো দেশ বৈশ্বিক মানদণ্ডের পাশাপাশি নিজেদের মতো করে নিজস্ব মানদণ্ড তৈরিও করেছে। এ ক্ষেত্রে আগের পর্বেই যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণের কথা বলা হয়েছে, যেখানে এমনকি অঙ্গরাজ্য ভেদেও মধ্যবিত্তের সংজ্ঞায়নে ভিন্নতা আছে।
যেসব দেশ মধ্যবিত্ত নিয়ে ভাবে, চিন্তা করে এবং এই শ্রেণিকে আর্থিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে আক্ষরিক অর্থেই প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা এ ক্ষেত্রে নিজস্ব জাতীয় সংজ্ঞা বা পরিমাপক পদ্ধতির সূচনা করেছে। এবং তাতে সেসব দেশ উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে বলা চলে।
অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এও বলছেন যে, আধুনিক সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে। প্রকট আয়বৈষম্যের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন। আর এর মধ্য দিয়ে লাভবান হচ্ছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ অতিধনীরা। সেটা অন্য আলোচনা। দেখা যাক বরং, বিশ্বে মধ্যবিত্তের আকার কত ও তাদের অবস্থাটি আসলে কেমন?
বিশ্বে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকার কেমন?
বর্তমানে সারা বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটির বেশি। স্বাভাবিকভাবে এত এত মানুষের মধ্যে নিম্নবিত্তের মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম ধনী ও অতিধনী মানুষের সংখ্যা। যদিও তাদের হাতেই জমা আছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সম্পদ। তবে গত কয়েক দশকে পৃথিবীতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে অভূতপূর্ব হারে।
পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টা জানাচ্ছে, এই ২০২৫ সালে সারা বিশ্বে মধ্যবিত্তের আকার হবে ৪৬০ কোটির বেশি। অর্থাৎ, এই বিপুল মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে থাকবে চলতি বছরের শেষ নাগাদই।
অন্যদিকে ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড ডাটা ল্যাবের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওই বছর একটি পরিবারে প্রতিদিন ১১ ডলার থেকে ১১০ ডলার খরচ করেছে–এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্বে ছিল ৩৭৫ কোটির বেশি। চীন ও ভারতে এ শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যবিত্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তখনই জানিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাব।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন অবশ্য সেই ২০১৮ সালেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, ওই সময়ই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এই ঘটনাকে পৃথিবীর ইতিহাসের একটি ‘অনন্য ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছিল দ্য ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন। সেই সাথে বলেছিল, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বিশ্বের প্রায় ৩৮০ কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি নির্ধারিত হয়েছিল অর্থনৈতিক পরিমাপক ধরে। সেক্ষেত্রে খানা বা পরিবারমাফিক দিনপ্রতি ও জনপ্রতি ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে যারা আয় করতেন, তাঁদের অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ধরা হয়েছিল। সেই সঙ্গে যেসব পরিবারে দৈনিক জনপ্রতি আয় ১১ থেকে ১১০ ডলারের মধ্যে, তাদের ধরা হয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এই পুরো হিসাবটাই করা হয়েছে ২০১১ সালের পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি বা পিপিপি অনুযায়ী।
কিন্তু এর পরেই বিশ্বে আসে করোনাভাইরাসের মহামারি। তার আগ থেকেই আবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক ধরনের ভাটার টান পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তার মধ্যেই করোনাভাইরাসের মহামারি এসে উপস্থিত হওয়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতি পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে একপর্যায়ে। এবং সেই সঙ্গে বিশ্ববাসীর আয়‑ব্যয়ের বাস্তবতাও বদলে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক পরিবারই মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে ছিটকে পড়ে। যদিও এর পরও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বৃদ্ধি ঘটছে বলেই মন্তব্য করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।
এই যেমন, অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি একটি গবেষণাধর্মী শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। এর শিরোনাম, ‘The Future of the Middle Class in Emerging Markets’। তাতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, বিশ্বের উদীয়মান বাজার বলে বিবেচিত অঞ্চলগুলোতে আগামী ১ দশকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। ফলে সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৪ সালে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে থাকা ৩৫ দশমিক ৪ কোটি পরিবার ২০৩৪ সালে বেড়ে হবে ৬৮ দশমিক ৭ কোটি। এর মধ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়বে চীন ও ভারতে। এর বাইরে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলি, কলম্বিয়া ও পেরুতে মধ্যবিত্তের সংখ্যায় ইতিবাচক বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আফ্রিকা অঞ্চলের দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিশরে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মধ্যবিত্তের আকার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স।
সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে যে, সামনের দিনে বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকাংশেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রসারের ওপর নির্ভরশীল। মূলত এ‑সংক্রান্ত পূর্বাভাসগুলোতেও মধ্যবিত্ত‑সংক্রান্ত সূচকের গুরুত্ব অসীম। কারণ, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন অনেকটা মধ্যবিত্তের ঘাড়ে চড়েই দৈন্যদশার শঙ্কা এড়াতে চাইছে। এমন শঙ্কা তৈরি করেছে আসলে করোনা মহামারি, যার আফটার শক এখনও বয়ে চলেছে বিশ্বের তাবৎ দেশের অর্থনীতি।
বিশ্বে মধ্যবিত্তদের কী অবস্থা?
করোনা মহামারি ও এ‑সংক্রান্ত অর্থনৈতিক অভিঘাত শেষ না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বজুড়ে চাপে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আবার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা ঘরানার যুদ্ধবিগ্রহ। এসব সংঘাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাড়ছে খাদ্যসহ নানা ধরনের পণ্যের দাম। ফলে দেশে দেশে দেখা দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ঝামেলায় পড়ছে বেশি। এর মধ্যে মধ্যবিত্তের সংকট উভমুখী। একদিকে যে শ্রেণি উত্তরণের আশায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি খেটে যায়, সেটি ব্যাহত হওয়ায় এক ধরনের অর্থনৈতিক হতাশা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে আছে নিম্নবিত্তে নেমে যাওয়ার শঙ্কা। এবং করোনা মহামারি ও যুদ্ধ‑সংঘাতের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপে সেই ঘটনা ঘটছেও প্রচুর। পিউ রিসার্চ সেন্টারের দেওয়া পরিসংখ্যানেই এসেছিল যে, শুধু মহামারির কারণেই ২০২১ সালে মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে বিশ্বব্যাপী অবনমন ঘটেছিল প্রায় ৯ কোটি মানুষের। এমন ঘটনা কিন্তু থেমে যায়নি।
এর বাইরে বিশ্বব্যাপী তুলনামূলকভাবে অধিক আদরণীয় মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রচলিত করারোপ পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা আছে। বিশেষ করে ভ্যাট ও অন্যান্য পরোক্ষ কর আরোপের ক্ষেত্রে অভিযোগ আছে যে, এটি মূলত ধনীদের আরও ধনী করা এবং গরিবদের আরও গরিব বানাতে কাজ করছে। এ ছাড়া অতিধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপের ক্ষেত্রেও এমন ব্যবস্থায় আছে নানা টালবাহানা। এসব কারণেই একটি মত জোরালো হচ্ছে যে, অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমেই আসলে শ্রেণি উত্তরণের পথ বন্ধুর করে দেওয়া হচ্ছে।
ফলে একটি আলোচনা আছেই যে, সম্পদের ক্ষেত্রে বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি একসময় পুরোপুরিই অদৃশ্য হয়ে যায় কিনা! হয়তো কেবল অতিধনী ও গরিব বা অতি গরিবই থাকবে শুধু ভবিষ্যতের দুনিয়ায়। এমন ধারণাকে জোরালো করছে বৈশ্বিক বৈষম্যের পরিসংখ্যানও।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ বৈশ্বিক বৈষম্যবিষয়ক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বিশ্বে যত বিলিয়নিয়ার রয়েছে, তাদের সম্পদের পরিমাণ ২০২৪ সালে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ কোটি ডলার বেড়েছে। সে হিসাবে প্রতিদিন বেড়েছে ৫৭০ কোটি ডলার করে। এই পরিমাণ সম্পদ আগের বছর; অর্থাৎ, ২০২৩ সালের তুলনায় ৩ গুণ বেশি। গত বছর প্রতি সপ্তাহে নতুন করে বিলিয়নিয়ার হয়েছে ৪ জন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যের বরাতে এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নয়। গত বছর পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১০ জনের সম্পদ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার করে বেড়েছে। তাদের সম্পদের পরিমাণ এতই বেশি যে, তারা যদি রাতারাতি তাদের সম্পদের ৯৯ শতাংশও হারায়, তবুও তারা বিলিয়নিয়ার থেকে যাবেন!
অক্সফামের গত বছরের একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী দশ বছরে একজন ট্রিলিয়নিয়ার হতে পারে। কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়ে পাঁচজন ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বেহারের মন্তব্য, ‘আমাদের বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন কিছু বিশেষ সুবিধাভোগী নিজেদের দখলে রেখেছে। শুধু বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ আহরণের হারই ত্বরান্বিত হয়নি, তাদের ক্ষমতাও বেড়েছে।’
অর্থাৎ, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী চরম বৈষম্যের দিকেই এগোচ্ছে পৃথিবীর মানবকূল। এমতাবস্থায় মধ্যবিত্তরাও যে অর্থনৈতিক সংকট থেকে সহসা মুক্তি পাচ্ছে না, তা একপ্রকার স্পষ্টই! সুতরাং মধ্যবিত্তদের টানাপোড়েনের দিন শেষ হচ্ছে না শিগগির।
লেখক: উপবার্তা সম্পাদক, ডিজিটাল বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
আগামীকাল পড়ুন চতুর্থ পর্ব: মধ্যবিত্তের কারণেই কি এশিয়ায় নজর সবার?
[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]